ধর্ম ও জীবন ৬ মার্চ, ২০২৩ ১২:৪২

পবিত্র শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

ছবি - সংগৃহীত

ছবি - সংগৃহীত

আমাদের কাগজ ডেস্কঃ আল্লাহতায়ালা বান্দার জন্য বিশেষ বরকত রেখেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো- পবিত্র শাবান মাস। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন। আর এই মাসকে রমজানের প্রস্তুতিমূলক মাস বলা হয়। শাবান মাসের অন্যতম  একটি মর্যাদাপূর্ণ রাতের নাম শবে বরাত। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষায় যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত।

মহানবী (সা.) রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন। তিনি শাবান মাসে সর্বাধিক নফল রোজা ও নফল ইবাদত করতেন। শবে বরাত তথা নিসফ শাবান, অর্থাৎ মধ্য শাবান হলো রমজানের প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্ব। নবী (সা.) বলেছেন, যখন শাবান মাসের মধ্যতারিখ আসবে, তখন তোমরা রাতে ইবাদত করো এবং দিনে রোজা রাখো।

বাংলাদেশে মঙ্গলবার ( ৭ মার্চ) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। আর মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ , কোরআন তিলাওয়াত করেন এবং জিকিরে মগ্ন থাকবেন । অতীতের পাপ-অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করবেন দেশের সকল মুসল্লিরা।

শবে বরাতের মাহাত্ম্য
একাধিক সহিহ হাদিসে এ রাতের মর্যাদা প্রমাণিত। তাছাড়া এ রাতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে রয়েছে বিশিষ্ট ইমামগণের নির্ভরযোগ্য বহু বক্তব্য। শবে বরাতে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ নাজিল হয়। বিখ্যাত সাহাবি মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তাঁর সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)

বিদআত বর্জনীয়
শবে বরাতের বিশেষ কোনো আমলের কথা কোরআন-হাদিস ও সাহাবিদের জীবনীতে কোথাও নেই। এসব বিদআত বা নব-আবিষ্কৃত বিষয়। বিদআতের বিরুদ্ধে মহানবী (স.) অত্যন্ত কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো, (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত সব কিছুই বিদআত। প্রতিটি বিদআত ভ্রষ্টতা, আর প্রতিটি ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।’ (সহিহ মুসলিম: ১৫৩৫; নাসায়ি: ১৫৬০)

শবে বরাতের বিশুদ্ধ আমল
শবে বরাতে নবীজির আমল সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন—‘একবার রাসুলুল্লাহ (স.) রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো- তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না- হে আল্লাহর রাসুল। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।

তখন নবী (স.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ (স.) তখন ইরশাদ করলেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩/৩৮২-৩৮৩; তাবারানি: ১৯৪)

সুতরাং বিশেষ কোনো আমল কিংবা নির্দিষ্ট নিয়মে ও নির্দিষ্ট রাকাতে নামাজ পড়ার মতো মনগড়া ইবাদতের কারণে শবে বরাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হতে হবে।
 

আমাদের কাগজ/এমটি