রাজনীতি ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ ১২:৩০

মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি,ছাড়তে নারাজ দু'দলই   

ছবি - সংগৃহীত

ছবি - সংগৃহীত

আমাদের কাগজ ডেস্কঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে সরকার পতনে আন্দোলন করছে দলটি। আর এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন আয়োজনে অনঢ় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিদ্যমান এই রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সংলাপ-সমঝোতায় জোর দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। 

বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলোর গণঅবস্থান কর্মসূচিতে ভোর থেকেই রাজধানীজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘সতর্ক অবস্থানে’ থাকার কথা জানিয়েছে বুধবার (১১ জানুয়ারি) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির অবস্থানসহ নগরীর মোট আটটি স্পটে গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে মিত্র দলগুলো।

এদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো কমপক্ষে পাঁচটি স্থানে বড় ধরনের সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সরকারবিরোধী ও ক্ষমতাসীন দলের পাল্টাপাল্টি এমন কর্মসূচিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ। যদিও উভয় পক্ষ থেকেই ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি’ পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।


মঙ্গলবার রাতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, জনদুর্ভোগ না করার শর্তে নয়াপল্টনে বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গণ অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি। তবে সড়কে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটলে দায় নিতে হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বুধবারের গণ অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে ঢাকাসহ দেশের ১০ সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে। কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন নেতাকর্মীরা। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অন্যান্য বিভাগেও বিএনপি এ কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আরও প্রায় ৫২ দল ও সংগঠন পৃথকভাবে রাজধানীর সাতটি স্থানে এ কর্মসূচি পালন করবে।

তবে ইস্যু হিসেবে বিএনপির গণ অবস্থান কর্মসূচি মোকাবিলা ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালনের কর্মসূচিও সামনে এনেছেন আওয়ামী লীগ। এ দুই ইস্যুতে এখন পর্যন্ত রাজধানীর পাঁচটি স্থানে শান্তি সমাবেশ ও আলোচনা সভার ঘোষণা দিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের অবস্থান: সকাল থেকে রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে নেতাকর্মীর মিছিল ও ‘সতর্ক পাহারায়’ থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। 

এদিকে(১১ জানুয়ারী) সকাল থেকে রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে নেতাকর্মীর মিছিল ও ‘সতর্ক পাহারায়’ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নাশকতার আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়া মাত্র প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নেতাকর্মীরাও প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন। ঘোষিত দুটি সমাবেশে লোকসমাগমের জন্য এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। একই রকম প্রস্তুতি নিয়েছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ অন্য সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে রাজধানীতে দুটি সমাবেশে করবে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। দক্ষিণের উদ্যোগে দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এবং উত্তরের উদ্যোগে বেলা ১১টায় ফার্মগেট এলাকায় এ সমাবেশে করবে সংগঠনটি। এতে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। 

বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য, অগ্নিসন্ত্রাস ও সংবিধানবিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে বেলা ১১টায় রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি। 

বিএনপির গণ অবস্থান কর্মসূচির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ কৃষক লীগ। সংগঠনের সভাপতি সমীর চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির নেতৃত্বে বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এতে কেন্দ্রীয় ও মহানগর উত্তর-দক্ষিণ কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন।

আওয়ামী লীগের বড় অবস্থান সমাবেশ হবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের নেতৃত্বে অবস্থান সমাবেশ করবেন ক্ষমতাসীনরা। সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভার মাধ্যমে বড় ধরনের শোডাউন করা হবে সেখানে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ব্যানারে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে, বিকেল ৩টায় মিরপুর ১ নম্বরের ঈদগাহ মাঠে। উভয় কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যোগ দেবেন।

আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি না গ্রহণ করা হলেও নগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির জানান দেবে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এ ছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, মৎস্যজীবী লীগসহ আওয়ামী লীগের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিএনপির গণ অবস্থান কর্মসূচির প্রতিবাদে নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার দলীয় ফোরামের এক অনুষ্ঠানে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সুসংহত। দেশি-বিদেশি যে কোনো ষড়যন্ত্র ও আন্দোলনের নামে সহিংসতা হলে সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ।

এদিকে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা না থাকলেও গণ অবস্থানের নামে জনদুর্ভোগ সহ্য করা হবে না।

আমাদের কাগজ/এম টি