রাজনীতি ২২ নভেম্বর, ২০২২ ০৯:৩৮

ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের দৌড়ে বিতর্কিতরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক: আর মাত্র কয়েকদিন পরেই আসছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সৃষ্ট সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বে কে আসবেন তা চূড়ান্ত করার একক কর্তৃত্ব সংগঠনের সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনার। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিতরাও সক্রিয় হয়ে বিভিন্ন মতের অনুসারীদের নিয়ে নেতার কাছে নিজেদের নাম তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্ট সূত্র ও গণভবনের নির্ভরযোগ্য সূত্র এমনটাই জানিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন ত্রিশতম সম্মেলনে শীর্ষ নেতৃত্বের দৌড়ে সবচেয়ে আলোচিত নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী, সুবক্তা এবং সাংগঠনিক দক্ষতায় অনেক এগিয়ে থাকলেও তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকটি হলের (কমপক্ষে ৬টি) মহিলা নেতার সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্কের গুঞ্জন রয়েছে। এসব নারী নেত্রী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। এগুলো তার ব্যক্তিগত বিষয় হলেও আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী  আশরাফুল আলম, যিনি বর্তমানে হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হিসাবে দয়িত্ব পালন করছেন, তার মেয়েকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ ভাগিয়ে নিয়ে কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও বিভিন্ন সময় এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন তিনি। নটরডেম কলেজে পড়ুয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী সাদ্দাম ঢাকসুর এজিএস হিসাবেও যথেষ্ট সফল ছিলেন এবং তিনি ক্যাম্পাসে জনপ্রিয়তার শীর্ষে বলেও জানা গেছে। 

বয়সের বাধ্যবাধতা নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসায় বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি সোহান খানও সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনার সুদৃষ্টিতে রয়েছেন। পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তানকে নিয়েও ছাত্রলীগেরই আরেকটি গ্রুপ বিভিন্ন সময় তাকে নিয়ে নোংরামি করেছিল বলেও জানা গেছে। বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে তার ব্যক্তিজীবন নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছিল। তবে এবারের সম্মেলন দাবি করে তিনি সব সময়ই সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। গঠনতান্ত্রিক বয়সসীমা না থাকার পরও তিনি শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে রয়েছেন বলেও জানা গেছে। 

এছাড়া আরেক সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ সার্বক্ষণিক যোগ্যতাভিত্তিক রাজনীতি করে নিজ প্রতিষ্ঠানের ভুল-ত্রুটি তুলে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন বলে জানা গেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন হলের শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন তখন থেকেই তিনি রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। তবে তার বয়সের কারণে বৃহত্তর ফরিদপুরের একটি পুরনো কালো সিন্ডিকেট মাস্টারমাইন্ড তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটাও শেখ হাসিনার কাছে গোপন নয়। পারিবারিকভাবে বিএনপি-জামায়াতের নির্যাতনের শিকার ইয়াজ আল রিয়াদ সব আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় থাকলেও তাকে নিয়েও নোংরা প্রচারণা চালানো হয়েছিল নানাভাবে। বয়স বিবেচনায় তিনি না থাকলেও চূড়ান্তভাবে তিনি শেখ হাসিনার সুদৃষ্টিতেই রয়েছেন বলে জানা গেছে। 

সহ সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেনও কবি জসিম উদ্দীন হলের নেতৃত্বে ছিলেন। বাড়ি বরিশাল হওয়ায় তাকে নিয়েও চলছে মাইনাস করার পরিকল্পনা। নেতৃত্ব দেয়ার মতো যথেষ্ট যোগ্যতা ও মেধা থাকার পরও তাকে নিয়ে এ ধরণের অপচেষ্টাগুলোর রিপোর্টও জমা হয়েছে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে। এছাড়া ছাত্র রাজনীতির আঁতুরঘর খ্যাত মধুর ক্যান্টিনে সময় দেয়া থেকে রাজনীতিতে তিনি যথেষ্ট সময় দিয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সড়ক আন্দোলন থেকে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামেও সামনে সারিতে ছিলেন। 

