আমাদের কাগজ রিপোর্ট: ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার আমন্ত্রণে নৈশভোজে বিএনপির ৫ নেতার অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে দলটিতে চলছে নানা আলোচনা। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হাইকমিশনারের বারিধারার বাসভবনে যান দলের ওই নেতারা। নৈশভোজে সুনির্দিষ্ট এই ৫ নেতার অংশগ্রহণের পর বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নেতাদের মধ্যে নানামুখী আলোচনা ও প্রশ্ন বিনিময় শুরু হয়েছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বহুদিন পর হঠাৎ করে প্রকাশ্যে বিএনপির ৫ নেতাকে নিয়ে নৈশভোজ আয়োজন করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। পর্দার আড়ালে কয়েকজন নেতার সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক, আলোচনা, ভোজ হলেও এবারে খবরটি প্রকাশ্যে হওয়ায় বিএনপির মধ্যেও রহস্য তৈরি হয়েছে।
দায়িত্বশীল এক নেতার ভাষ্য, ‘যে ৫ নেতা নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন—তাদের কি হাইকমিশন থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, নাকি বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল হিসেবে তাদের পাঠানো হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল পাঠানো হলে তালিকায় আরও কয়েকজনের নাম থাকার সুযোগ ছিল’ বলে জানান এই দায়িত্বশীল।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘যদি ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকেই ৫ জনকে আমন্ত্রণ করা হয়ে থাকে, তাহলে এর পেছনে রাজনীতি আছে।’ যাদের নির্ধারণ করা হয়েছে—সেটা নিয়ে খোদ দলের উচ্চ পর্যায়েও আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নানা স্তরে খোঁজ খবর নেওয়া হয়। দলটির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের দাবি, ভারতীয় হাইকমিশনারের বাসভবনে যেসব নেতা অংশ নিয়েছেন, তাদের হাইকমিশনের পক্ষ থেকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়। মূলত আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ৬ জন নেতাকে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ছাড়া বাকি ৫ জন নেতা অংশগ্রহণ করেন নৈশভোজে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন—ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও শামা ওবায়েদ। ইকবাল হাসান মাহমুদ গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজে ব্যস্ত থাকায় যেতে পারেননি বলে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।
অংশগ্রহণকারী নেতারা অবশ্য নৈশভোজ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে সম্মত হননি। বিএনপির ফরেন রিলেশন্স কমিটি সদস্য শামা ওবায়েদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাইকমিশন থেকে আমাদের আমন্ত্রণ করা হয়েছিল, আমরা গিয়েছি। এর বেশি কোনও মন্তব্য করতে পারবো না।’
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আভাস মিলেছে, বৃহস্পতিবার রাতে দুই ঘণ্টাব্যাপী নৈশভোজের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে পরিষ্কার কোনও বার্তা মেলেনি। তবে স্থায়ী কমিটির আগামী বৈঠকে প্রসঙ্গটি ওঠার সুযোগ হলে কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা।
স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যের ভাষ্য—প্রথমত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা নতুন যোগদান করেছেন। এটি পরিচিতিমূলক নৈশভোজ। দ্বিতীয়ত, দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই বিষয়গুলোর মধ্যে যেসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের জনগণের মধ্যে আলোচনা রয়েছে, সে প্রসঙ্গগুলো উঠে এসেছে। একইসঙ্গে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টিও ছিল।
যদিও আলোচনায় অংশ নেওয়া একজন প্রভাবশালী সদস্যের দাবি, নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা, বা নেবে বা বিএনপির কী করা উচিত—এ প্রসঙ্গে হাইকমিশনারের পক্ষ থেকে কোনও বক্তব্য আসেনি। এছাড়া, দেশের চলমান পরিস্থিতি আলোচনায় জায়গা পেয়েছে।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘ভারতের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিএনপিও চায় সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। এভাবে প্রকাশ্যে বহুদিন আমন্ত্রণ করা হয়নি। এবারই প্রথম।’
কমিটির আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য উল্লেখ করেন, ‘যাদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে তারাই তো যাবে। এটা তো অস্বাভাবিক কিছু না। কাউকে আমেরিকা দূতাবাস থেকে, কাউকে চায়না অ্যাম্বাসি থেকে, কাউকে রাশিয়া দূতাবাস থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এগুলো ডিপ্লোমেটিক প্রসেস। যার যার নিজ দেশের পলিসি অনুযায়ী হয়ে থাকে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর এক সদস্য বলেন, ‘গত বছরের রমজানেও তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার আয়োজিত ইফতার পার্টিতেও কার্ড পাঠিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলে বিএনপি নেতাদের। ওই ইফতারের পর বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী (বর্তমানে যুক্তরাজ্যে কর্মরত)।
নৈশভোজের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ফরেন রিলেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ভারতীয় হাইকমিশনারের বাসায় পিওরলি ডিনার হয়েছে। ডিনারে ইন-ফরমাল কথা হয়। এটি যদি কোনও মিটিং হতো—তাহলে হয়তো আমি গণমাধ্যমে ব্রিফ করতাম। ফলে এই নৈশভোজ নিয়ে মন্তব্যের কিছু নেই।’
আমাদের কাগজ/টিআর