রাজনীতি ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০১:১১

এরশাদ আমলে শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি কেন নিষিদ্ধ করা হয়!   

ছবি - সংগৃহীত

ছবি - সংগৃহীত

তুষার আহম্মেদঃ শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধে ১৯৮২ সালে তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জারি করা আদেশটি এখনও মনে পড়ে। তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত সামরিক সরকারের আমলে জারি করা সব আইন-কানুন, বিধিবিধান ও অধ্যাদেশ উচ্চ আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়ে গেছে। যত দূর মনে পড়ে, স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম রাষ্ট্রপতি আবু সায়ীদ চৌধুরী শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতিতে সন্ত্রাসের ব্যাপকতা দেখে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব তুলে বিতর্কিত হয়েছিলেন। 

অনেক রাজনীতিক তো বটেই, অনেক শিক্ষাবিদও সাবেক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি। তাদের প্রস্তাব ছিল, ছাত্ররাজনীতি কলুষমুক্ত করতে হবে, নিষিদ্ধ করা চলবে না। অনেক ছাত্রনেতাও তখন সাবেক রাষ্ট্রপতির মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন।

এই বিতর্কের সময়েই দেশের সুশীল সমাজের কেউ কেউ বলেছিলেন, কেবল ছাত্রদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে লাভ হবে না। শিক্ষকদের মধ্যেও দলীয় রাজনীতির চর্চা এবং নিজেদের স্বার্থভিত্তিক রাজনীতিতে ছাত্রদের জড়ানো বন্ধ করতে হবে। সবচাইতে বড় কথা, রাজনৈতিক দলগুলো যাতে নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে, স্বার্থ-সুবিধার ব্যবস্থা করে ছাত্রদের দলের পেটোয়া লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করতে না পারেন, তার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। 

নানা বার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্ররাজনীতি থেকে আগাছা উপড়ে ফেলার আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু এই আগাছার শিকড় রয়েছে মূল রাজননৈতিক দলগুলোর ভেতরে। দেশের মূল রাজনীতি, এক কথায় বড় রাজনৈতিক দলগুলো আগাছামুক্ত না হলে তাদের লেজুড়বৃত্তি করছে যে ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের আগাছামুক্ত করা যাবে না। মূল রাজনৈতিক দলগুলোর অনুসরণে ছাত্ররাজনীতিতেও এখন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি ঢুকেছে। দলের কমিটি গঠন ও শাখা গঠনের নামে চলে লাখ লাখ টাকার রাজনৈতিক বাণিজ্য। এই অপরাজনীতির দাপটে সৎ ও শুভ রাজনীতি এখন দেশছাড়া।

প্রসঙ্গত, ব্রিটেনের ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে আমি ঘনিষ্ঠভাবে না হলেও মোটামুটি পরিচিত। এখানে কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থক যেমন ছাত্র সংগঠন আছে, তেমনি আছে লেবার, লিবারেল ইত্যাদি পার্টির সমর্থক ছাত্র সংগঠন। তারা মূল দলের লেজুড়বৃত্তি করে না। আদর্শ ও কর্মসূচীর ভিত্তিতে মূল দলকে সমর্থন দেয়। মূল দল তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না। আবার মূল দল ক্ষমতায় গেলে তাদের সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিশেষ কোনো সুযোগ-সুবিধাও পান না। ইউরোপে ছাত্ররাজনীতি তাই পরিচ্ছন্ন এবং কর্মসূচীভিত্তিক।
(বিডি নিউজ ২৪) 

১৯৮২ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পর সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তিনি তার দলের ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে অন্য সব রাজনৈতিক দলকে তাদের ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

কেউ কেউ বলেন, তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত একটি স্ট্যান্ডবাজি ছিল। কারণ, তার জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন মাঠে ছিল না। নিজের ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করে তিনি তৎকালীন বিরোধী দলগুলোকে ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিলেন।’

আমাদের কাগজ/এমটি