মুক্তমত ২ আগস্ট, ২০১৯ ০৭:০৩

"নোবেল ফোবেলকে গুরুত্ব দেয়ার দরকার নাই"

শওগাত আলী সাগর ।। 

নোবলেকে নিয়ে আমার কখনোই কোনো আগ্রহ ছিলো না। এখনো নেই। ফলে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে ছেলেটা কি বলেছে, তা নিয়েও আলোচনায় আমার উৎসাহ নেই। সত্যি বলতে কি, নোবেলকে নিয়ে বিতর্ক করাটা আমার কাছে একেবারেই গুরুত্বহীন মনে হচ্ছে। তার চেয়ে বরং ডেঙ্গু নিয়ে, ডেঙ্গুতে মানুষের দুর্ভোগের দিকে নজর রাখাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নোবেল বিতর্ক কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমাদের মনোযোগকে অন্যদিকে টেনে নেবে, অপ্রয়োজনীয় কাজে আমাদের শক্তিক্ষয় ঘটাবে। 

গুজব, গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনি থেকে এক প্রিয়া সাহাই কিন্তু আমাদের মনোযোগটা একটানে সরিয়ে দিয়েছিলো। এখন কিন্তু প্রিয়া সাহা নিয়ে কারো আর আগ্রহ নেই। কিন্তু গণপিটুনি আর গুজব নিয়ে মানুষের মনের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়াটা তৈরি হচ্ছিলো, প্রিয়া সেটি তার নিজের দিকে টেনে নিয়েছিলো। 

ডেঙ্গুর অব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, হচ্ছে, নোবেল অত্যন্ত সফলতার সাথে সেই ক্ষোভটা তার নিজের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারবেন। ফলে আপাতত ডেঙ্গুর বিষয়টা থেকে আমরাও অন্যদিকে সরে যেতে থাকবে। 
নোবেল জাতীয় সঙ্গীতকে অবমাননা করলে আমরা কি চুপ করে থাকবো? গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বটে এটা। নোবেল নামের একজন শিল্পী গান গাইতে গিয়ে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে তরল মন্তব্য করলেই জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা হয়ে যাবে? জাতীয় সঙ্গীতের অবস্থান নিশ্চয় এতোটা ঠুনকো নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও তো কতো মানুষ কতো কথা বলে, বলেছে। তাতে কি তাদের সম্মান, ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে গেছে? বিষয়গুলো এতো সহজ সরল নয়। সহজ সরল নয় বলেই নোবেলের কথাকে আমি পাত্তা দিতে রাজি না। 

আমি বরং ডেঙ্গুর দিকেই মনোযোগ রাখতে চাই। শুরু থেকেই তো ডেঙ্গুর অস্তিত্বকে অস্বীকার করার চেষ্টা চলেছে। দুই মেয়র, স্বাস্থ্যমন্ত্রী -প্রত্যেকেই তো ডেঙ্গু ইস্যূতে অবমাননাকর কথাবার্তা বলেছে। মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে, মৃত্যু নিয়ে এরা তামাশা করেছে। অথচ এদের ব্যর্থতার কারণেই, অব্যবস্থাপনার কারণে, দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু মহামারীর আকার ধারন করেছে। অথচ তারা অবলীলায় সব অস্বীকার করে গেছে। আপনারা সবাই মিলে প্রবলভাবে নয়েজ তৈরি না করলে- দেশে যে ডেঙ্গু আছে, এটা সরকার, রাষ্ট্র, রাজনীতিকরা স্বীকারই করতো না।

তাই বলি, নোবেল ফোবেলকে গুরুত্ব দেয়ার দরকার নাই। আমার স্বজন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে ছটফট করছে, আমার স্বজন মরে যাচ্ছে, আমার স্বজন হাসপাতালে জায়গা পাচ্ছে না। এগুলো নিয়ে বরং আমরা আলাপে উচ্চকণ্ঠ হই। সরকারি অবহেলায় মানুষের মৃত্যুর বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হই। রক্তে কেনা জাতীয় সঙ্গীত কোনো অর্বাচীনের তরল মন্তব্যে খানখান হয়ে ভেঙ্গে পরবে- এমন ঠুনকো আমাদের জাতীয় পতাকা বা জাতীয় সঙ্গীত নয়।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)  সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন