??????? ৬ আগস্ট, ২০২৩ ১১:২০

ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতি, হাসপাতালের বারান্দায়ও জায়গা নেই 

ছবি - সংগৃহীত

ছবি - সংগৃহীত

আমাদের কাগজ ডেস্ক: সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দিন দিন যেন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। ইতোমধ্যে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সারাদেশে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। এ সময়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৩০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ২৪১ জনই ঢাকার বাসিন্দা।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ ব্যাপক আকারে বেড়েছে। বিছানা, মেঝে, বারান্দা কোথাও জায়গা মিলছে না। এতে চিকিৎসকদের যেমন হিমশিম খেতে হচ্ছে, তেমনি রোগীরাও পড়ছেন নানা ভোগান্তি আর বিড়ম্বনায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর ৫ আগস্টের পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩ হাজার ৯৬৮ জন। এরমধ্যে রাজধানীর ৩৪ হাজার ৫২৩ জন এবং রাধানীর বাইরের ২৯ হাজার ৪৪৫ জন। 

মুগদা মেডিকেল, ঢাকা মেডিকেলসহ রাজধানী বেশ কিছু হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, অতিরিক্তি রোগীর কারণে চিকিৎসক-নার্স এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালে কোনো শয্যা খালি নেই। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে পা ফেলবার জায়গা নেই। ওয়ার্ডের বারান্দা, করিডোর, সিঁড়ির নিচে কোথাও খালি জায়গা নেই। এমন চিত্র দেশের অনেক হাপাতালের। এতে রোগীরা পড়ছেন নানা ভোগান্তিতে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৮ বছরের মেয়েকে নিয়ে মুগদা হাসপাতালে আসেন মানিকগঞ্চের মনু মিয়া। তিনি বলেন, হাসপাতালে কোনো বেড খালি নেই। মেঝেতেও জায়গা নেই। লিফটের পাশে একটু জায়গা পেয়েছি। অনেকেই জায়গা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

স্ত্রী জাহানারাকে নিয়ে কুমিল্লা থেকে ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, টানা কয়েকদিন জাহানারার জ্বর থাকায় তাকে কুমিল্লার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে পরীক্ষার পর জানতে পারি তার ডেঙ্গু হয়েছে। সেখানে একদিন চিকিৎসার পর অবনতি হলে ডাক্তার ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলে এসে আরও বিপদে পড়লাম। বেডের জন্য অনেক চেষ্টা করলাম, কিন্তু পেলাম না। সিঁড়ির পাশে একটু জায়গা পেয়েছি। হাসপাতালে এতো রোগী দেখে আমিও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।

চিকিৎসা খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারাদেশেই ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বিশেষায়িত চিকিৎসা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত নেই। ফলে রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু আরও প্রাণঘাতী হয়ে ওঠতে পারে। অন্যদিকে, উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেকেই ঢাকার আসছেন। কিন্তু অতিরিক্ত রোগীর কারণে ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও জায়গা নেই। এতে, চিকিৎসকদের যেমন হিমশিম খেতে হচ্ছে, তেমনি রোগীরাও পড়ছেন নানা ভোগান্তি আর বিড়ম্বনায়।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এতদিন রোগীর সংখ্যা রাজধানীতে বেশি ছিল। এখন গ্রামেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরে স্বাস্থ্য অবকাঠামো খুব একটা সাজানো না থাকলেও এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু গ্রামে ভালো অবকাঠামো থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জরুরি ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে। এমন বাস্তবতায় সামনের দিনগুলোয় অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু এখন সিজনাল নেই, সারা বছরই হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে এটা বাড়ছে। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ জুন মাস থেকে শুরু হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর মে মাস থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। একই সঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তাহলে হয়তো রক্ষা পাব, না হলে ডেঙ্গু এবার মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বছরব্যাপী নানা উদ্যোগ নিলেও কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর চৌধুরী বলছেন, মশা নিধনে শুধু জেল-জরিমানা আর জনসচেনতা বাড়িয়ে কাজ হবে না। সঠিকভাবে জরিপ চালিয়ে দক্ষ জনবল দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

আমাদেরকাগজ/এমটি