অর্থ ও বাণিজ্য ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:৩৪

সরকারের নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রির কথা থাকলেও মানছেন ব্যাবসায়ীরা

আমাদের কাগজ ডেস্ক : লাগামহীনদামে এখনও বিক্রি হয়ে নিত্যপণ্য। বাজার দর লাগাম টানতে সরকার তিনটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেই অনুযায়ী বিক্রি সেবা পাচ্ছে না বলে দাবি ক্রেতাদের। ব্যাবসায়ীরা কেউই মানছে না সরকার নির্ধারিত দাম। 

গত (বৃহস্পতিবার) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আলু, ডিম ও দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু বাজারে দর কোনোটির ক্ষেত্রে কার্যকর হয়নি। পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হলেও বাজারে গিয়ে এর সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা। 

সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী প্রতি কেজি আলু খুচরা বাজারে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা দরে।  

অন্যদিকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রতি মাসে রান্নার জ্বালানি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ধারণ করলেও তা খুচরা বাজারে কার্যকর হচ্ছে না। 

রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। এ দর তিন দিন আগের তুলনায় কেজিতে প্রায় ৫ টাকা কম। তবে নির্ধারিত দরের চেয়ে ১০ থেকে ১৯ টাকা বেশি।

প্রতি পিচ ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ টাকা ও হালি ৪৮ টাকা। যা বাজারদরের চেয়ে সামান্য কম। সেই দরও কার্যকর হয়নি। নিজেদের নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। 

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তালিকা বলছে, প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে।

যদিও দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। তবে বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা নির্ধারিত দরের চেয়ে ২১ থেকে ২৫ টাকা বেশি।

কোন কোন ব্যাবসায়ীরা বলছে, সরকারের নির্ধারিত দামে পণ্যে বিক্রি করে লস করতে চাচ্ছেন না তারা। 

এদিকে লাগামহীন এই পরিস্থিতির কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ায় সরকার চিন্তিত। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, নতুন ফসল উঠলে এবং সরবরাহ বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।

উল্লেখ্য, দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে শুরু করে। এরপর আর এর লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। 

একটু ফিরে তাকালে দাম বাড়ার আরেক কারণ হিসেবে চোখে পড়বে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ দিয়ে। এতে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরবরাহ সংকট, মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, দেশে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর কারণে উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। এতে লাফিয়ে লাফিয়ে পণ্যের দাম বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ১০ সেপ্টেম্বর জানায়, গত আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সরকার নির্ধারিত দাম না মানলে এটা করে লাভ কী এমন প্রশ্নে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, ‘বাজারদর প্রত্যাশিত পর্যায়ে আনতে আমরা সারা দেশে অভিযান চালাচ্ছি। আমাদের যা যা করা দরকার, তা করব।’ 

এদিকে দর কার্যকর না হওয়ার পেছনে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় কোম্পানি, উৎপাদক অথবা আমদানি পর্যায়ে দর কার্যকর করতে না পারা; পাইকারি বাজার ও খুচরা পর্যায়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি না থাকা; চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য না থাকা এবং পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে তদারকি না করা।

আমাদেরকাগজ/এমটি