আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনে হামাসের হাতে আটক থাকা জিম্মিদের মুক্তি দিতে যুক্তবিরতির একটি চুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েল। তবে এই চুক্তিতে ঠিক কী আছে, কীভাবে সমঝোতা হয়েছে এবং এর ভবিষ্যৎই বা কী? এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান।
গাজায় জিম্মি থাকা ৫০ নারী ও শিশুকে মুক্ত করার বিনিময়ে চারদিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। প্রতি ১০ জন অতিরিক্ত জিম্মি মুক্তির জন্য যুদ্ধবিরতি একদিন করে বাড়ানো হবে। মার্কিন সমর্থন এবং কাতারের মধ্যস্থতায় এই সমঝোতা হয়েছে। এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যে ৫০ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে তাদের মধ্যে চার বছর বয়সী এক শিশুসহ তিন মার্কিন নাগরিক রয়েছে।
এদিকে হামাস বলছে, ৫০ জিম্মির বিনিময়ে কারাবন্দি ১৫০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। তাদের সবাই নারী ও শিশু। সেই সাথে শতাধিক ত্রাণবাহী ট্রাককে রাফাহ সীমান্ত থেকে গাজায় আসতে দিতে হবে।
এই চারদিন দক্ষিণ গাজায় বিমান হামলা বন্ধ থাকবে এবং উত্তরে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত হামলা বন্ধ থাকবে। যুদ্ধবিরতি চলাকালীন ইসরায়েলি সামরিক যান গাজায় প্রবেশ করবে না। এ ছাড়া ইসরায়েলি সেনারা গাজার কোনো বেসামরিক নাগরিককে আটক করতে পারবে না।
হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে অভ্যন্তরীণভাবে তীব্র চাপের মধ্যে পড়েছে ইসরায়েল সরকার। তেল আবিবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনে এই নিয়ে কয়েক দফা বিক্ষোভ হয়েছে। গত সোমবার রাতে জিম্মিদের স্বজনদের নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
গাজায় চলমান মানবিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় গাজার ১৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খাবার, পানি, ওষুধ, জ্বালানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১০টি চালু আছে।
এদিকে হামাস প্রতিনিয়ত যুদ্ধক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। দক্ষিণ গাজাসহ উত্তর গাজার বিশাল অংশ এরই মধ্যে দখল করে ফেলেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি, হামাসের ২৪টি যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে ১০টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে তাদের নেতৃত্ব গাজার দক্ষিণ প্রান্তে স্থানান্তরিত হয়েছে।
হামাস চায় আরও কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে যুদ্ধবিরতির সময় বাড়াতে। তবে ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বাস্তবায়নে যুদ্ধে ফিরে আসতে চাইবে। ইসরায়েলের যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসার আরও বড় উদ্দেশ্য রয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এখনও গাজার উত্তরাঞ্চল পুরোপুরি দখল করতে পারেনি। যদিও ইসরায়েলি সেনারা হামাসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত জাবালিো ঘিরে ফেলেছে।
ইসরায়েলি কমান্ডাররা গাজার দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে খান ইউনিস শহরকে টার্গেট করে আছে। তাদের ধারণা, হামাসের হাতে জিম্মিরা সেখানে থাকতে পারেন। তবে আমেরিকা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বেসামরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে গাজার দক্ষিণে স্থল অভিযান সমর্থন করা হবে না।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধ পুনরায় শুরু হবে। মন্ত্রিসভাকে তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি শেষে ইসরায়েল থেমে থাকবে না।
আমাদেরকাগজ / এইচকে