শীতে টনসিলের ব্যাথা নির্মূলের ঘরোয়া টোটকা
ছবিঃ ইন্টারনেট
আমাদের কাগজ ডেস্কঃ শীতকালে ঠান্ডা লাগা বা সর্দি অতিসাধারণ অথচ খুবই ছোঁয়াচে একটি রোগ। আবার যদি হয় টনসিলের সমস্যা তাহলে তো আর কথাই নেই। ডাক্তার খরচের জন্য আলাদা বাজেট ধরেই রাখা চাই। এ সময় অনেকের টনসিলের সমস্যা দেখা দেয়।
টনসিল বাড়লে ঢোক গিলতে গেলে কষ্ট হয়। মুখ-গলা, নাক, কান দিয়ে শরীরের অভ্যন্তরে জীবাণু প্রবেশে বাধা দেয় এই টনসিল। তাই টনসিল আক্রান্ত হলে জীবাণুর প্রকোপ বাড়ে, বাড়ে অন্যান্য অসুখের ভয়ও। টনসিলের সংক্রমণকে মেডিক্যালের পরিভাষায় টনসিলাইটিস বলা হয়। টনসিলাইটিস যে শুধু শিশুদের হয়, তা নয়। এটি শিশুদের বেশি হলেও যে কোনো বয়সেই হতে পারে।
সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার কোন প্রতিকার নেই, কিন্তু কিছু কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি আছে যেগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার এ সংক্রান্ত অস্বস্তি কিছুটা কমাতে পারবেন:
চিকিৎসকদের মতে, টনসিল ফুলে যাওয়ার অনেক কারণ আছে। এখানে টনসিল ফোলার ৬টি কারণ ও টনসিলের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় উল্লেখ করা হলো।
* ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ: ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে টনসিল ফুলে যেতে পারে ও গলাব্যথা হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে টনসিল ফোলার আরো কিছু লক্ষণ হলো- খাবার গিলতে অসুবিধা, মুখে দুর্গন্ধ ও মুখ হাঁ করতে অসুবিধা। চিকিৎসা না করলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ জনিত টনসিলাইটিস আরো জটিল সংক্রমণে রূপ নিতে পারে এবং গলায় পুঁজ জমতে পারে। ১০ দিনের মধ্যে উপসর্গ দূর না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
* ভাইরাস সংক্রমণ: ভাইরাসের আক্রমণে টনসিলে সংক্রমণ বা ফোলা হতে পারে এবং এটা খুবই প্রচলিত কারণ। টনসিলের জন্য দায়ী কিছু ভাইরাস হলো- ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাডিনোভাইরাস, এপস্টেইন বার (মনো) ও হার্পিস সিমপ্লেক্স। ভাইরাস সৃষ্ট টনসিলাইটিসের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো- জ্বর, মাথাব্যথা, সর্দি ও গলাব্যথা। এই ধরনের সংক্রমণ সাধারণত ১০ দিনের মধ্যে সেরে ওঠে। যদি মনে করেন যে ভাইরাসের আক্রমণে টনসিল ফুলে গেছে, তাহলে স্বস্তি পেতে প্রচুর পানি পান করুন, লবণ পানির গড়গড়া করুন এবং প্যারাসিটামল/আইবুপ্রোফেন সেবন করুন।
* টনসিলে পাথর: টনসিলে পাথর হলে টনসিল ফুলে যায় এবং গলায় ভরাট অনুভব হয়। টনসিলের ফাঁকে খাদ্যকণা জমে পাথর তৈরি হয়। এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। খুব সহজেই টনসিলের পাথর অপসারণ করা যায়। চিকিৎসকদের মতে, লবণ পানিতে গড়গড়া করলে টনসিলের পাথর দূর হয়ে যায়। এরপরও পাথর লেগে থাকলে কটন সোয়াব বা টুথব্রাশের উল্টো দিক দিয়ে ঘষা দিতে পারেন।
* যৌনবাহিত রোগ: সিফিলিস ও গনোরিয়া উভয়েই গলাকে আক্রান্ত করতে পারে। সিফিলিসের প্রাথমিক পর্যায়ে গলার পেছনে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে এবং সেইসঙ্গে টনসিল ফুলে যেতে পারে। অন্যদিকে গনোরিয়ার দুটি উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হলো- মুখে ক্ষত, টনসিলে ফোলা ও গলায় জ্বালাপোড়া।
* ক্যানসার: টনসিলেও ক্যানসার হতে পারে। সাধারণত টনসিলের একপাশে ক্যানসার হয়ে থাকে- এক্ষেত্রে টনসিল ফুলে যায়, ব্যথা করে এবং অন্যকোনো উপসর্গ থাকে না। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে গলা ব্যথা, কান ব্যথা, রক্তক্ষরণ ও গলায় পিণ্ড হতে পারে। টনসিল ক্যানসারের সবচেয়ে প্রচলিত কারণ হলো- ধূমপান ও মদপানের অভ্যাস। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) দ্বারাও ক্যানসারটি হতে পারে- এইচপিভি ভ্যাকসিন নিলে এই ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ হয়। ইমিউন সিস্টেমের ক্যানসার লিম্ফোমাও টনসিলকে ফোলাতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, লিম্ফোমা জনিত টনসিলের ফোলা একপাশে বা উভয়পাশে হতে পারে এবং প্রায়ক্ষেত্রে গলা, বগল ও কুঁচকিতে পিণ্ড ওঠে।
* পাকস্থলির অ্যাসিড: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিম্নমানের খাবার থেকে পাকস্থলির অ্যাসিড গলায় এসে থাকে। সমস্যাটি অ্যাসিড রিফ্লাক্স নামে পরিচিত। এর ফলে টক ঢেকুর ওঠে ও গলা জ্বালাপোড়া করে। পাকস্থলির অ্যাসিড নিয়মিত গলায় ওঠে আসলে জ্বালাপোড়ার পাশাপাশি টনসিল ফুলে যায়। আরো কিছু লক্ষণ হলো- ঘনঘন গলা পরিষ্কারের তাড়না, গিলতে সমস্যা ও কাশি। চিকিৎসকদের মতে, এক্ষেত্রে মসলাদার খাবার, কোমল পানীয়, ক্যাফেইন, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি একাধিক বালিশে মাথা রেখে ঘুমানো ও প্রয়োজনে এন্টাসিড সেবন করতে হবে। উচ্চ চর্বির খাবার ও রাতে দেরিতে খেলে রিফ্লাক্সের সমস্যা বেড়ে যায়
শীতে টনসিলের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
কথায় আছে যার ব্যাথা সেই বুঝে এক মাত্র জ্বালা। টনসিল ফুলে গেলে কিছু উপায় অবলম্বনে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতে পারেন, যেমন- লবণপানির গড়গড়া, হলুদ মেশানো দুধ পান, পুদিনা চা পান, গ্রিন টির সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান, ওটিসি থ্রোট স্প্রে ব্যবহার, পর্যাপ্ত পানি পান, প্রদাহনাশক ওষুধ সেবন (যেমন- আইবুপ্রোফেন)।
যখন চিকিৎসক দেখাবেন
চিকিৎসকদের মতে, বেশিরভাগ টনসিলাইটিস বা টনসিলের ফোলা কিছুদিনে ভালো হয়ে যায়। তবে গিলতে সমস্যা হলে, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হলে ও উচ্চ জ্বর থাকলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
ঘরোয়া উপায় অবলম্বনের পরও টনসিলের ফোলা এক সপ্তাহ বা ১০ দিনে না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
তথ্যসূত্র: প্রিভেনশন
আমাদের কাগজ/এম টি