আন্তর্জাতিক ২৮ মে, ২০২৩ ০৭:৪০

অঘোষিত সামরিক শাসনের অধীনে পাকিস্তান: ইমরান খান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ‘সেনা সমর্থিত’ সরকার কার্যত গৃহবন্দি করে রেখেছে। লাহোরের জামান পার্কে পুলিশ ঘেরা বাড়ি থেকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে তিনি বলেছেন, পাকিস্তান অঘোষিত সামরিক শাসনের অধীনে। গণতন্ত্রের প্রতি সব ধরনের উদ্যোগ হুমকির মুখে। এর ফলে সবকিছু উল্টে যেতে পারে।

গত বছর অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর সাবেক এই ক্রিকেট তারকা অবিরাম নতুন নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের তীব্র বিরোধিতা ও সমালোচনা শুরু করেন। উৎখাতের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়ী করেন। ৯ মে ইমরান খানকে গ্রেফতারের পর তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের কর্মী-সমর্থকরা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়। এরপর শুরু হয় দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের অভিযান।


ইমরান খান বলেন, মনে হচ্ছে তারা মনস্থির করে ফেলেছে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে আমাকে ক্ষমতায় বসতে দেওয়া হবে না। তারা আমাকে কারাগারে পাঠাবে অথবা নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করবে।


নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাসহ রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন ইমরান খান।

ক্ষমতা থেকে উৎখাতের জন্য শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রকেও দায়ী করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, সেনাবাহিনী তাকে উৎখাতের যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে ওয়াশিংটনের সমর্থনের রয়েছে। কিন্তু এখন তিনি ওয়াশিংটন ও পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে আহ্বান জানাচ্ছেন পাকিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সোচ্চার হওয়ার জন্য।

তার কথায়, যারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পক্ষে সোচ্চার তাদের কণ্ঠ শুনতে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করা ওয়াশিংটন বলছে, পাকিস্তানের রাজনীতি দেশটির জনগণের বিষয়।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেছেন, এখন পর্যন্ত সামরিক আদালতে বিচারের জন্য ৩৩ সন্দেহভাজনকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের মামলা নেই তারা জামিনে মুক্তি পাচ্ছে।

তার কথায়, আমরা অবিচার করছি না। এমন পরিস্থিতিতে আইনে এমনটিই হওয়া উচিত।

ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করছেন, পরিবারের সদস্যদের চাপ দেওয়া হচ্ছে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার জন্য। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পরিবারের নারী সদস্যদের হয়রানি করার অনুমতি নেই, যদি এমনটি ঘটে থাকে তাহলে ভুল।

পর্দার আড়ালে সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, ইমরানের দলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার নেতৃত্ব তাদের হাতে নেই। গত সপ্তাহে দলটির সিনিয়র কর্মকর্তারা একে একে দল ছাড়ার ঘোষণা দিতে শুরু করেন।

ইমরান খান এই দল ত্যাগকে ‘জোরপূর্বক বিচ্ছেদ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শুক্রবার এই পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। দেশজুড়ে সংবাদ সম্মেলন করে নেতারা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এত সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল যে টিভি চ্যানেলগুলো স্থান দিতে না পারে স্ক্রিন ভাগাভাগি করতে শুরু করে।

সাবেক প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী মুরাদ রাস চোখে কান্না নিয়ে বলেছেন, কখনও ভাবিনি এমন দিন আসবে।

অবশ্য দলটির নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান থেমে নেই। সাবেক অর্থমন্ত্রী হাম্মাদ আজহার বলেছেন, শুক্রবার তার বাড়িতে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়েছে।

সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল