কৃষি ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৪:০৫

প্রতিবন্ধী আক্কাস শূন্য থেকে এখন ছয় একর জমির মালিক 

নিজস্ব প্রতিবেদক : মাগুরা সদর উপজেলার নালিয়াডাঙ্গি গ্রামের কৃষক আওয়াল খানের ছেলে আক্কাস খান। লেখাপড়া করতে পারেননি দারিদ্র্যের কারণে । বসতবাড়ি ছাড়া নিজের পৈতৃক জমি ছিল না। তবুও সাহস আর মনোবল কাজে লাগিয়ে আট বছর আগে অন্যের সমাজসেবার আর্থিক সহযোগিতায় এক বিঘা জমি ইজারা নিয়ে সবজি চাষ শুরু করে সফল হন। 

আরও জমি ইজারা নিয়ে হাইব্রিড কুমড়া, মরিচ, বেগুন, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা জাতের সবজি চাষ করেন। পরের বছর কুমড়া চাষে আয় করেন দুই লাখ টাকা, কেনেন এক বিঘা জমি। পরে পাঁচ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ করেন। এভাবে আক্কাস এখন ছয় একর জমির মালিক।

তবে এ পথচলা মোটেও মসৃণ ছিল না আক্কাসের। কারণ, অজ্ঞাত রোগে মাত্র সাত বছর বয়সে দুটি পা শুকিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন তিনি। নিজের তাগিদ ছিল মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর। সেই প্রত্যয় থেকেই প্রতিবন্ধকতা জয় করে তিনি এখন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। নিজের জমির সঙ্গে আরও ১০ একর ইজারা নিয়ে সবজি আবাদ করে বছরে আয় করছেন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।

শুধু কৃষিতেই নয়, আয়ের টাকা দিয়ে পাকা বাড়ি করেছেন আক্কাস। বাড়িতে পাঁচটি গরু ও ছাগল লালনপালন করছেন। কিনেছেন উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি। সরেজমিন নালিয়াডাঙ্গি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শুকিয়ে যাওয়া দুটি পা নিয়ে ক্র্যাচে ভর দিয়ে ক্ষেতে কাজ করছেন তিনি। এ কৃষি উদ্যোক্তা জানান, শৈশবের দুশ্চিন্তা ও অনেকের অবহেলা তাঁকে আত্মপ্রত্যয়ী হতে সহায়তা করেছে। অকেজো পা নিয়ে কাজ করতে তাঁর অসুবিধা হয় না, মনোবলই মূল শক্তি। কাজে তাঁর বাবা আওয়াল খান সহযোগিতা করেন।

জানা গেছে, দূরের স্থানে যেতে সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত সিরাজুল আকবরের দেওয়া ট্রাই সাইকেল ব্যবহার করেন আক্কাস। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়; ইচ্ছা শক্তি আর মনোবল থাকলে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করা সম্ভব।

প্রতিবেশী হাসেম মোল্লা বলেন, অন্য কৃষকের চেয়ে আক্কাসের জমিতে প্রতিটি ফসলের ফলন ভালো হয়। কারণ তিনি জানেন, কখন কোন ফসল চাষ করলে লাভবান হওয়া যায়। তিনি প্রমাণ করেছেন প্রতিবন্ধীরা অক্ষম নন।

বাবা আওয়াল খান বলেন, 'আক্কাস যখন পঙ্গু হয়ে যায়, খুব চিন্তায় পড়েছিলাম। এখন সে-ই আমাদের সহায়। এখনকার সমাজে অনেক সুস্থ ছেলে বাবা-মাকে দেখে না।'

মাগুরা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, আক্কাস বিভিন্ন জাতের ফসল আবাদ করে আট বছরে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। অন্যরা এক জমিতে দুই ফসল চাষ করলেও তিনি চার ফসল উৎপাদন করেন।

আমাদেরকাগজ/ এইচকে