ধর্ম ডেস্ক: সুরা বাকারার ১৮৩ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَیْكُمُ الصِّیَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَۙ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল। এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে।
আজ শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে রমজান। রোজার প্রয়োজনীয় মাসলা-মাসায়েল জানা সবারই জরুরি। তবে রোজা নিয়ে এখনো অনেক মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে।
আসুন আমরা সেসব বিষয়ে জেনে নেই
১. সাহরি না খেলে রোজা হয় না
এটা ভুল ধারণা। সাহরি খাওয়া সুন্নত। সাহরি না খেতে পারলেও রোজা হবে।
২. ভুল করে খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙে যায়
এটাও ভুল ধারণা। ভুলে কোনো কিছু খেয়ে ফেললেও রোজার ক্ষতি হবে না।
৩. রোজা রেখে রক্ত দেওয়া-নেওয়া যায় না
এটাও ভুল ধারণা। রোজা রেখে কাউকে রক্ত দেওয়া যাবে, তদ্রূপ প্রয়োজন হলে নিজের শরীরে রোজা অবস্থায়ও রক্ত ঢুকানো যাবে।
৪. কানে বা চোখে ড্রপ দিলে, ইনজেকশন নিলে রোজা ভেঙে যায়
এগুলোও ভুল ধারণা। শুধুমাত্র খাবার গ্রহণ ও স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করলে রোজা ভেঙে যায়।
৫. ফজরের আজান পর্যন্ত সাহরি খাওয়া
বিশেষত গ্রামের অনেক মানুষ মনে করে ফজরের আজান পর্যন্ত সাহরি খাওয়া যায়। এটা ভুল ধারণা। সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার আগপর্যন্ত সাহরি খাওয়া যাবে, এরপর খাওয়া যাবে না। ফজরের আজান সাধারণত সাহরির সময় শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট পরে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে সতর্কতা জরুরি।
৬. কাজা ও কাফফারা সম্পর্কে অনেকের ভ্রান্ত ধারণা
রোজা রেখে কোনো ওজরের কারণে ভেঙে ফেললে তা পরে কাজা আদায় করতে হয়। কাজা হলো একটি রোজার পরিবর্তে একটি রোজা। কাজা রোজা পরবর্তীকালে সুবিধামতো সময়ে আদায় করা যায়, সব কাজা রোজা একত্রে আদায় করা জরুরি নয়।
রোজা রেখে ওজর ছাড়া কোনোরূপ শয়তানি ধোঁকায় বা নফসের তাড়নায় তা ভঙ্গ করলে এর জন্য কাজা ও কাফফারা উভয় আদায় করতে হয়। কাফফারা তিনভাবে আদায় করা যায়। একটি দাসমুক্ত করা, ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা ভালোভাবে তৃপ্তিসহকারে আহার করানো এবং ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা পালন করা।
৭. যে কোনো পরিস্থিতিতেই রোজা রাখতে হবে
এটাও ভুল ধারণা। ইসলামে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক (সাধারণত ১৫ বছর) এবং সুস্থ ব্যক্তির রোজা ফরজ করা হয়েছে। শিশু, অসুস্থ (শারীরিক এবং মানসিক), দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীর জন্য রোজা ফরজ নয়।
৮. দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায়
অনেক মানুষ মনে করেন পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায়। ব্যাপারটা তা নয়।
৯. কুরআন বখশে দিতে হয়
রমজান মাস কুরআনের মাস। এ মাসে বেশি বেশি কুরআন খতম করা হয়। কুরআন খতমের পর বখশে দেওয়াকে জরুরি মনে করা হয়। এটাও ভুল ধারণা। কুরআন পড়লেই আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যাবে, বখশে দেওয়ার কোনো দরকার নেই।
১০. ফরজ গোসল নিয়ে সাহরি খাওয়া যায় না
অনেকে মনে করেন, ফরজ গোসল নিয়ে সাহরি খাওয়া যায় না। এটাও ভুল ধারণা। তবে শরিয়তের নিয়ম হল গোসল ফরজ হওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে গোসল করে ফেলা। কিন্তু তার মানে এই না যে, গোসল ফরজ হয়ে গেলে সাহরি খাওয়া যাবে না। উদারহণত মনে করুন, সাহরির শেষ সময়ে গোসল ফরজ হয়েছে, এখন গোসল করতে গেলে সাহরির সময় শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই তখন সাহরি খেয়ে নিন আগে। তারপর গোসল করে ফজরের নামাজ পড়ুন।
১১. দিনের মাঝে রোজা ভাঙলে বাকি সময় খাওয়া যাবে
এটাও ভুল ধারণা। মনে করুন, কোনো নারী রোজা রেখেছেন, রোজা শুরু হওয়ার পর তার মাসিক শুরু হলো। তাহলে সারা দিন অর্থাৎ ইফতার পর্যন্ত কিছু না খাওয়া উচিত। এটা রোজার সম্মানের জন্য। পরে এ রোজা কাজা আদায় করে নেবেন।
আমাদেরকাগজ/এইচএম