খেলাধুলা ১ মার্চ, ২০২৩ ০৪:০৩

২০৯ রানেই শেষ বাংলাদেশ

আমাদের কাগজ রিপোর্ট: মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতলেও ব্যাটিংটা আহামরি হয়নি বাংলাদেশের। ৪৭.২ ওভারে ২০৯ রানেই তারা গুটিয়ে গেছে।

লিটন দাস সামর্থ্যের পরিচয় দিতে পারেননি। পঞ্চম ওভারেই লেগ বিফোরে সাজঘরে ফিরেছেন। তবে তামিম ইকবালের শুরুটা খারাপ হয়নি। ইনিংস লম্বা করতে পারেননি যদিও। ২৩ রানে উডের বাউন্সে বোল্ড হয়েছেন। তার পর ধাক্কা সামাল দিতে অবদান রাখেন শান্ত-মুশফিক। ৪৪ রানের এই জুটি ভাঙে মুশফিকের বিদায়ে। সাকিব দ্রুত ফিরলেও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি গড়ে ফের দলকে উদ্ধারে অবদান রাখেন শান্ত। ওয়ানডের প্রথম ফিফটি পাওয়া শান্ত ৫৮ রানে ফিরতেই ম্যাচের গতিপথ পুরোপুরি বদলে গেছে। ৫৩ রানের জুটি ভাঙতেই পরের ওভারে মাহমুদউল্লাহ ৩১ রানে ফিরেছেন।

তাদের বিদায়ের পর আফিফ-মিরাজও দলকে উদ্ধার করতে পারেননি। বরং বাজে শটে দলকে আরও বিপদে ফেলে গেছেন। শেষ দিকে স্কোর দুইশ ছাড়িয়েছে তাসকিনের ১৮ বলে ১৪ রানের কার্যকরী ব্যাটিংয়ে।  

১০ রানে তাকে সঙ্গ দেন তাইজুল। মঈন আলী বামহাতি স্পিনারকে তালুবন্দি করলে ২০৯ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ।  

ইংল্যান্ডের পেসার-স্পিনারদের নৈপুণ্যেই বাংলাদেশ খেই হারিয়েছে। ৩৪ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন মার্ক উড। মঈন আলী। ৩৫, ৩৭ ও ৪৭ রানে সম সংখ্যক উইকেট নিয়েছেন যথাক্রমে মঈন আলী, জোফরা আর্চার ও আদিল রশিদ। একটি করে উইকেট নিয়েছেন ক্রিস ওকস ও উইল জ্যাকস।    

নবম উইকেট পড়লেও স্কোর ২০০ ছাড়িয়েছে

১৮২ রানে অষ্টম উইকেট পড়লেও শেষ দিকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। বড় শটস খেলে স্কোর দুইশ ছাড়াতে অবদান রেখেছেন তিনি। দলীয় ২০৮ রানে তাকে গ্লাভসবন্দি করিয়েছেন আর্চার।  ফেরার আগে ব্যাটার হয়ে উঠা তাসকিন ১৮ বলে ১৪ রান করেছেন। তাতে ছিল ১ চার ও ১ ছয়।

মিরাজের বিদায়ে পড়লো অষ্টম উইকেট

বাজে শটে আফিফ হোসেনের উইকেট পতনের পর মিরাজও তেমন কিছু করতে পারলেন না। ভারত সিরিজে ত্রাতা হয়ে উঠা মিরাজ আর্চারের বলে উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। ১৯ বলে করেছেন ৭ রান।

বিপদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন আফিফ

শান্ত-মাহমুদউল্লাহর জুটি দারুণ ভাঙার পর বিপদে পড়ে যায় স্বাগতিক দল। নতুন নামা আফিফ হোসেন সেই বিপদ থেকে দলকে উদ্ধার করতে পারেননি। বরং অভিষিক্ত উইল জ্যাকসের বলে বাজে শটে ক্যাচ দিয়ে দলের বিপদ আরও বাড়িয়েছেন। ফেরার আগে ১২ বলে ৯ রান করেছেন।

