জাতীয় ৫ মার্চ, ২০২৩ ০৫:২৩

‘ ৩ বেলার বদলে এখন দুবেলা খাচ্ছি ’

ছবি - সংগৃহীত

ছবি - সংগৃহীত

তুষার আহম্মেদঃ বাজারে নিত্য পণ্যের আগুন দাম। হুড়হুড় করে বাড়ছে মাথাপিছু খরচ। ভর্তা-সবজি দিয়ে একবেলা ভাত খাওয়ায় খরচ ৭০ টাকা। কেউ কেউ ৩ বেলার বদলে এখন দুবেলা খাচ্ছে। এমনি চিত্র দেখা মিলেছে কারওয়ান বাজারের বেশ কিছু হোটেলে। 

রিপন মিয়া নামক এক ভ্যান চালক আমাদের কাগজকে বলেন, আগে ভাত, ডিম, ডাল খেলে ৩৫ টাকায় হয়ে যেত। এখন শুধু ডিম-ভাত খেতেই লাগে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। সঙ্গে যদি ভাজি ও ভর্তা নিই তাহলে খরচ পড়ে যায় ৭০/৭৫ টাকা। মাছ-মাংসের কথা তো বাদই দিলাম।

দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায় দিনের প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়া নিয়েই সংকটে পড়ে গেছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। ভ্যানচালক রিপন মিয়া তেমনই একজন।

হোটেলে থাকা কেউ কেউ দাবী করেন, মধ্যবিত্তের জীবনও দামি খাবার গুলোর বাইরে। স্বাদ থাকলেও এখন স্বাধ্য বলে জানালেন অনেকেই। 

রাজধানীর ফার্মগেট মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় আছেন রিকশাচালক রহমত আলী। তিনি বলেন, রিকশা চালানোর কারণে প্রতিদিন সকাল-দুপুর বাইরে খেতে হয়। এখন হোটেলে খাওয়া খরচ খুব বেড়ে গেছে। ৩ বেলার বদলে এখন দুবেলা খাচ্ছি । মাছ বা মাংস খাওয়ার কথা ভাবাই যায় না। নিয়মিত গরিবের হোটেলে খাই, তবুও সকালে একটা পরটার দামই লাগে ১০ টাকা। দুপুরে আগে ৩ প্লেট ভাত খাইতাম, এখন দুই প্লেট খাই। 

তিনি জানান, আমি ভাড়াতে রিকশা চালাই। কাজ শেষে মালিকেরে টাকাসহ রিকশা ফেরত দিতে হয়। খাবারের খরচ এত বাড়তি থাকলে আমরা চলমু ক্যামনে বলে হাউমাউ করে উঠেন তিনি। 

রাজধানীর পল্টন এলাকায় একটি হোটেলের মালিক আব্দুস সোবহানের সঙ্গে আলাপ হয় খাবারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে। তিনি বলেন, বাজারে এমন কিছু নেই যার দাম বাড়েনি। প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়তি। তাই আমরাও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য খাবারের দাম বাড়িয়েছি। আপনি গিয়ে দেখেন ব্রয়লার মুরগি দাম বাড়তি। ডিম ডজন বাড়তি। আমরা কী করব! না খেয়ে তো আর থেকতে পারি না। বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে আমাদের। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের হোটেল মালিক বাবু মিয়া জানান, মেসিয়ার গো খরচ বাড়তি দিয়া চালান লাগে। তাও একদিন আসে তো ২ দিন কামে পাইনা। তিনি জানান ,আগে মানুষ ৩০ টাকার মধ্যে দুপুরের খাবার খেতে পারত। এখন আর পারছে না। অনেকে এখন ভাত না খেয়ে সিঙ্গারা খায়, খরচ কমানোর জন্য।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে তুলনামূলক একটি ভালো মানের খাবারের হোটেলের ম্যানেজার মোতাহের মিয়া জানান, বাড়ার কারণে তাদের ক্রেতা আগের চেয়ে কমে গেছে। হোটেলে এসে মানুষ আগের চেয়ে কম খাচ্ছেন।

এ বিষয়ে হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, হোটেল পরিচালনার জন্য সব ধরনের কাঁচা মালের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, যে কারণে বাধ্য হয়ে সবাই হোটেলের খাবারের দাম বাড়িয়েছে। তবে দাম বাড়িয়ে কিন্তু হোটেল মালিকরা লাভ করতে পারছে না, তাদের বরং লস হয়েছে। কারণ হোটেলে খাবারের দাম বাড়ার কারণে ক্রেতা অনেকাংশেই কমে গেছে। আগের চেয়ে মানুষ হোটেলে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। 

একটু পিছন ফিরে দেখলে দেখা যায়, রিকশাচালক, সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক, বাসের হেলপার, নির্মাণ শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষজন খুব কষ্টে আছে। তারা হয় হোটেলে গিয়ে কম খাচ্ছে, নয়তো খাচ্ছেই না। এমনকি ভর্তা-সবজি দিয়ে একবেলা ভাত খেতেও তাদের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

আমাদের কাগজ/এমটি