মাজহারুল ইসলাম শামীম দেশ সেরা কলেজ নটরটেম কলেজের মেধাবী ছাত্র থেকে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে দীর্ঘসময় দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গঠনতন্ত্রের বয়সসীমাতে তিনি না থাকলেও অবশ্যই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুদৃষ্টিতে রয়েছেন নিজের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে। যদিও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা যাদের বাড়ি চাঁদপুরে তারা অনেকেই নেতা হওয়ার জন্য বাঁধা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে সেটি গোপনে, সে বিষয়টিও সুনির্দিষ্টভাবে জানানো হয়েছে সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনার কাছে। 

রাকিব হোসেন সহ সভাপতি পদটি পেয়েছেন লড়াই করেই। নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য ঈদের সময়ও রাস্তায় ছিলেন তিনি এবং তার সহযোদ্ধারা। বৃহত্তর ফরিদপুরের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই চাচ্ছেন না রাকিব হোসেন নেতা হোক। তাহলে তাদের নাকি গুরুত্ব কমে যাবে। তবে সাংগঠনিকভাবে তিনি যা করেন তা প্রতিদিনই নিজ থেকেই সর্বোচ্চ অভিভাবককে জানিয়েছেন তিনি নিজেই। তাই তার বিষয়েও বিস্তর খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। 

তিলোত্তমা শিকদার ও ফরিদা পারভীন দুজন সহ সভাপতি নারী নেতৃত্বে অনন্য ভূমিকায় নিয়ে গেছেন নিজেদের। যদিও তিলোত্তমা শিকদার বর্তমান সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের মাই ম্যান হিসাবেই বেশি কাজ করেছেন। তবে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজে মাঠে নেমেছিলেন। এমনকি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পবিত্র রমজানে করোনাকালীন সময়ে নিজে রান্না করে গরিবের সামনে ইফতার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। যদিও তার বিরুদ্ধে রয়েছে কেন্দ্রীয় অনেক নেতার সাথে ঘনিষ্ঠতার গুঞ্জন। মুখরোচক অনেক কথা থাকলেও সাংগঠনিকভাবে তিনি নারী নেতৃত্বের মধ্যে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন বলেও জানা গেছে। 

ফরিদা পারভীনকে ঘিরেও নানা কথা বা একজন বিতর্কিত ব্যবসায়ীর সাথে বিশেষ সম্পর্কের কথা শোনা গেলেও তিনি রাজনীতিটা সব সময়ই করে গেছেন সামনের সারিতে। কোনো ধাক্কাধাকি না করেই নিজের অবস্থান করে এগিয়ে গেছেন। তবে সম্মেলন কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় তার নামে বড় বড় ব্যানার জানান দিয়ে তিনি আদতে এগিয়ে আছেন না পিছিয়ে যাচ্ছেন; বা আলোচনায় থাকতেই এমনটা করছেন ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য সেটা সুস্পষ্ট নয়। যদিও হল কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে উঠে এসে তিনি অন্য নারী নেতৃত্বের তুলনায় কম বিতর্কিত বলেও জানা গেছে। 

সহ সভাপতিদের মধ্য থেকে আরো অনেকেই ভালো কাজ করে এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে নিজেদের কাজের মাধ্যমে শেখ হাসিনার কাছে নিজেদের নাম পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন কামাল খান, রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, মাহমুদুল হাসান তুষার, উৎপল বিশ্বাস, খাদিজাতুল কুবরা, মুরাদ হায়দার টিপু, রাকিবুল হাসান নোবেলসহ আরো কয়েকজন।

এদিকে, বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে সবেচে আলোচিত নাম আরিফুজ্জামান আল ইমরান। বাড়ি বরিশাল অঞ্চলে হওয়ায় কিছু বাঁধা থাকলেও তিনি অনেকের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন নিজের ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বের কারণে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে তিনি সামনের সারিতেই ছিলেন। এমনকি ৩০ তম সম্মেলন দাবিতে জোরালো ভূমিকা রয়েছে তার। এছাড়া মাহবুব খান এগিয়ে থাকলেও ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি তিনি গণমাধ্যমের সাথে সরাসরি জড়িত থাকায় তার জন্য বিষয়টি ইতিবাচক / নেতিবাচকও হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে তিনি কমিটি বাণিজ্য থেকে শুরু করে সংগঠনের ভেতরে ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে সক্রিয় ছিলেন সব সময়ই। আদর্শিক লড়াইয়ে তিনি অনেকের চেয়েও এগিয়ে রয়েছেন। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহম্মেদ রাসেল সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন নেত্রীর কাছে তার কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে। যদিও তিনি রাজপথে সব সময়ই সক্রিয় থাকার চেষ্টা করে গেছেন। 

সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে যারা এবার প্রার্থী হচ্ছেন তাদের মধ্যে সবচে আলোচিত নাম দেশ সেরা কলেজ নটরডেম কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র সাদ বিন কাদের চৌধুরী। করোনাকালীন সময়ে তার নেতৃত্বেই হয়ে উঠেছিল বিনামূল্যে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা। যা এখনো চলমান রয়েছে। তিনি বিনামূল্যে এ সেবা দিতে গিয়ে সর্বমহলে প্রশংসা কুড়ালেও তাকে এ সেবার পিছনে কোনো অনাদর্শিক (বিএনপি-জামায়াতপন্থী) কারো কাছ থেকে সুবিধা  নিয়েছেন কিনা, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে নির্ভরযোগ্য সূত্র। তবে তিনি সর্বোচ্চ অভিভাবকের সুদৃষ্টিতে রয়েছেন বলেও জানা গেছে। এছাড়া সোহানুর রহমান সোহানও সর্বোচ্চ মহলে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বলে জানা গেছে। যদিও তার বিরুদ্ধে নানা সময়ে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপচেষ্টা করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে সেগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় এসব নিয়ে এখন আর কেউ কিছুই বলছেন না। বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে তিনি সব সময়ই সামনের সারিতে ছিলেন বলেও জানা গেছে। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে ফেরদৌস আলম নিজেকে প্রার্থী হিসাবে দাবি করলেও তার পারিবারিক আদর্শ নিয়ে বেশ কিছু আলোচানা ও সমালোচনা রয়েছে। মুজাহিদুল ইসলাম সোহাগ সব সময়ই দলের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং বিএনপি-জামায়াতের অপশক্তি রুখতে সামনের সারিতে থাকলেও তার বিরুদ্ধে গত সম্মেলনের আগেই তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ তোলা হয়েছিল। যদিও সে অভিযোগের সত্যতা মিলেনি। তবে তার পরিবারের তেমন কেউ সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় বলেও জানা গেছে। বরিকুল ইসলাম বাধন অত্যন্ত মেধাবী এবং সঙ্গীতপ্রাণ, দলের জন্য নিবেদিত একজন নেতা হিসাবে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় ছিলেন। তিনিও আলোচনায় রয়েছেন এবং তাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা সরাসরি সহযোগিতা করছেন বলেও জানা গেছে। এছাড়া একমাত্র নারী সাংগঠনিক সম্পাদক সাবরিনা ইতি কিছুটা অভিমান নিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও তিনিও আলোচনায় রয়েছেন। কারণ তিনি ভাইলীগের সিন্ডিকেটে নিজেকে নষ্ট নোংরামির মধ্যেই যেতে চাননি। যেমনটা করেছেন একজন নারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দুইজন নারী সহ সভাপতি। তাদের গুরুতর নোংরামির অভিজ্ঞতা দেখেই তিনি নিজেকে  গুটিয়ে রেখেছিলেন। তবে তিনি সর্বোচ্চ অভিভাবকের সুদৃষ্টিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। 

