অপরাধ ও দুর্নীতি ২৭ নভেম্বর, ২০২২ ০৭:৪৫

বিকৃত যৌনাচার থেকে বাঁচতে ব্যবসায়ীকে হত্যা করল কিশোর

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে বালু ও কাঠ ব্যবসায়ী কাওসার খানের (৪১) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে। এ ঘটনায় জড়িত এক কিশোর (১৬) ও তার বাবা শাহিন মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানায়, বিকৃত যৌনাচার থেকে বাঁচতে ওই ব্যবসায়ীকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ওই কিশোর।

রোববার, ২৭ নভেম্বর বিকেল ৩টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান এ তথ্য জানান। হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।

পুলিশ সুপার জানান, কাওসার দীর্ঘদিন সৌদি আরব ছিলেন। তিন বছর আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন। দুই বছর ধরে একই গ্রামের ওই কিশোরের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ইলেকট্রিক কাজের সুবাদে। এক বছর ধরে কাওসার ওই কিশোরের সঙ্গে সমকামিতার সম্পর্ক স্থাপন করেন। তবে ওই কিশোর বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। কাওসার একাধিকবার তাকে ছুরি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এ কাজে বাধ্য করেছে। 

গত শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে কাওসার তার মোটরসাইকেলে করে ওই কিশোরকে উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের বিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের জিয়ারত শেখের জমির ওপর বালুর ঢিপিতে নিয়ে যান। তিনি তখন ওই কিশোরকে সমকামিতায় বাধ্য করলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে কাওসার একটি চাকু বের করে কিশোরকে ভয়ভীতি দেখালে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপযার্য়ে কাওসারের গলায় ছুরির আঘাত লাগে। এরপর ওই কিশোর তার পিঠে, গলায় ও মাথার পেছনের অংশে ছুরি দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করে।

কাওসারের মৃত্যুর পর তার ব্যবহৃত মোবাইল, মোটরসাইকেল ও চাকু নিয়ে বাড়ি এসে কিশোর তার বাবাকে সব খুলে বলে। তখন তার বাবা শাহিন মোল্যা ছেলেকে বাঁচাতে নিহতের মোবাইলটি ভেঙে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন। ছেলের গায়ের রক্তমাখা জ্যাকেট বাড়ির ভেতরে মাটিতে পুঁতে রাখেন এবং কাওসারের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ফরিদপুর শহরের চানমারি এলাকায় নিয়ে ফেলে আসেন।

এ ঘটনায় নিহত কাওসারের ভাই লিয়াকত খান গতকাল শনিবার (২৬ নভেম্বর) অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে চরভদ্রাসন থানায় হত্যা মামলা করেন।

সংবাদ সম্মেলেনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার। তিনি বলেন, শনিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ এ হত্যার রহস্য নিয়ে তদন্ত শুরু করে। তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে ওই দিন দিবাগত রাত ১২টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয় এবং ওই কিশোর ও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর কিশোর হত্যার কথা স্বীকার করে পুলিশের কাছে ঘটনার বিবরণ দেয়।

চরভদ্রাসন থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিন্টু মন্ডল বলেন, রোববার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর শহরের চানমারি এলাকা থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় কাওসারের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে কোতয়ালি থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ওই কিশোর ও তার বাবাকে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

নিহত কাওসার খান চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের এম কে ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা মৃত জালাল খানের ছেলে। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। কাওসার খান বিবাহিত। তার দুই মেয়ে রয়েছে। 

আমাদেরকাগজ/ এএইচ