সোশ্যাল মিডিয়া ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০৫:৪০

শমী কায়সারের পরিবারের বিরুদ্ধে জহির রায়হানের সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ


মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারানো একই পরিবারের দুই ভাই শহীদুল্লাহ কায়সার ও জহির রায়হান।দেশের দুই রত্ন, দুই শহীদ বুদ্ধিজীবী। ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সার নিখোজ হলে তার সন্ধানে বিহারী ক্যাম্পে গিয়ে নিখোজ হন জহির রায়হান। তবে এবার ছোট ভাই জহির রায়হানের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার, মেয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সার ও ছেলে অমিতাভ কায়সারের বিরুদ্ধে।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কথাসাহিত্যিক জহির রায়হানের বড় ছেলে নাট্যনির্মাতা বিপুল রায়হানের মেয়ে ভাষা রায়হান ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এই অভিযোগ করেন।

অসুস্থ বাবার চিকিৎসা প্রসঙ্গে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে জহির রায়হানের নাতনী লিখেছেন, ‘...আমাদের আর্থিক অবস্থা কখনোই খুব ভালো ছিলোনা, সেটা সবাই জানেন। কিন্তু আমার দাদা জহির রায়হান শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি রেখে গেছেন, আর তার নাতনিকে চিন্তা করতে হয় তার বাবার চিকিৎসার খরচের। এর থেকে কষ্টের অনুভূতি আর কি হতে পারে আমার জন্য ? এর থেকেও কষ্টের অনুভূতি এটা যে এই সম্পত্তি আমার রক্তের /পরিবারের মানুষরাই দখল করে রেখেছে। আমি জানি আমার বাবা যখন সুস্থ হয়ে এই লেখা দেখবেন, তখন খুবই বিরক্ত হবেন আমার উপরে কারণ তিনি কখনোই চান নাই পরিবারের কথা বাইরের কেউ এভাবে জানুক। কিন্তু তবুও আমি বলবো কারণ আমার ভীষণ মন খারাপ। আমি যতটুকু জানি ,আমার দাদার অনেক সম্পত্তি শমী ফুপি,পান্না দাদি আর অমি চাচাদের কাছে। আমার দাদার ভাইয়েরা এবং বোনেরা তাদের অনেকবার বলেছেন যে আমাদের সম্পত্তি আমাদেরকে বুঝিয়ে দিতে। কিন্তু তারা সব সময় এড়িয়ে গেছেন। আমার দাদা শাহরিয়ার কবিরও প্রথম আলোতে এই বিষয়ে লিখেছিলেন। কিন্তু আমি চাই বাইরের মানুষ জানুক। কারণ আমার রক্তের মানুষ আমার এবং আমাদের সাথে যা যা করেছে বা করছে সেটা জানালে হয়তো আমার কষ্টটা একটু কম হবে। আমি আরেকটা জিনিস চিন্তা করি, আমার দাদা বেঁচে থাকলে কি কষ্টই না পেতেন এটা দেখে যে তার প্রিয় বড় ভাই, যাকে বাঁচাতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে, সেই বড় ভাইয়ের পরিবার তার সন্তানদের সাথে এমন করছে। গুলশানে আমেরিকান এম্বাসেডরের বাসার পাশের এক বিঘা জমিটা আমার দাদার টাকার, গুলশানে আড়ংয়ের পেছনে তিন বিঘা জমি আমার দাদার টাকার এরকম আরো অনেক সম্পত্তি আছে যেটা আমার বাবা / চাচারা বলতে পারবে , আমার এই দুইটাই মনে আছে তাই বললাম , যার দাদার এমন সম্পত্তি তার নাতনিকে চিকিৎসার খরচ নিয়ে ভাবতে হয় ?’

ভাষা রায়হানের দেওয়া স্ট্যাটাসের সমর্থনে পরে জহির রায়হান পুত্র বিপুল রায়হান লিখেন, ভাষা তুমি ঠিকই লিখেছ, বিষয়টি এভাবে প্রকাশ হোক তা আমি চাই নি। আর চাই নি বলেই “প্রেসক্লাবীয় চুরি”কাণ্ডের পর, সেদিনের “বেলেল্লাপনার” প্রতিক্রিয়ায় “মহাচোরীয় বৃত্তান্ত” লিখি নি। আমি বরং ইতিহাস খনন করে তুলে আনছি সেইসব “মণিমাণিক্য” যা সাধারণভাবে মানুষ জানেন না। তাঁদের কখনও জানতে দেয়া হয় নি। “ইতিহাস কথা বলে”র ধারাবাহিকতায় এদেশের বাস্তবতায় যে “বনেদি” পরিবারের উত্তরাধিকার যুগপৎ তুমি এবং আমি বহন করে চলেছি, তার আলোকিত যে অধ্যায় অর্থাৎ জহির রায়হান ও তাঁর উত্তরাধিকারীরা যেমন আছেন; তেমনি অতিমূল্যায়িত অথচ প্রকৃতঅর্থে সারবত্তাহীনদের অন্ধকার অধ্যায়ের বয়ানও থাকছে, থাকবে।... তোমার পূর্বসূরী রায়হানেরা অর্থাৎ আমি বা অনল, অপু বা তপু আজও যেসব অমীমাংসিত বিষয়ের ফয়সালা করে উঠতে পারি নি; রায়হানের উত্তরসূরী হিসেবে তুমি বা ভুবন বা শনরা একদিন ঠিক ঠিক তাতে সফল হবে। এ নিছকই আমার বিশ্বাস নয়, এও মহাকালেরই নিয়ম।’

জহির রায়হানের প্রথম স্ত্রী সুমিতা দেবীর ছেলে বিপুল রায়হান। জহির রায়হানের দ্বিতীয় স্ত্রী অভিনেত্রী কোহিনূর আক্তার সুচন্দাও স্বামীর সম্পত্তি বেদখল হওয়ার অভিযোগ করেছেন। সুচন্দা গণমাধ্যমকে বলেন, জহির রায়হানের টাকায় গুলশানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসার পাশের এক বিঘা এবং গুলশানের আড়ংয়ের পেছনের জমি কেনা হয়। জহির রায়হানের ব্যস্ততার কারণে শহীদুল্লাহ কায়সারই জমি দুটো কিনেন। পরে ওগুলো জহির রায়হানের নামে ট্রান্সফার করার কথা ছিল। কিন্তু তা আর করা হয়নি। 

মুক্তিযুদ্ধের পর তারা দুই ভাই আর ফিরে না আসা শহীদুল্লাহ কায়সারের পরিবারের সদস্যরা জমি বিক্রি করে দেন। এ ব্যাপারে তারা জহির রায়হানের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করেননি।