আজকের কাগজ ডেস্ক: পেঁয়াজ কেবল খাবারের স্বাদ বাড়ায় না এতে থাকা নানা পুষ্টিগুণ স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সহায়তা করে পেঁয়াজ। পেঁয়াজে থাকা ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি এবং সালফার চুল ভেঙে যাওয়া, পাতলা হওয়া, মাথার ত্বকের সংক্রমণ, অকাল পক্কতা ইত্যাদি প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে শক্তিশালী প্রদাহ ও ছত্রাকনাশক ক্ষমতা, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ব্যাক্টেরিয়া রোধী ক্ষমতাও রয়েছে।
তবে চুল পড়ার নানা কারণ থাকতে পারে। এ কারণে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা আগে চুল পড়ার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
চুল পড়ার সম্ভাব্য কারণের মধ্যে আছে-
বয়স: বয়স হওয়া দেহের একটা স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া। এটা সারা দেহের ওপরেই প্রভাব রাখে। যেমন- ত্বকে বয়সের ছাপ ও বলিরেখা, হাড়ের দুর্বলতা ইত্যাদি। চুলের ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম নয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলিকল দুর্বল হয়ে যায়। ফলে নতুন চুল গজানো কমে ও চুল দেখতে পাতলা লাগে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: নারীদের হরমোনের সামঞ্জস্যহীনতার কারণে বেশি চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। ‘পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম’য়ে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে ‘এইটিপিক্যাল স্কিন প্যাচ’ বা ত্বকে লালচেভাব দেখা দেয় ও চুল পড়ে।
বংশগতি: যদিও পুরুষদের মধ্যে বংশগতির প্রভাব বেশি দেখা যায়। তাই টাক মাথার সমস্যা বেশি প্রকাশ পায়। কিন্তু একই জিনিস নারীদের ক্ষেত্রে হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
বংশগতি কেবল চুল নয় বরং এর ধরন ও গুণগত মান সবকিছুর ওপর নির্ভর করে। এতে চুলের ফলিকল সংকুচিত হয় এবং নতুন চুল গজানোর ক্ষমতা হ্রাস পায়।
পুষ্টির অভাব: চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন চুলের ভিত্তি। জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়াম চুল মজবুত করে। অপুষ্টি বা পুষ্টির ঘাটতি চুল পড়ার অন্যতম কারণ।
পেঁয়াজ তেলের উপকারিতা
- চুলের বৃদ্ধিচক্র উন্নত করে। পেঁয়াজের তেল মাথার ত্বকের নির্দিষ্ট এনজাইমকে সক্রিয় করে যা চুলের বৃদ্ধিচক্রকে গতিশীল করে। চুলের বৃদ্ধি, চুল পড়া হ্রাস চুলের সুস্থতা রক্ষায় পেঁয়াজ তেল উপকারী।
- চুল পাতলা হওয়া ও ফাটা কমে। পেঁয়াজের তেল উচ্চ সালফার সমৃদ্ধ হওয়াতে চুল পড়া, ফাটা এবং পাতলা হওয়ার সমস্যা কমায়। সালফার চুলের প্রোটিন তৈরি করে ও শক্তি যোগাতে সহায়তা করে।
- অকালপক্কতা কমায়। পেঁয়াজের নির্দিষ্ট কিছু এনজাইম চুলকে উন্মুক্ত রেডিকেলের ক্ষয় থেকে রক্ষা করে এবং অকালপক্কতা কমায়।
- পিএইচ’য়ের ভারসাম্য রক্ষা। সুস্থ চুলের মূল চাবিকাঠি হল সুস্থ মাথার ত্বক। পেঁয়াজের তেল মাথার ত্বকের পিএইচ এর ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করে।
- ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে। পেঁয়াজ তেল ব্যবহার মাথার ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, খুশকি ও চুলকানি কমাতে সহায়তা করে।
- প্রাকৃতিক কন্ডিশনার। শ্যাম্পু করার আগে চুলে পেঁয়াজের তেল মালিশ করা আর্দ্রতা রক্ষা করতে সহায়তা করে। পেঁয়াজ তেল প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
শ্যাম্পুর আগে তেল ব্যবহার করা সম্ভব না হলে শ্যাম্পুর পরে পেঁয়াজের কন্ডিশনার ব্যবহার করা উপকারী।
- চুলের স্বাস্থ্য ভালো করে। নিয়মিত ব্যবহারে পেঁয়াজের তেল চুল সুস্থ, মজবুত, জটমুক্ত ও মসৃণ করতে সাহায্য করে।
- পেঁয়াজের রস ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুল পড়া কমাতে সহায়তা করে। পেঁয়াজ ও মধুর মিশ্রণ চুলে মেখে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত দুয়েক সপ্তাহ এই মিশ্রণ ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
- এছাড়াও মাথার ত্বকের গরম তেল মালিশ করা চমৎকার বিষয়। অন্যান্য তেলের সঙ্গে পেঁয়াজের তেল মিশিয়ে গরম তেল মালিশ করা ‘ট্রিটমেন্ট’য়ের কাজ করে।
- পেঁয়াজ তেল মাথার ত্বককে উদ্দিপিত করে এবং সারা রাত চুলে তেল রেখে শ্যাম্পু করলে ভালো কাজে দেয়। সপ্তাহেদুতিনবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
তৈরির পদ্ধতি
* একটি সসপ্যানে ৫০০ মি.লি. নারিকেল তেল নিয়ে গরম করুন।
* তেল গরম থাকা অবস্থায় কিন্তু ফুটে ওঠার আগে কুচি করা পেঁয়াজ দিয়ে দিন। পেঁয়াজ একদম মিহি কুচি করতে হবে তা নয়।
* দুই থেকে পাঁচ মিনিট গরম করে তাতে কারি পাতা দিন।
* মিশ্রণটি ঠাণ্ডা করে ছেঁকে তেল আলাদা করে ফেলুন। এটাই ব্যবহার উপযোগী তেল।
আমাদের কাগজ//টিএ