সারাদেশ ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৫:০২

এরশাদ শিকদারের সেই ‘স্বর্ণকমল’ ভাঙা হচ্ছে

ছবি - সংগৃহীত

ছবি - সংগৃহীত

আমাদের কাগজ ডেস্কঃ ভেঙে ফেলা হচ্ছে অতি আলোচিত সেই ‘স্বর্ণকমল’। এক সময় যার নামে শুনে যে কেউ আঁতকে উঠতেন। শরীরের ভয়ের অনুভূতি তৈরি হতো, সে ইতিহাস অনেকটাই পুরনো। কিন্তু এই মানুষটিকে ঘিরে রহস্য যেন শেষ হয় না। এখনো বিচিত্র কথা ভেসে বেড়ায়। তাঁর নাম এরশাদ শিকদার ওরফে রাঙ্গা চোরা। 

২০০৪ সালের ১০ই মে খুলনা জেলা কারাগারে ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। কিন্তু তাঁর নিজের হাতে নির্মিত খুলনা মহানগরীর মজিদ সরণীর সুরম্য ‘স্বর্ণকমল’ ঘিরে ছিল নানা রহস্য। প্রায় দু’দশক পরও দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে ছুটে আসতো মানুষ। এটি ছিল এরশাদ শিকদারের বাসভবন। এই ভবণ নির্মাণ, স্থাপত্যশৈলী, ভবন অভ্যন্তরে ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়েও ছিল অন্তমধুর আলোচনা।

১ যুগের ও বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে মানুষখোকো এই দানবের মৃত্যুর দিন।এরশাদ শিকদার সেই সময় খুলনা মহানগরীর ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন।হয়েছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের কমিশনার। এরপর স্থানীয়দের কাছে তিনি পরিচিতি পান ‘বড় মিয়া’। ১৯৮০-৮১ সালে তিনি ওই এলাকায় ‘রাঙা চোরা’ নামে পরিচিত ছিলেন। সেই রাঙা চোরাই হয়ে ওঠেন খুলনার ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট এলাকায় অপরাধ জগতের গডফাদার।

তার নিজের হাতে নির্মিত খুলনা মহানগরীর মজিদ সরণীর সুরম্য দোতলা বাড়ি ‘স্বর্ণকমল’ ঘিরে এতদিন ছিলো নানা রহস্য। প্রায় দু’দশক পরও বাড়িটি দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসতো মানুষ।

স্থানীয়রা বলেন, ‘স্বর্ণকমল’ খুলনার আলোচিত একটি বাড়ি। পুরাতন হলেও মজবুত। বাইরে থেকে বাড়িটি খুব সুন্দর লাগতো। এরশাদ শিকদারের বাড়িকে ঘিরে মানুষের অনেক কৌতুহল। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই বাড়িটি দেখতে আসতো। হঠাৎ করেই দেখছি বাড়িটি ভাঙা হচ্ছে। শুনেছি বাড়িটি ভেঙে ১০ তলা ভবন করা হবে। বাড়িটি ভেঙে ফেলায় খারাপ লাগছে।

এরশাদ শিকদারের মেঝো ছেলে কামাল শিকদার জানান, কেডিএ’র ১০ কাঠা জমির ওপর তাদের একটি পুরাতন তিন তলা এবং আরেকটি দোতলা বাড়ি ছিলো। তারা কয়েকদিন আগে পুরাতন তিন তলা ভবনটি শ্রমিক দিয়ে ভেঙে ফেলেছেন। এখন দোতলা ভবনটির অর্ধেকের মতো অংশ ভাঙা হচ্ছে। ভেঙে ফেলা ৫ কাঠা জমির ওপর ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

১৯৮২ সালে এইচএম এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এরশাদ শিকদার। ১৯৮৮ সালে ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর এরশাদ শিকদার বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বরে দল পরিবর্তন করে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। কিন্তু সমালোচনার মুখে কিছুদিন পরই আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। ১৯৯৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার সময় এরশাদ শিকদার নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ছিলেন। রাজনীতিতে প্রবেশ করার পর আরও ক্ষমতাসীন হয়ে ওঠেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত খুলনার রেলওয়ের সম্পত্তি এবং জোরপূর্বক ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও একাধিক ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। জীবিত থাকতে ঘাট এলাকায় তিনি ছিলেন ত্রাস। অর্ধশতাধিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন তিনি। ২৪টি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন তার বডিগার্ড নুরে আলম। ২০০৪ সালের ১০মে মধ্যরাতে খুলনার জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। 

২০২২ এ গলায় দড়ি দিয়ে আত্তহত্যা করেছে এরশাদ শিকদারের মেয়ে জান্নাতুল নওরিন এশা (২২)।  

আমাদের কাগজ/এম টি