প্রবাসের কথা ২ অক্টোবর, ২০১৯ ১২:৩৫

বিতর্কিত 'রাজা দরশন' বই নিয়ে যা লিখলেন সাবেক ছাত্রনেতা মিলন

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বর্তমান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য নুরুল আলম পাঠান মিলন তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে  আজ  ০১ অক্টোবর দুপুরে একটি পোস্ট দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক আবু রায়হান-এর লেখা ‘রাজা দরশন’ বইটি নিয়ে মতামত প্রকাশ করেছেন।  আমাদের কাগজ পাঠকদের জন্য সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

 'এক অদ্ভূত বই পাঠের অভিজ্ঞতা

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক আবু রায়হান-এর লেখা ‘রাজা দরশন’ বইটি নিয়ে বেশ কদিন ধরেই সমালোচনা চলছে। বইটি সংগ্রহ করে পড়া শেষ করলাম।

যেকোন বিষয় নিয়ে লেখার স্বাধীনতা একজন লেখকের রয়েছে। যেকোন ব্যক্তি বা রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়েও লেখক লিখবেন, এটাও স্বাভাবিক। যদি কোন লেখায় রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান থাকে তবেই সেটা আপত্তিকর ও বে-আইনী। যেকোন লেখক ও লেখা সম্পর্কে এটাই আমার প্রাথমিক মতামত।

আবু রায়হানের রাজা দরশন বইটির প্রথম গল্পটিই হলো রাজা দরশন।

গল্পের ভাষ্য এরকম, আবু রায়হান ওপি ওয়ান ভিসায় আমেরিকা যাবার অনুমতি পান। চিন্তিত, গিয়ে কী করবেন। একদিন ইত্তেফাকে আমেরিকায় গিয়ে চাকুরি পাবেন এমন বিজ্ঞাপন দেখে শুক্রবারে আগামসি লেনের এক বাসায় গেলেন। সেই বাসায় বয়স্ক এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হতেই তাকে জড়িয়ে ধরলেন। খুবই আন্তরিক কোলাকুলি। বিজ্ঞাপনদাতা মুরুব্বির ছেলে নামাজে। ফলে মুরুব্বি নানান কথার ফাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আবু রায়হান তাকে চিনেছেন কি-না! না-সূচক জবাব পেয়ে পূনরায় জানতে চাইলেন, সত্যিই চিনতে পারছে কি-না! এবার নিজেই পরিচয় দিলেন। তিনি খন্দকার মোশতাক আহমদ। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। এই প্রেক্ষাপটে লেখক লিখেছেন, 'যা পেয়েছি তাও কম কিছু নয়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট। সবার ভাগ্যে রাজা দরশন হয় নাকি!' লেখকের আবেগ যেন বাধভাঙ্গা!

আবু রায়হান মুগ্ধ হলেন। জীবনে প্রথম রাজা দরশন করে সেই রাজাকে মহামানব বানিয়েই রাজা দরশন শিরোনামে এই গল্প লিখেছেন।

লেখক এখানেই থামেন নি। এই গল্পকে জায়েজ করতে রাজা দরশনের পরের গল্প শিরোনামায় আরেকটি গল্প লিখেছেন। বইয়ের দ্বিতীয় গল্পে।

সেখানকার বয়ান এরকম, ইতিপূর্বে সে কয়েকটি বই লিখেছে। এই সুবাদে সাংবাদিক ও সাপ্তাহিক বাঙ্গালির সম্পাদক কৌশিক আহমেদের সঙ্গে সুসম্পর্ক। রাজা দরশন গল্পটি একবার সাংবাদিককে দিলেন তার পত্রিকায় ছাপাতে। কিন্তু সাংবাদিক আপত্তি করলেন। বঙ্গবন্ধুর খুনির গুণকীর্তন করে মহামানব বানানো লেখা ছাপাবেন না। সাংবাদিক হাসান ফেরদৌসও রাজা দরশন একবার দর্শন করেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, ছাপেননি পত্রিকায়। এতে আবু রায়হান বিরক্ত। কোন যুক্তি খুঁজে পান নি। কেন সাংবাদিকরা তার লেখাটি ছাপেন নি। খন্দকার মোশতাকের গুণমুগ্ধ হওয়াতে দোষ কী ও মোশতাক আদৌ খুনি কি-না, এই ব্যাপারেও সে প্রশ্ন তুলেছেন। ইতিহাসের নির্মোহতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এই বিষয়ে আবু রায়হান লিখেছেন, 'লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত দুজন সিনিয়র মানুষের এরূপ প্রতিক্রিয়া দেখে আমি গল্পটা নিয়ে নতুন করে ভেবেছি। ভেবে ভেবে কোনও অসঙ্গতি খুজে পাইনি। রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত একজন মানুষের স্নেহশীল হতে নিষেধ আছে কি? অবশ্যই নেই।' যেন গোলাম মাওলা রনির কথার পুনরুক্তি করলেন!

আবু রায়হান সাহেব খোন্দকার মোশতাকের গুণমুগ্ধ হতেই পারেন। এবং মোশতাক বঙ্গবন্ধুর খুনি, শুধু এই কারনেই হতে পারেন। কারণ খুনিদের সকল শুভাকাঙ্ক্ষীরাই এই যুক্তিতে খুনিদের সমর্থন করে। এটাকে রাজনৈতিক শত্রুতা হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।

আবু রায়হানের পক্ষে এই যুক্তির সমর্থন পাওয়া যায় তৃতীয় গল্পে। বাংলাদেশের জামাতের অনুসারীদের আমেরিকার সংগঠন 'মুসলিম উম্মাহ অফ নর্থ আমেরিকা'র সদস্য হওয়ার বয়ানে। এই পর্যন্ত সরলপথেই চলছিল।

কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। তৃতীয় গল্পেই নিজেকে কিঞ্চিৎমাত্রায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী দাবী করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের বলেও জানান দিয়েছেন। জামাতের সংগঠনে যোগ দিয়ে, ভুল বুঝতে পেরে সরে আসার কথাও বলছেন।

মোশতাকের গুণমুগ্ধ।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারী।
জামাতের সংগঠনের সদস্য ও ভুল স্বীকার করে সরে আসা।
কোনটা সত্য ?

জামাত থেকে সরে এলেও মোশতাকের বিষয়ে অবস্থান পরিস্কার। মোশতাক মহান রাজা!

এমন বই ও লেখক দ্বিতীয় কাউকে পাইনি। যিনি বঙ্গবন্ধু ও মোশতাককে একসঙ্গে অন্তরে লালন করেন! গল্পও লিখেন! বইও বের করেন!

আগ্রহীরা বইটি পড়ে ব্যাপক বিনোদিত হতে পারেন।

এটি একটি স্মৃতিচারণামূলক গল্পের বই।
প্রকাশকনা প্রতিষ্ঠানঃ সময় প্রকাশন
প্রকাশক ফরিদ আহমেদ
প্রকাশকালঃ ২০১৪ সাল
মূল্য: ১১৯ টাকা

বিদ্র: কদিন আগে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু বইমেলার আয়োজক কমিটির আহবায়ক ছিলেন এই বইয়ের লেখক আবু রায়হান।'