আমাদের কাগজ ডেস্ক: প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে শেয়ার বিতরণের পর পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হলে সাধারণ যে চিত্র দেখা দেয়, তার পুরো বিপরীত একটি দিন দেখল বিনিয়োগকারীরা।
প্রথম দিনেই সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দর হারিয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার। অভিহিত মূল্য ১০ টাকায় যে শেয়ারের বরাদ্দ পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা, প্রথম দিনই তা নেমে এলো ৯ টাকায়।
গত ২১ সেপ্টেম্বর গোল্ডেন জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন শুরু হলে একপর্যায়ে ইউনিট দর অভিহিত মূল্যের নিচে ৯ টাকা ৬০ পয়সায় নেমে এলেও দিন শেষে ১০ টাকা ১০ পয়সায় দাঁড়ায়।
তবে বুধবার গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের লেনদেন শুরু হয় ৯ টাকা ৮০ পয়সায়। শেষমেশ দরপতনের সর্বোচ্চ সীমায় নেমেই শেষ হয় লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বলেন, ‘প্রথম দিনে শেয়ারটির ফ্লোর প্রাইস নেই। আজকের সমাপনী দর আগামীকাল থেকে ফ্লোর প্রাইস হিসেবে কার্যকর হবে।’
ফলে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর আপাতত এর চেয়ে নিচে নামার সুযোগ নেই।
দর কমলেও বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী বরাদ্দ পাওয়া শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ১১ হাজার ৮১৭ বারে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৩৩ হাজার ৬৬১টি শেয়ার বিক্রি হয় এদিন। লেনদেন শুরুর দিন এত বিপুলসংখ্যক শেয়ার হাতবদল হয়নি এর আগে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের লেনদেন শুরুর দিন যখন এই চিত্র, তখন বিপরীত অবস্থানে গত ৩০ অক্টোবর লেনদেন শুরু করা চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির। টাকা ১৪ কর্মদিবস দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে হাতবদল হওয়া কোম্পানিটির দর অভিহিত মূল্য ১০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৭ টাকা ২০ পয়সা। তবে এই দরেও শেয়ারের বিক্রেতা নেই বললেই চলে।
চতুর্দশ দিনে এসে বুধবার সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫৬৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যদিও প্রতিদিন লাখ লাখ শেয়ারের ক্রেতা থাকে।
২০১০ সালের মহাধসের পর ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি আগ্রহ এমনিতেই কমছে। ২০১৭ সালে একবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিয়েও পরে উত্থান ধরে রাখা যায়নি। প্রতিবছরই আকর্ষণীয় নগদ লভ্যাংশ দিয়ে এলেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই।
পুঁজিবাজারে বাজারে তালিকাভুক্ত ৩৪টি ব্যাংকের মধ্যে গ্লোবাল ইসলামীসহ মোট সাতটি ব্যাংকের শেয়ারদর এখন অভিহিতমূল্যের নিচে। এর মধ্যে কেবল দুটি লোকসানি। আরও ১১টির শেয়ারদর ১০ থেকে ১৩ টাকার ঘরে।
চলতি বছর পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করা ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ারদরও এখন অভিহিত মূল্যের নিচে। সাউথ বাংলা ব্যাংকের শেয়ারদর অভিহিত মূল্যের কাছাকাছি।
ব্যাংকগুলো গত কয়েক বছর ধরে নগদ লভ্যাংশে জোর দিয়ে আসছে। গত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা বলেছে, দেশে এখন টাকা সঞ্চয় করলে বছর শেষে যে মুনাফা পাওয়া যায়, তার চেয়ে বেশি লভ্যাংশ পাওয়া যায়, এমন ব্যাংকের সংখ্যা অনেকগুলো।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের আইপিও অনুমোদনের পর থেকেই এই কোম্পানি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। অন্যান্য কোম্পানিতে বরাদ্দ হতে যাওয়া শেয়ারের বিপরীতে বিপুলসংখ্যক আবেদন জমা পড়লেও গ্লোবালের ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী যারা আবেদন করেন, তাদের সবাই এখন শেয়ার বরাদ্দ পান। চার্টার্ড ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ১০ হাজার টাকার আবেদন করে শেয়ার পেয়েছেন ৩১টি। কিন্তু গ্লোবালের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকার বিপরীতে সব টাকার শেয়ার পেয়েছেন তারা। ফলে প্রথম দিনেই এক হাজার টাকা লোকসান হয়ে গেছে তাদের।
আমাদের কাগজ/টিআর