আমাদের কাগজ রিপোর্ট: অ্যালকোহল বিক্রি করে ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ৬ মাসে ২৩২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা আয় করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কেরু অ্যান্ড কোম্পানি।
৬ মাসে কোম্পানিটির মদ বিক্রির সর্বোচ্চ রেকর্ড এটি। কোম্পানিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদেশি মদ আমদানিতে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও বিক্রি উভয়ই বেড়েছে। এমন তথ্যই জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ইউএনবি।
সরকার শুল্ক ফাঁকি রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২১ সালে মদ আমদানির ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। ফলে আইনি মাধ্যমে মদ আমদানি কমেছে। আর এটিই দেশীয় কোম্পানিটির মুনাফা অর্জনে সহায়তা করেছে।
অনুমোদিত বারগুলোতে বিদেশী মদের ঘাটতি রয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় দেশীয় কোম্পানি থেকে মদ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এই কারণে, মদ বিক্রি এবং আয় উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।” বিক্রি বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে এভাবেই উত্তর দেন কেরু অ্যান্ড কোম্পানির সিনিয়র কর্মকর্তা সৈয়দ মাসুদুল হক।
কোম্পানির তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অ্যালকোহল বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ২৩২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আয় হয়েছিল ১৯২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ৪০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বেশি আয় হয়েছে। আয় বেড়েছে ২১%।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে পুরো সময়ে সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড ছিল কোম্পানিটির। সেই সময় কোম্পানিটি আয় করে ৪২৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ওই বছর রাজস্ব আদায় ও কোম্পানি পরিচালনাসহ সব খরচ বাদে কোম্পানি প্রকৃত মুনাফা করে ৪৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তার আগের ২০২০-২১ পুরো অর্থবছরে অ্যালকোহল বিক্রি করে আয় হয়েছিল ৩১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকৃত মুনাফা হয়েছিল ১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
চলতি মৌসুমে এই আয় আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি একদিকে যেমন উৎপাদন বাড়িয়েছে একই সঙ্গে দেশজুড়ে বিক্রয় ও বিক্রয় কেন্দ্র বাড়িয়েছে।
কোম্পানীর হিসেব মতে, প্রতিষ্ঠানটি ১৭৫ মিলিলিটার, ৩৭৫ মিলিলিটার ও ৭৫০ মিলিলিটারের বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাত করে। একটি কেসে ৭৫০ মিলিলিটারের ১২টি, ৩৭৫ মিলিলিটারের ২৪টি এবং ১৭৫ মিলিলিটারের ৪৮টি বোতল থাকে। প্রতিমাসে প্রায় ২১ হাজার কেসেরও বেশি অ্যালকোহল বিক্রি করছে কেরু।
৮৪ বছরের পুরোনো দেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানার একমাত্র অ্যালকোহল উৎপাদনকারী কেরু মোট ৯টি ব্যান্ডের অ্যালকোহল উৎপাদন করে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেরুর উৎপাদিত অ্যালকোহল বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে। গত বছর কোম্পানি প্রতি মাসে গড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার কেস বিক্রি করেছিল। বিগত ৬ মাসে গড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।
সারা দেশে কেরুর ১৩টি ওয়্যারহাউস ও ৩টি বিক্রয়কেন্দ্র ছিল। বর্তমানে কক্সবাজারে একটি নতুন বিক্রয় কেন্দ্র চালু হয়েছে। এছাড়া রূপপুর ও কুয়াকাটায় ১টি করে বিক্রয় কেন্দ্র এবং রাজশাহী ও রামুতে ১টি করে ওয়্যারহাউস নির্মাণের মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে ওেকাম্পানিটির।
কেরুর কর্মকর্তারা বলছেন, চুয়াডাঙার দর্শনায় অবস্থিত কারখানা আরও বেশি উৎপাদনে সক্ষম। বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৫০% ব্যবহৃত হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে উৎপাদন দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তারা। এ নিয়ে ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ চলমান। অ্যালকোহলের পাশাপাশি ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সার, চিনি ও গুড়ের মতো অন্যান্য পণ্যও উৎপাদন করে থাকে এ প্রতিষ্ঠানটি।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (ফাইন্যান্স) সাইফুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, “গত দুই বছরে মদের উৎপাদন ও চাহিদা বেড়েছে। আগে কেরু অফ সিজনে নিজস্ব ও পার্শ্ববর্তী চিনিকল থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করত। কিন্তু বর্তমানে, কোম্পানিটি মদের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীনে সমস্ত চিনিকল থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করছে।
তিনি আরও বলেন, “এইভাবে চাহিদা বাড়লে মদের জন্য আরও কাঁচামালের প্রয়োজন হবে। এ জন্য কৃষকদের উচ্চ উৎপাদনশীল আখ চাষে উৎসাহিত করা দরকার। সেটি করা হচ্ছে।”
আমাদের কাগজ/টিআর