জাতীয় ৭ মার্চ, ২০২৩ ১১:৩৬

মন্ত্রীদের দাবি বিএনপি-জামায়াত দায়ী: পঞ্চগড়ের আক্রান্তরা বললেন ‘হামলাকারীরা মন্ত্রীর পাশে’

আমাদের কাগজ রিপোর্ট: পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা ও আগুনের জন্য বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছেন মন্ত্রীরা। তবে গতকাল সোমবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে আক্রান্ত আহমদিয়া সম্প্রদায়ের তোপের মুখে পড়েন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তাঁরা মন্ত্রীকে বলেছেন, ‘হামলা ও অগ্নিসংযোগে যারা জড়িত তারা আপনার আশপাশেই আছে। তাদেরও গ্রেপ্তার করতে হবে।’

সাম্প্রদায়িক হামলায় বিএনপি জড়িত বলে ইঙ্গিত করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সরাসরিই বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেছেন।

পঞ্চগড়ের বোদা এলাকার আহমদিয়া অধ্যুষিত দুটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল শালশিড়ি গ্রামে যান স্থানীয় এমপি তথা রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনিও বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেছেন। রেলমন্ত্রী বলেছেন, ২০১৩, ২০১৪ সালেও বিএনপি-জামায়াত চক্র রাজনীতির নামে জ্বালাও-পোড়াও করেছিল। পুলিশের গাড়ি পুড়িয়েছিল। এখানেও তারা সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছে।

রেলমন্ত্রী দায়ী সবাইকে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে তবে এ সময় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন চিৎকার করে রেলমন্ত্রীকে বলতে থাকেন, এই এলাকার (শালশিড়ি) বাড়িঘরে যারা হামলা-অগ্নিসংযোগে নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা এখনও মন্ত্রীর আশপাশেই আছে। এই হামলাকারীদের বিচার করা না হলে আক্রন্তরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন।

সদুত্তর না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা রেলমন্ত্রীর সামনেই স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁকে ঘিরে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করেন নিরাপত্তা শঙ্কায়। এতে কিছুটা হট্টগোল হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রেলমন্ত্রী সেখান থেকে চলে যান।

স্থানীয়রা রেলমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা একজনকে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের প্রেস বিভাগের প্রধান আহমদ তবশির চৌধুরী বলেন, রেলমন্ত্রী যখন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছিলেন, ঠিক সেই সময়ে স্থানীয় আব্দুর রহমানের ছেলে মোতাহার হোসেনসহ হামলাকারীদের কয়েকজন আশপাশেই ঘুর ঘুর করছিল। তাদের দেখে আমাদের লোকজন একসঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে, তাদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ দেখা দেয়। তবে আমাদের মধ্য থেকে একজন ভালোভাবে হামলাকারীদের নাম ধরে বলতে পারলে ভালো হতো।

মন্ত্রীরা পঞ্চগড়ের ঘটনার জন্য যেমন বিরোধীদের দায়ী করেছেন, বিএনপিও পাল্টা আওয়ামী লীগকে দায়ী করছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ জড়িত। এর জবাবে গতকাল সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পঞ্চগড়ের ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারা উস্কানি দিয়েছে। এর মধ্যে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের (বিএনপি) নেতাও আছে। বিএনপির আন্দোলনে ভাটা নেমেছে। সেই কারণে তারা নাশকতার দিকে যাচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকার ক্ষমতায় আছে আত্মহত্যা করতে? সরকার তো দেশে শান্তি চাইবে ক্ষমতায় থাকতে। সরকার কেন গোলমাল লাগাবে! গোলমাল তো লাগাচ্ছে তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় যেতে। ক্ষমতায় থাকার জন্য কেউ গোলমাল করে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সরাসরিই বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেছেন। গতকাল তিনি সচিবালয়ে বলেছেন, জামায়াতের কর্মী ও বিএনপির নেতারা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসায় বাধা দেন। এক পর্যায়ে তাঁদের বাড়িঘরসহ অনুষ্ঠানেও আগুন দেওয়া হয়। সহিংসতায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একজন এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক নেতা নিহত হয়েছেন। সহিংসতার ঘটনায় সাতটি মামলা হয়েছে। ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বিএনপির নেতা ফজলে রাব্বী আছেন। তিনি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, অনুষ্ঠান বন্ধ করার জন্য এসেছিলেন। ঘটনার নেপথ্যে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিএনপি করে। পঞ্চগড়ে যারা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসায় হামলা চালিয়েছে, তারা কারা তা পুলিশের খাতায় আছে। তাদের বেশিরভাগই ছিল বিএনপির সমর্থক। তারাই সেখানে বিশৃঙ্খলা করেছে, হামলা চালিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেদের দায়টা এড়াতে ঘটনার দু’দিন পর বক্তব্য দিয়েছেন। আসলে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকরা দায়ী।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা পুরো দেশে নানাভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরির পাঁয়তারার মধ্যে আছে। পঞ্চগড়ের ঘটনাও বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়।

কাদিয়ানি হিসেবে পরিচিত আহমদিয়া বিশ্বাসের অনুসারীরা গত শুক্রবার পঞ্চগড়ে সালানা জলসা বা বার্ষিক সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন। এর বিরোধিতা করে কর্মসূচি দেয় চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলা শাখা, সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটিসহ কয়েকটি সংগঠন। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর এসব দল ও সংগঠনের ব্যানারে আহমদিয়াদের জলসা বন্ধের দাবিতে পঞ্চগড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করে। একই সময় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়।

স্বরাষ্ট্রমমন্ত্রী জানিয়েছেন, পঞ্চগড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। সহিংসতা মোকাবিলায় পুলিশের ব্যর্থতা আছে কিনা, তাও তদন্ত করা হচ্ছে। গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চরম ধৈর্যের সঙ্গে ঘটনাটি মোকাবিলা করেছে।

রেলমন্ত্রী গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে আক্রান্তদের সমবেদনা জানান। কম্বল, শাড়ি, লুঙ্গি, চাল ও নগদ টাকা উপহার দেন। আহমদ তবশির চৌধুরী বলেন, আমরা কারও সাহায্য-সহযোগিতা চাই না। শুধু নিরাপদে বসবাস করতে চাই। নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা চাই।

আহমদনগরে রেলমন্ত্রী বলেন, অনেককেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এর পেছনে জামায়াত-বিএনপির ইন্ধন রয়েছে। তবে যারাই জড়িত থাকুক, আইনের আওতায় আনা হবে। তারা তৌহিদি জনতার নাম ধরে, ধর্মের নাম করে এই কাজ করেছে। এ সময় পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মোহম্মদ আব্দুল আলীম, পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।সূত্র:সমকাল 

 

 

আমাদের কাগজ/টিআর