আইন ও আদালত ২৩ নভেম্বর, ২০২২ ০৫:৪৭

 ১০১ ইয়াবা কারবারির দেড় বছর করে কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজারে আত্মসমর্পণ করা ১০১ ইয়াবা কারবারিকে মাদক মামলায় দেড় বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত

কক্সবাজারের টেকনাফে আত্মসমর্পণ করা ১০১ ইয়াবা কারবারিকে মাদক মামলায় দেড় বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া দায়ের করা অস্ত্র মামলা থেকে তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

বুধবার ২৩ নভেম্বর দুপুরের  কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল এই রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আদালতে ১৭ জন উপস্থিত ছিলেন। বাকি ৮৪ জনকে পলাতক দেখানো হয়েছে।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. ফরিদুল আলম। তিনি জানান, ১০১ জনের প্রত্যেককে ১ বছর ৬ মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রত্যেককে ২০ হাজার করে জরিমানা করা হয়। এছাড়া ওই সময় দায়ের করা অস্ত্র মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণে প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেয়া হয়।

আদালতের বরাতে পিপি বলেন, আদালত অবজারভেশনে বলেছেন যাতে আগামী দিনে কেউ এ পেশায় না ফিরে সে জন্য এ রায় ভুমিকা রাখবে। এ রায় ইয়াবা চোরাকারবারিদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক হয়ে থাকবে।

বেলা ১১ টার দিকে আদালতে আনা হয় কারাগারে থাকা ১৭ আসামিকে।  মামলার বাকি ৮৪ জন আসামি পলাতক আছেন।

পলাতক আসামিদের মধ্যে আছেন-কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির চার ভাই আবদুল শুক্কুর, আবদুল আমিন ওরফে আমিনুল ইসলাম, মো. ফয়সাল ও শফিকুল ইসলাম, চাচাতো ভাই মো. আলম, খালাতো ভাই মং মং সিং, ফুপাতো ভাই কামরুল ইসলাম, ভাগনে সাহেদুর রহমান নিপুসহ অন্তত ১২ জন নিকটাত্মীয়। আরও আছেন- টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ ও তার বড় ভাই আব্দুর রহমান; বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদের ছেলে দিদার মিয়া; টেকনাফ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল বশর নুরশাদ; টেকনাফ সদর ইউনিয়নের এনামুল হক এনাম মেম্বারসহ অনেকে। মামলার আসামিরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও পৃষ্ঠপোষক (গডফাদার)। ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আত্মসমর্পণের পর টানা দেড় বছর ১০১ জন আসামি কারাগারে বন্দী ছিলেন।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের হাতে সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, ৩০টি দেশীয় তৈরি বন্দুক ও ৭০ রাউন্ড তাজা কার্তুজ তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত টেকনাফের ১০২ জন ইয়াবা গডফাদার। এ ঘটনায় ১০২ জন আসামির বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা করেন থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) শরীফ ইবনে আলম। বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট মো. রাসেল নামে একজন আসামি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহর আদালত মারা যাওয়া ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে অবশিষ্ট ১০১ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএমএস দোহা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলার অভিযোগ গঠন করেন।

মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং আসামিদের পক্ষে সাক্ষীদের জেরা করা হয়। আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষা ফলাফল যাচাই, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়াসহ মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে।

আমাদেরকাগজ/ এএইচ