অপরাধ ও দুর্নীতি ১৫ নভেম্বর, ২০২২ ০৯:২৭

দেশে ৮ ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি ১৯৮৩৩ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে লাগামহীন বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমান। করোনা মহামারির সময় দুই বছর ব্যাংকঋণ আদায়ে দেওয়া হয়েছিল বিশেষ ছাড়। সেই ছাড় অনেকটা কাল হয়ে দাড়িয়েছে দেশের অর্থনীতিতে। নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ (প্রভিশন) বা শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে অর্থ সংস্থান করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে ৮ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে সরকারি-বেসরকারি ৮ ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী, বেসিক, জনতা, রূপালী; বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। তবে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে বেসিক ব্যাংকের। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এই ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি তিন হাজার ৫২১ কোটি টাকা। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। তিন হাজার ১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। চতুর্থ অবস্থানে থাকা জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৫৯৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আর বেসরকারি খাতের চারটি ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ আট হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ সাত হাজার ৪৭৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩৪৪ কোটি ৬৮ লাখ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৪৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৮৮ হাজার ৬৮৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কিন্তু সংরক্ষণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার ১৫৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রেখে দেওয়ায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কম। ফলে ব্যাংকিং খাতের সার্বিকভাবে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতিতে ১৩ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপির কারণে ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। এসব ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতেও পড়বে। খেলাপি না কমাতে পারলে এসব সমস্যার সমাধান হবে না। তাই যেকোনো মূল্যে ঋণ আদায় বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ আদায় বাড়াতে হবে। কারণ এসব ব্যাংক থেকে ঋণ একবার নিলে তা আর ফেরত দেয় না। কারণ তাদের সুশাসনের অভাব ও ঋণ দেওয়া ও আদায়ে কোনো জবাবদিহিতা নেই। এক্ষেত্রে নজর দিতে হবে, কঠোর হতে হবে। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এটা করা সম্ভব নয়।

আমাদের কাগজ//জেডআই