বাংলাদেশ ছাত্রলীগে স্বাভাবিক নিয়মে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দুটি সম্পাদক বা উপসম্পাদক থেকে আসলেও এবার ব্যতিক্রম হতেও পারে। তবে সম্পাদক ও উপ সম্পাদকদের মধ্যে যারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি সময়ই অটল ছিলেন তারাই এগিয়ে রয়েছেন। এদিকে, সবচেয়ে যে আলোচিত সম্পাদকের নামটি আলোচনায় রয়েছে তার নামটি চূড়ান্তভাবে গোপন করার শর্ত দিয়ে গণভবনের একটি সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরাসরি তার বিষয়ে খোঁজ খবর রাখেন। এমনকি প্রতি সপ্তাহে এই ছাত্রলীগের সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাকে নিজের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে রিপোর্ট করে আসেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস নিজের মতো করে প্রস্ফুটিত করেছেন ঠিকই কিন্তু একই উপজেলা থেকে বর্তমান কমিটির শীর্ষ এক নেতা থাকায় তাপস কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন বলেও জানা গেছে। যদিও এ ইস্যুটিকে সামনে আনা হচ্ছে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সাবেক একজন শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতার অপকর্মের কারণে, তিনি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থেকে ফিরে এসে জেলা পর্যায়ে রাজনীতি করতে পারলেও ছাত্রলীগে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন না।

এছাড়া সম্পাদকদের মধ্যে আইন সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত খুবই আলোচিত হচ্ছেন, তবে সেটি প্রকাশ্যে নয়, আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী যারা বঙ্গবন্ধু কন্যার খুবই ঘনিষ্ঠ। মেধাবী এই ছাত্রলীগ নেতাকেও নেত্রীর সুদৃষ্টিতে আনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শামীম পারভেজকে নিয়ে আলোচনা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সফল উপাচার্য়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবিধাতে তিনি অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। ত্রাণ ও দুর্যোগ সম্পাদক ইমরান জমাদ্দার দেশের নানা দুর্যোগ দুর্বিপাকে অনন্য মানবিকতা দেখিয়েছেন। এক্ষেত্রে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পরিপূর্ণ সহায়তা তিনি না পেলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতার সহায়তায় তিনি কার্যক্রম করে গেছেন। যদিও তার পারিবারিক আদর্শিক মতবেদ নিয়ে একটি গুঞ্জন রয়েছে। গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক শেখ শামীম তূর্য রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও সর্বশেষ রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটির তদন্ত কমিটির প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছুটা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। যদিও তিনি বারবার তথ্য প্রমাণ দিয়েই বলেছেন, এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। তবে গাজীপুরের অনেক প্রভাবশালী নেতাই চাচ্ছেন না তুর্য যেন নেতা হয়ে যান। মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক মোঃ নাহিদ হাসান শাহিনও আলোচনায় আছেন। তবে তার বাড়ি সাতক্ষীরা হওয়াতে এবং পিতার রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে বিশেষ করে বিদ্রোহী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং জামায়াত বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতার কারণে তিনি যথেষ্টই পিছিয়ে গেছেন। 

এছাড়া ছাত্রলীগের সম্পাদকদের মধ্যে আরো যারা আলোচনায় রয়েছেন, তারা হচ্ছেন ক্রীড়া সম্পাদক মোঃ আল আমীন সিদ্দিক সুজন। এই সুজন যথেষ্ট ভালো ক্রিকটার হিসাবে প্রথম শ্রেণীতে খেলে যাচ্ছেন এবং বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা দেখানোর জন্য জয়ান্ট স্ক্রিনেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। একই সাথে রাজনীতির মাঠেও ছাত্রদল শিবিরের বিরুদ্ধে লাঠি হাতে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক রনি মুহাম্মদ সহ আলোচনায় রয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন রহমান, স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক পুতুল চন্দ্র রায়।

উপ সম্পাদকদের মধ্য থেকে অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে আসার জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন তাদের মধ্যেও অনেকেই আলোচিত ও সমালোচিত আছেন। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী এবং লড়াকু নেতৃত্ব বাছাইয়ের পথেই হাঁটছেন ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে কমপক্ষে ১০ জন উপ সম্পাদকের বিষয়েও বিশদ খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে তাদের পারিবারিক রাজনৈতিক মতার্দশকে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। 

এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কাউকে ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। সে বিবেচনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে সুপার ফাইভ বা সুপার টেন কমিটি ঘোষণা করতে পারেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তবে এ নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে বলেও জানা গেছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে সুপার ফাইভ বা সুপার টেন মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের বিবেচনা করা হতে পারে।

আমাদেরকাগজ/এইচএম