শান্ত-মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে বিপদে বাংলাদেশ

লিটন, তামিম, মুশফিক, সাকিবদের বিদায়ের পর প্রান্ত আগলে শান্ত জুটি করে এগোচ্ছিলেন। মুশফিক-সাকিবের বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে যোগ করেন ৫৩ রান। মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো এই জুটি ভেঙেছেন আদিল রশিদ। বেশ কয়েকবার জীবন পাওয়া শান্তর ক্যাচ এবার আর মিস হয়নি। মিড উইকেটে ক্যাচটি হাতে জমিয়েছেন রয়। প্রথম ওয়ানডে ফিফটি পাওয়া শান্ত ৮২ বলে ৫৮ রানে ফিরেছেন। তার ইনিংসে ছিল ৬টি চার।      

শান্তর পরের ওভারে সাজঘরে ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহও। উডের বলে গ্লাভসবন্দি হয়েছেন তিনি। অবশ্য শুরুতে সফট সিগন্যাল ছিল নটআউট। পরে রিভিউ দেখার পরেই নিশ্চিত হয় বল মাহমুদউল্লাহর ব্যাট ছুঁয়ে গেছে। দ্রুত দুই ব্যাটার ফিরে যাওয়ায় চাপে পড়ে যায় স্বাগতিক দল। ফেরার আগে মাহমুদউল্লাহ ৪৮ বলে ৩১ রান করেছেন। তাতে ছিল ৩টি চার।  

ওয়ানডেতে প্রথম ফিফটি শান্তর

মুশফিকের পর পর সাকিবও দ্রুত ফিরলে কিছুটা চাপে পড়ে যায় স্বাগতিক দল। তবে প্রান্ত আগলে সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে অবদান রাখছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বিপিএলের দুর্দান্ত ফর্ম টেনে এনেছেন এই ম্যাচেও। ১৬তম ম্যাচে এসে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির দেখা পেয়েছেন। যদিও তাতে ভাগ্যের ছোঁয়া রয়েছে। জীবন পেয়েছেন বেশ কয়েকবার। 

মুশফিকের পর দ্রুত সাজঘরে সাকিব

মুশফিকের বিদায়ে গুরুত্বপূর্ণ জুটি ভাঙার পর শান্তর যোগ্য সঙ্গী হতে পারেননি সাকিব। মঈন আলীর স্পিনে পরাস্ত হয়ে দ্রুতই সাজঘরে ফিরেছেন। সুইপ করতে গিয়ে ৮ রানে বোল্ড হয়েছেন বামহাতি অলরাউন্ডার। তার ১২ বলের ইনিংসটি ছিল ১ চারে সাজানো।  

মুশফিকের বিদায়ে ভেঙেছে ৪৪ রানের জুটি

দুই ওপেনারের বিদায়ের পর দলকে বিপদ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন মুশফিক-শান্ত জুটি। ৪৪ রানও যোগ করেন তারা। ২০তম ওভারে এই জুটি ভেঙেছেন লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। 

এর আগে ক্যাচে জীবন পেলেও ২০তম ওভারে মুশফিকের আর শেষ রক্ষা হয়নি। স্লগ সুইপ খেলতে গেলে বল ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যায় বাতাসে। দৌড়ে এসে তা লুফে নেন উড। ফেরার আগে মুশফিক ৩৪ বলে ১৭ রান করেছেন। তাতে ছিল একটি ছয়।

জীবন পেয়েছেন মুশফিক-শান্ত

তামিম ইকবাল ভালো ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে দিলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। তার পর অবশ্য জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন মুশফিকুর রহিম-নাজমুল হোসেন শান্ত। 

১৭তম ওভারেই মুশফিক ফিরতে পারতেন। মঈন আলীর বলে উঠিয়ে মেরেছিলেন। বাউন্ডারি লাইনের কাছে থাকা ফিল সল্ট ক্যাচ নিলেও লাইন অতিক্রম করেছিলেন তিনি। পরে রিভিউ দেখেই নটআউট দেওয়া হয় তাকে। আদিল রশিদের বলে ১৮তম ওভারে শান্তরও ক্যাচ উঠেছিল। কিন্তু মিড উইকেটে জেসন রয়ের নেওয়া ক্যাচটি মাটিতে স্পর্শ করায় জীবন পান তিনি।

