সারাদেশ ১৪ নভেম্বর, ২০২২ ১২:০৫

শিকলে বন্দী জীবন

বাউফল প্রতিনিধি: সোলেমান আকন। তাঁর বয়স ৭০ বছর। ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হিসাবে চাকরী করতেন। ১০-১২ বছর আগে চাকরী থেকে অবসরে যান। গত দেড় বছর  ধরে তিনি মানষিক রোগে আক্রান্ত। ঘর ছেড়ে দুই চোখ যেদিকে যায় চলে যেতেন। তাকে খুঁজে পেতে পরিবারের সদস্যদের বেগ পেতে হতো। তাকে বরিশাল ও ঢাকায় নিয়ে বেশ কয়েকবার চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু পুরোপুরি তিনি সুস্থ হননি। তাই পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে ভোগান্তির মধ্যে পরেন।  ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার ভয়ে তাকে শিকল দিয়ে বেধে রাখতেন। সব সময় তার হাত শিকল দিয়ে বেধে তালা মেরে রাখা হতো।  দেড় বছরে কখনো হাত থেকে শিকল কিংবা শিকলে লাগানো তালা খোলা হয়নি। তালায় জং পরে গেছে।  এভাবে কেটে যাচ্ছে  তার জীবন।

সোলেমান আকনের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার দাশপাড়া ইউনিয়নের খেজুর বাড়িয়া গ্রামে। 

সোলেমান আকনের ৫ ছেলের যে যারমত স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। একমাত্র বৃদ্ধা স্ত্রী রাশিদা বেগম তার দেখাশুনা করেন। সোলেমান আকনের সব ছেলেরাই স্বচ্ছল। এক ছেলে ইতালি বসবাস করেন।  ওই ছেলের গ্রামে বাড়িতে অর্ধ সমাপ্ত  একটি ভবনের এক রুমে সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ সোলেমান আকন ও তার স্ত্রী রাশিদা বেগম বসবাস করছেন। 

কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, সোলেমান আকন অনেক সম্পদের মালিক। তা সত্বেও সঠিক ভাবে তার চিকিৎসা  হচ্ছেনা। সম্পত্তি ভোগের আশায় সন্তানরা তার বাবাকে ঠিকমত চিকিৎসা করাচ্ছেনা। ওষুধ কিনে দিচ্ছেননা। অবস্থা এ রকম যে তাদের বাবা মরে গেলেই তার বাঁচেন। 

সোলেমান আকনের সেজ ছেলে শাহিন আকন বলেন,‘আমার  বাবার সুস্থতার জন্য অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। তারা বলেছেন বাবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। বাড়ি থেকে চলে যান বলে তার বাবাকে শিকল দিয়ে বধে রাখি। সম্পত্তি ভোগের আশায় বাবার চিকিৎসা করানো হচ্ছেনা বিষয়টি সত্য নয়। আমাদের ৫ ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই সাধ্যমত বাবার সেবা করার চেষ্টা করি।’


আমাদেরকাগজ/এইচএম