??????? ২১ আগস্ট, ২০২৩ ০২:২৮

কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বেশি বিনিয়োগ, অতঃপর মাথায় হাত  

ছবি - সংগৃহীত

ছবি - সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদনঃ কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন কারই বা না থাকে। তা যদি হয় ঘরে বসে তাহলে তো আর কথাই থাকে না। এবার ঘটল এমনি এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। যার ফলে স্বপ্ন বলি হয়েছে প্রায় সাড়ে লাখ মানুষের। যার মধ্যে নানা শ্রেনীর মানুষ রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। 

বলছি সম্প্রতি পরিশ্রম ছাড়া ঘরে বসে বিনিয়োগ করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে গ্রাহকের প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতিষ্ঠান মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ (এমটিএফই) এর কথা। জানা যায়, ঘরে বসে অনলাইন ট্রেডিংয়ের কথা বলে প্রতিষ্ঠানটি তাদের গ্রাহকদের লাভের গুড় তো দেয়নি বরং আরও ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।

এর আগে সিস্টেম আপগ্রেডের কথা বলে গ্রাহকদের টাকা উত্তোলন সেবা বন্ধ করে এমটিএফই। ফলে অনেকেই অপেক্ষায় ছিলেন যে সিস্টেম আপগ্রেড হওয়ার পর টাকা তুলবেন। শেষ এমন ফাঁদ পাতে গত ৭ আগস্ট। এর পরই গত (বৃহস্পতিবার) রাতে হুট করে প্রায় সব গ্রাহকের ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট ঋণাত্মক দেখানো শুরু করে অ্যাপটি। 

এদিকে উদেশ্য প্রণীত এই প্রতিষ্ঠানটি উল্টো দাবি জানান। এতে তারা বলেন, তাদের ব্যবসায় লোকসান হয়েছে। এজন্য উল্টো গ্রাহকদের কাছ থেকেই তারা টাকা পাবে।

জানা গেছে, কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এমটিএফই বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে ২০২১ সালে। তিন বছরে এমটিএফইতে শুধু বাংলাদেশ থেকেই ৪২ লাখ মানুষ যুক্ত হয়েছেন। প্রাথমিক অবস্থায় এমটিএফই অ্যাপে যুক্ত প্রত্যেকেই ৬১, ২০১, ৫০১, ৯০১ ও ২ হাজার ডলার ডিপোজিট করেন। বেশি টাকা আয় করতে কেউ কেউ ৫ হাজার ডলারের বেশিও ইনভেস্ট করেছেন। এর মধ্যে কেউ জমানো টাকা, কেউবা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আবার কেউ জমি বন্ধক রেখে বিনিয়োগ করেছিলেন। বর্তমানে তারা সবাই নিঃস্ব।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগ) রেজাউল মাসুদ বলেন, আমরা এর আগেও এ ধরনের অ্যাপসের বিরুদ্ধে অনেকবার অভিযান পরিচালনা করেছি। এমটিএফই’র বিষয়ে নজরদারি চলছে। বাংলাদেশে এর যারা রিপ্রেজেন্টটিভ বা মার্কেটিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব। এ ছাড়া কেউ যদি অভিযোগ দেন, সে বিষয়েও আমরা ব্যবস্থা নেব। এমটিএফই একটি ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম চক্র। তাদের কার্যক্রম ছিল সম্পূর্ণ বায়বীয়।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ভুক্তভোগী বলেন, লাভের আশায় ধার করে টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। কিছুদিন তারা ওই টাকার উপর লাভও দিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে অ্যাপটি থেকে টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। এখন শুনছি তারা টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। এখন কীভাবে ধারের টাকা পরিশোধ করব। তিনি বলেন, শুধু যে আমি এমন ফাঁদে পা দিয়েছি এমনটি নয় , আমার দেখা এমন অনেক মানুষ এতে বিনিয়োগ করে আজ প্রায় নিঃস্ব। দেনার দায়ে মাথায় হাত আমাদের। 


এমটিএফই’র বেশ কয়েকজন গ্রাহক জানান, অ্যাপটিতে কেউ ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন তাকে প্রায় ১৩ ডলার লাভ দেওয়া হতো। তবে এত অল্প বিনিয়োগে তো বড় লাভ আসবে না। সেজন্য অনেকে ৫ হাজার, ১০ হাজার, এমনকি ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগ যত বেশি, লাভও তত বেশি ছিল। 

কোম্পানিটি গ্রাহকদের বলতো, ডলারগুলো দিয়ে তারা ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবসা করছে এবং সেখান থেকেই গ্রাহকদের লভ্যাংশ দিচ্ছে। গ্রাহকরা সেটাই বিশ্বাস করে বিনাপরিশ্রমে লাভের আশায় বিনিয়োগ করতো। কিন্তু তারা কখনও ভাবেননি যে প্রতিষ্ঠানটি এভাবে সবার টাকা মেরে দিয়ে হাওয়া হয়ে যাবে। 

এমটিএফই’র ফাঁদে পড়ে শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও প্রতারিত হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রতারিতদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ এবং বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী এবং সাংবাদিকসহ অন্যান্য পেশার মানুষও রয়েছেন।

এদিকে বিশেষজ্ঞরাও বলছেন সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার কথা।

আমাদেরকাগজ/এমটি