লাইফ স্টাইল ৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ১২:২৭

মানুষ কেন প্রেমে পড়ে? বিজ্ঞান কী বলে? 

ছবি - সংগৃহীত

ছবি - সংগৃহীত

আমাদের কাগজ ডেস্কঃ  কেউ বলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ একবার হলেও প্রেমে পড়ে। প্রেম নামক চ্যাপ্টারের সাথে পরিচিত হন। প্রেম মানুষকে গড়ে, আবার ভাঙেও। প্রেমের টানে সাত সমুদ্র পাড়ি দেয় প্রেমিক, মৃত্যুর মতো কঠিন বিষয়টিকেও মেনে নেয় অনেকে। 

পৃথিবী ভালোবাসাময়, অন্তত প্রেমিক- প্রেমিকারা হয়তো এটাই বিশ্বাস করে।আসুন মানুষ প্রেমে কেন পড়ে এর কিছু কারণ জেনে নেওয়া যাক: 

 

প্রেম আসক্তির মতো

যুক্তরাষ্ট্রের নৃতত্ববিদ হেলেন ফিশার ও তাঁর দল ভালোবাসায় সুখি মানুষদের মধ্যে একটি গবেষণা করেন। হেলেন ফিশারের মতে, ভালোবাসার কারণের পেছনে গবেষকরা মস্তিষ্কের ভেনট্রাল টেগমেন্টাল এরিয়া (ভিটিএ)-এর এ১০ নামের কোষকে খুঁজে পেয়েছেন। এ১০ কোষ ডোপামিন তৈরিতে ভূমিকা রাখে।

ভিটিএ মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমের অংশ। এটি চাওয়া, প্রেরণা, ক্ষুধা, উত্তেজনা, ভালোবাসার আবেগ ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত। আসলে এটি মস্তিষ্কের সেই অঞ্চল যেখানে নেশা জাতীয় দ্রব্য নিলে আসক্তি অনুভূত হয়। ভালোবাসার প্রাথমিক পর্যায়েও এক ধরনের নেশা তৈরি হয়। হয়তো এই কারণে রোমান্টিকতা মাদকের মতো আসক্তি তৈরি করে।

তবে কারো প্রতি আসক্ত হওয়ার আগে মস্তিষ্ক ব্যক্তিটিকে বিচার- বিশ্লেষণ করে নেয়। কিং কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ড. ডেনিশ ভুগরা বলেন, ‘ভালোবাসা অনেক বিষয় দিয়ে প্রভাবিত হয়। সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধের পাশাপাশি এখানে শারীরিক ও আবেগীয় আকর্ষণ প্রভাব ফেলে।’ 

 

তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

যুক্তরাষ্ট্রের রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিশার ও তাঁর গবেষক দল ভালোবাসাকে মোটাদাগে তিনটি ভাগে ভাগ করেন। ভাগগুলো হলো : কাম, আকর্ষণ ও আসক্তি।  এগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় হরমোনের মাধ্যমে। এই তিনটি আবেগ একসঙ্গেও তৈরি হতে পারে, আবার আলাদা আলাদাও হতে পারে। তাই হয়তো মানুষ ভিন্ন ভিন্ন মানুষের প্রতি আসক্তি, আকর্ষণ ও কামবোধ করে।

কাম

মানুষের সেক্স হরমোন টেসটোসটেরন ও ইসট্রোজেনের রাজত্ব এখানে। এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যেই কাজ করে। গবেষকদের মতে, এই পর্যায়ের ব্যাপ্তি থাকে প্রায় দুই বছর। এর লক্ষণ হলো  : কোনো ব্যক্তির প্রতি তীব্র শারীরিক চাহিদা অনুভব করা; এটি হবে সম্পূর্ণভাবে তার শারীরিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে। এখানে বাহ্যিক সৌন্দর্যটাই মূল বিষয়। আপনি কেবল প্রেমিক বা প্রেমিকা হবেন, বন্ধু হওয়ার প্রয়োজনবোধ করবেন না।

