আমাদের কাগজ রিপোর্ট: মেট্রোরেল ব্যবস্থা রাজধানীবাসীর জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। তাই মেট্রোর টিকিট কাটা থেকে শুরু করে ট্রেনে চড়া পর্যন্ত সব কিছুই যাত্রীদের জন্য প্রথম। প্রথম দিনই টিকিট কাটার মেশিনে গোলযোগ দেখা গেছে। ফলে হাতে হাতে টিকিট বিক্রি করায় সময় বেশি লেগেছে। কিছুটা দেরি হলেও আগারগাঁও স্টেশনে বড় ধরনের ঝামেলা ছাড়াই টিকিট কাটতে পেরেছেন মেট্রোর যাত্রীরা। এমআরটি (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট) পাস হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন অনেকে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) আগারগাঁও মেট্রো স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মেট্রোর গেট খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য। ধাপে ধাপে প্রবেশ করানো হয় অপেক্ষমান যাত্রীদের। যাত্রীরা ওপরে উঠেই টিকিট কাটার জন্য লাইনে দাঁড়ান। মেট্রোরেলে গতানুগতিক ও স্বয়ংক্রিয় দুই পদ্ধতিতে টিকিট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সফটওয়ার আপডেট সংক্রান্ত কারণে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টিকেট কাটা যাচ্ছে না বলে জানান উপস্থিত স্কাউট সদস্য। তাই গতানুগতিকভাবে হাতে হাতেই টিকেট কাটছিলেন যাত্রীরা। একসঙ্গে অনেক যাত্রীর টিকিট কাটতে গিয়ে কিছুটা দেরি হচ্ছিলো বলে অভিযোগ করেন টিকেটের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের অনেকে। তবে টিকিট অর্থাৎ এমআরটি পাস কার্ডটি পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন সবাই।
এমআরটি কার্ডটি নিয়ে যাত্রীদের যেতে হচ্ছে পেসেঞ্জার গেটের কাছে। সেখানে কার্ডটি পাঞ্চ করার পর অটোমেটিকভাবে দরজা খুলে যাচ্ছে। কিন্তু প্রথম অবস্থায় অনেক যাত্রীর বিষয়টি বুঝে উঠতে সময় লাগছে। তাদের সহয়তার জন্য আনসার বাহিনীর সদস্যরা কার্ড পাঞ্চ করে ভেতরে প্রবেশের পদ্ধতি দেখিয়ে দিচ্ছিলেন।
সবুজ নামে এক যাত্রী টিকিট (এমআরটি পাস) নেওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ‘এগুলো সম্পর্কে আগে কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। ভেবেছিলাম কঠিন কিছু। এখন মনে হচ্ছে জানলে খুবই সহজ।’
দেশ এখন ডিজিটাল মন্তব্য করে আমিরুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘এমআরটি পাস নিতে একটু লেট হয়েছে। আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ প্রথম অবস্থায় অভ্যস্ত হওয়ার বিষয় রয়েছে। তবে দেখে ভালো লাগছে দেশে এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে টিকেট কাটতে পারছি। দেশ এখন ডিজিটাল।’
এদিকে উত্তরা উত্তর স্টেশনে যাত্রীদের টিকিট ও রিচার্জ করার মেশিনগুলো বন্ধ ছিল। ফলে প্রথম দিনই যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। রাস্তায় বিশাল লাইনে পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই হতাশ হন অনেকে। পরে হাতে হাতে টিকিট কাটার জন্য আবার লাইনে দাঁড়াতে হয়।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে টিকিট কেটে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে ওঠেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে সাধারণ যাত্রীদের জন্য মেট্রোরেল খুলে দেওয়া হয়। আপাতত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চলবে এই রেল। তিন মাস পর পূর্ণভাবে যাত্রা করবে মেট্রোরেল।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও রুটে প্রথমদিকে ১২টি ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে ১০টিতে সরাসরি যাত্রী পরিবহন করা হবে। বাকি দুটি যেকোনও সময়ে চলাচলের জন্য ডিপোতে প্রস্তুত থাকবে। ট্রেন দুটি পরিচালনার কর্মকর্তারাও প্রস্তুত থাকবেন। যাত্রীদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেদিকটি মাথা রেখে সবসময় ব্যাকআপ রাখা হবে।
মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ৫ টাকা। যাত্রীপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া লাগবে ৬০ টাকা।র্যাপিড পাস নেওয়ার জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ১০ বছরের জন্য এই পাস দেওয়া হবে। রেজিস্ট্রেশন করে স্টেশনে থেকে কার্ড নিতে হবে। কার্ডের জন্য ২০০ টাকা লাগবে। পরে কার্ডে ২০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করা যাবে।
আমাদের কাগজ/টিআর