আমাদের কাগজ রিপোর্ট: তারুণ্যের সমাবেশ ঘিরে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বিএনপির সরকার পতনের চলমান আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মের সম্পৃক্ততা বাড়াতে এ সমাবেশ করছে দলটির তিন অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, সেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। সমাবেশ থেকে নতুন ভোটার ও তরুণ প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেশনা আসতে পারে বলে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

শনিবার (২২ জুলাই) দুপুর ২টায় কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে তারুণ্যের সমাবেশ শুরু হয়। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করছে বিএনপি। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই ঢাকার তারুণ্যের সমাবেশ ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশেপাশের এলাকায় নেতাকর্মীদের ঢল নামে।

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া প্রধান বক্তা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। সমাবেশ সঞ্চালনায় থাকবেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিল্টন, সেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।

ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ ১১ দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকার এ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে ৬ শহরে তারুণ্যের সমাবেশ। একই দাবিতে এরই মধ্যে পাঁচটি সমাবেশ করা হয়েছে। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজকের শেষ সমাবেশে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের ভোটাধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং স্বৈরাচারকে রুখে দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে।

ঢাকার তারুণ্যের সমাবেশ সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় আয়োজক সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের সমন্বয়ে এ সমাবেশ হবে। এটি সফলের লক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে রাজধানীর নয়াপল্টন, কাকরাইলে লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি।

দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল শুক্রবার রাত থেকে ঢাকার আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। শনিবার ভোর থেকে বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন।

নতুন ভোটার আর তরুণদের কাছে টানতে জুন মাসের প্রথমদিকে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। এরমধ্যে গত ১৪ জুন চট্টগ্রাম, ১৯ জুন বগুড়া, ২৪ জুন বরিশাল, ৯ জুলাই সিলেট ও ১৭ জুলাই খুলনায় ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ হয়েছে। আজ ২২ জুলাই ঢাকায় ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করার মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শেষ হবে।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার টানা প্রায় ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। ক্ষমতাসীনরা দেশের বিভিন্ন খাতে তাদের দর্শন প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক ‘পরিবর্তন ও দলীয়করণ’ করেছে। তারা মনে করে, স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধে শুধু আওয়ামী লীগেরই অবদান ছিল। অথচ আরও যাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল, তাদের উপেক্ষা ও অবহেলা করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ‘ইতিহাস বিকৃতি’ ঘটানো হয়েছে। গত প্রায় ১৫ বছরে দেশের প্রায় পৌনে ৫ কোটি নতুন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ক্ষমতাসীনদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করতে পারেনি। রাজপথে হামলা-মামলার শিকার হয়েছে অনেকেই। এ সরকারের বিরুদ্ধে সব শ্রেণিপেশার মানুষের পাশাপাশি তরুণ সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাই তরুণদের মাঝে দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেম তৈরির লক্ষ্যে এ সমাবেশ হচ্ছে।

তারুণ্যের এ সমাবেশে বিএনপির নতুন কর্মসূচি আসবে বলেও জানা গেছে। দলটি ফের শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে। সেক্ষেত্রে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশের কথা ভাবছে বিএনপি। দলটি আরও কিছুদিন গতানুগতিক কর্মসূচি দিয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে এগোতে চায়। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এবার বিএনপি ঢাকাকে টার্গেট করেই এগোচ্ছে।

আমাদের কাগজ/টিআর