স্বাস্থ্য সেবা ১২ নভেম্বর, ২০২২ ০৭:২৪

বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস আজ

পাঁচ শিশুর একজনের মৃত্যু নিউমোনিয়ায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফুসফুসের ভয়ানক রোগ নিউমোনিয়া। শিশুদের মধ্যে রোগটির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। পাঁচ বছরের কম বয়সে মারা যাওয়া শিশুদের প্রতি পাঁচজনে একজন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত, যা শতকরা হিসাবে ২০ জন। দেশে শীতকালে রোগের প্রকোপ বাড়ে। আইসিডিডিআর,বির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রতি হাজারে ৩৬১ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দশক ধরে বাংলাদেশের মতো মধ্যম স্বল্প আয়ের দেশে শিশুমৃত্যুর প্রথম কারণ নিউমোনিয়া। এমন প্রেক্ষাপটে আজ সারা বিশ্বের মতো দেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস-২০২২। বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নিউমোনিয়া এফেক্টস এভরিওয়ান অর্থাৎ নিউমোনিয়ায় সবাই আক্রান্ত হতে পারে।

দিবসটি উপলক্ষ্যে সব হাসপাতালের রেসপিরেটরি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল লাং ফাউন্ডেশন সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। আজ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চিকিৎসক, নার্স রোগীদের নিয়ে র‌্যালি, আলোচনা সভা সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হবে।

আইসিডিডিআর,বির সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বে প্রতিবছর

প্রায় কোটি ৩০ লাখ মানুষ নিউমোনিয়াজনিত সমস্যা হাইপোক্সিমিয়ায় আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে কোটি লাখই শিশু। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিউমোনিয়া সমস্যা নিয়ে আসা শিশুর প্রায় ৪২ শতাংশই হাইপোক্সিমিয়ায় ভোগে। তাই জেলা-উপজেলা

হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করলে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু কমবে। তিনি বলেন, হাইপোক্সিমিয়ায় (রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা) আক্রান্ত যে কোনো রোগীর জন্য চিকিৎসা হিসাবে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন।

এবার শীতের শুরুতেই ঠান্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। বুধবার বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের বি-ব্লকের তলায় নিউমোনিয়া রিসার্চ সেন্টারের ৭১২নং নিউমোনিয়া বিশেষায়িত ওয়ার্ডের সবগুলো বিছানায় রোগী ভর্তি থাকতে দেখা যায়। ১৬নং বিছানায় ভর্তি রয়েছে ১১ মাস বয়সি তানিশা।

শিশুটির মা সুমাইয়া বলেন, শীতের শুরুতেই গ্রামে বেশি ঠান্ডা পড়ছে। বাচ্চাকে যত্নে রাখলেও ১০ দিন আগে ঠান্ডা-কাশি জ্বর শুরু হয়। শাসকষ্ট হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে সাত দিনে সাতটি ইনজেকশন দৈনিক একবার করে নেবুলাইজার দিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল না। ফলে তিন দিন ধরে এখানে ভর্তি করা হয়েছে।

শিশু হাসপাতালের রেসিডেন্ট চিকিৎসক ডা. মুনতা তাবাসসুম বলেন, দেশে নিউমোনিয়া রোগী বেশি। শিশুদের মধ্যে রোগটির প্রকোপ আরও বেশি। এবার শীত শুরুর আগেই রোগীর চাপ বাড়ছে। এখানে প্রতিদিন যত রোগী ভর্তি হচ্ছে তার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তবে ঢাকার বাইরে থেকে রোগী বেশি আসছে। শিশুদের রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাত্রা দেখে তিন ভাগে ভাগ করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

শিশু হাসপাতালের এপিডিওমোলজিস্ট মাহফুজুর রহমান মামুন বলেন, গত বছর হাজার ২২৭ জন শিশু নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হলেও চলতি বছরে বুধবার পর্যন্ত হাজার ৪৩৪ ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে ২৩৩ জন ভর্তি ছিল। এবার অক্টোবরে ৩০৮ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। চলতি নভেম্বরের প্রথম দিনে ৮৪ জন শিশু নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে।

শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শিশুর শ্বাসকষ্ট, জ্বর-কাশি, শ্বাসের সময় বুক ভেতরের দিকে দেবে যাওয়া ইত্যাদি নিউমোনিয়ার লক্ষণ। শীতকালে রোগের প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মায়েদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। অপুষ্টির কারণে যেসব শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। যেসব শিশু উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ অনিরাপদ পানি পান করছে তারা অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। শিশু জন্মের পর মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ এবং পরে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। এছাড়া পাশাপাশি সময়মতো টিকা দিলে ঝুঁকি কমে।

ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ কমিশনে সহসভাপতিত্ব করবে বাংলাদেশ : এদিকে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকা দ্য ল্যানসেটের ২০২৪ সালের মেডিকেল অক্সিজেন নিরাপত্তাবিষয়ক গ্লোবাল হেলথ কমিশনে সহসভাপতিত্ব করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে (আইসিডিডিআর,বি) কমিশনারদের একজন হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন আইসিডিডিআর,বি সিনিয়র ডিরেক্টর (এমসিএইচডি) ডা. শামস এল আরেফিন।

আইসিডিডিআর,বি পক্ষ থেকে ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, এই কমিশন হাইপোক্সিমিয়ার ওপর দৃষ্টিপাত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থাৎ কীভাবে অক্সিজেন অ্যাক্সেসকে সংজ্ঞায়িত এবং পরিমাপ করতে হবে, কোন অক্সিজেন দ্রবণ কোন কোন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে তা নিয়ে কাজ করবে। এছাড়া কীভাবে অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা জাগরণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা সম্ভব তা নিয়েও কাজ করা হবে।

 

 

 

আমাদের কাগজ/টিআর