তামিমের বিদায়ে সাজঘরে দুই ওপেনার

ওপেনার লিটন বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে না পারলেও অধিনায়ক তামিম ইকবালের ব্যাটেই স্কোর পঞ্চাশ ছুঁয়েছে। তবে তিন পেসার নিয়ে সফরকারীদের আক্রমণাত্মক রণ কৌশলে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি তিনি। দুই পেসার ক্রিস ওকস ও জোফরা আর্চার ৯ ওভার শেষ করেছিলেন। আরেক পেসার মার্ক উড তার প্রথম ওভারটি করতে এসেই বোল্ড করেছেন তামিমকে। 

পাওয়ার প্লের দশম ওভারে উডের বাউন্স করা তৃতীয় বলটি খেলতে পারেননি তিনি। বল ব্যাটের কানায় লেগে স্টাম্পে আঘাত করেছে। ফেরার আগে ৩২ বলে ২৩ রান করেছেন তামিম। তার ইনিংসে ছিল ৪ চারে সাজানো।

জীবন পেয়েছেন শান্ত

লিটনের বিদায়ের পর নাজমুল হোসেন শান্তও দ্রুত ফিরে যেতে পারতেন। জোফরা আর্চারের অষ্টম ওভারের শেষ বলে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দিয়ে ছিয়েছিলেন। জেসন রয় ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও বলটা হাতে রাখতে পারেননি। একই ওভারের প্রথম বলে দারুণ চারে রানের খাতা খুলেছেন তিনি।  

ছক্কা মারার পরের বলেই আউট লিটন

তামিম স্বভাবসুলভ ব্যাটিংটা করে গেলেও লিটন খেলছিলেন ধীরস্থির ভাবে। পঞ্চম ওভারে আগ্রসী হতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন লিটন। ক্রিস ওকসের বলে লেগ বিফোরে সাজঘরে ফিরেছেন। অবশ্য তার আগের বলটিতে দৃষ্টিনন্দন পুলে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। পরের বলটির লাইন বুঝতে না পারায় পরাস্ত হয়েছেন। বল প্যাডে লাগার পর ওকস আবেদন করলে আম্পায়ার সঙ্গে সঙ্গে আঙুলও তুলে দিয়েছেন। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি। ফেরার আগে লিটন ১৫ বলে ৭ রান করেছেন।   

প্রথম ওভারেই ফিরতে পারতেন তামিম

শুরুর ওভারেই অধিনায়ক তামিম ইকবাল অল্পের জন্য জীবন পেয়েছেন। পঞ্চম বলটি ড্রাইভ করেছিলেন। কিন্তু ফলোথ্রুতে নিচুভাবে আসা কঠিন সুযোগটি হাতে জমাতে পারেননি ক্রিস ওকস।  

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ 

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শুরুতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন তামিম ইকবাল। ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার জানিয়েছেন, তিনিও টস জিতলে ব্যাটিং নিতেন।  

বাংলাদেশ আজ তিন স্পিনার ও দুই পেসার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে। বিপরীতে ইংল্যান্ড তিন পেসার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে। তবে তাদেরও তিন স্পিন বোলিং অপশন রয়েছে। সফরকারীদের দলে অভিষেক হয়েছে ব্যাটার উইল জ্যাকসের। 

সর্বশেষ ঘরের মাঠে খেলা ভারত সিরিজ থেকে তিনটি পরিবর্তন এসেছে। তামিম ইকবালের সঙ্গে ফিরেছেন তাইজুল ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। বাদ পড়েছেন ইয়াসির আলী, এবাদত হোসেন ও এনামুল হক। 

টেস্ট খেলুড়ে সবগুলো দেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতলেও ইংল্যান্ডকে কখনো হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে সুযোগ পেয়েও সেটি হাতছাড়া করেছে। সেবার হার দিয়ে শুরু হয়েছিল তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। মিরপুরে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফেরায় যদিও। তবে চট্টগ্রামে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে হেরে জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করে মাশরাফির দল। এবার সুযোগ সেই আক্ষেপ ঘোচানোর। 

বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান।

ইংল্যান্ড একাদশ: জেসন রয়, ফিল সল্ট, ডেভিড মালান, জেমস ভিন্স, জস বাটলার, উইলি জ্যাকস, মঈন আলী, ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ, জোফরা আর্চার ও মার্ক উড।