আকর্ষণ

প্রেমের ক্ষেত্রে আকর্ষণ আরেকটি পর্যায়। এখানে মস্তিষ্কের ডোপামিন ও নোরিপাইন নামের রাসায়নিক উচ্চ মাত্রায় যুক্ত থাকে। এই প্রেমে প্রেমিক বা প্রেমিকার অনেকক্ষণ একসঙ্গে সময় কাটানোর বাসনা তৈরি হয়।

এই প্রেমে ‘হ্যাপি ক্যামিক্যাল’ বা সুখি রাসায়নিক সেরেটোনিন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন ক্ষুধা ও মেজাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। গবেষকদের ধারণা, সেরেটোনিন হলো প্রেমের প্রাথমিক পর্যায়ের মোহ তৈরির কারণ। এটি মূলত রোমান্টিক কমেডি ধরনের প্রেম। আকর্ষণের এই প্রেম সাধারণত স্থায়ী হয় ১৮ মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত।

মনোবিদ ও সম্পর্ক বিষয়ক কাউন্সেলর ভিরি শর্মা বলেন, ‘সম্পর্ক আসলে স্থায়ী হয় একজন আরেকজনকে বোঝার ধৈর্য এবং আবেগীয় যোগাযোগের মাধ্যমে।’ কাম ও আকর্ষণ উভয়ই প্রেমের ক্ষেত্রে বাধাদায়ক। আসলে যার সঙ্গে আপনি শারীরিকভাবে যুক্ত তার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে।

এই প্রেমের লক্ষণ হলো : প্রেমিক- প্রেমিকার পৃথিবীকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম হয়, সঙ্গীর সঙ্গে থাকলে নিজেকে সম্পূর্ণ মনে হয়, এমনকি সঙ্গী পৃথিবীর অন্য প্রান্তে থাকলেও।

আসক্তি

প্রেমের তিন নম্বর ভাগ হলো অ্যাটাচমেন্ট বা আসক্তি। সাধারণত আকর্ষণ ও কাম দুটো পর্যায় পার করে আসক্তি তৈরি হয়। আসক্তি হলো দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের প্রাথমিক স্তর। এই আবেগ মূলত ঘটে অক্সিটোসিন ও ভ্যাসোপ্রেসিন নামের ক্যামিক্যালের কারণে।

কাম, আকর্ষণ অথবা আসক্তি হরমোনের বিক্রিয়ার কারণে তৈরি হয়। তবে আসক্তির সম্পর্ক অনেকদিন স্থায়ী হয়। এই প্রেমের লক্ষণ হলো, সঙ্গী সঙ্গে থাকলে উষ্ণ বোধ করা, নিজের  সবকিছুই সঙ্গীর সঙ্গে শেয়ার করা, সঙ্গীর কাছে নিরাপদ বোধ করা এবং তার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া এবং তার বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে চাওয়া।

কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি হবে ভালোবাসা?

অনেক সময় সঙ্গী কম সাড়া দেওয়া, অর্থনৈতিক ও মানসিক চাপ, যৌনতায় একঘেয়েমি ইত্যাদির কারণে এই সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হতে পারে। এসব সমস্যার সমাধানে পেতে বিশেষজ্ঞদের পরমর্শ :

পরিকল্পনা ছাড়াই দুজন মাঝে মাঝে ছুটি কাটান।
সঙ্গীকে সম্পত্তি ভেবে বসবেন না। সে আপনার সম্পদ, যাকে অর্জন করতে হয়।
নিজেদের মধ্যে অনেক সময় কাটান। একজন আরেকজনের ভালো লাগা সম্পর্কে জানুন।

 

ভালোবাসা কষ্ট দেয়  

হরমোনের বিক্রিয়া ভালোবাসা ঘটায়। তবে ভালোবাসার একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে। বিচ্ছেদের পরে মস্তিষ্ক থেকে করটিসল নামের হরমোন নিঃসৃত হয়। এটি মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন। শারীরিক কোনো ফ্র্যাকচার বা ভাঙনে শরীর যেমন কষ্ট অনুভূত করে, মনেও ঠিক একই ধরনের ব্যথা অনুভূত হয়। তাই ভালোবাসুন, তবে বুঝে শুনে। সূত্র ,এনটিভি 

আমাদের কাগজ/এম টি