নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশাল থানার কায়েৎটুলি পুলিশ ফাঁড়িতে মাদক বহনের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক ও ফাঁড়িতে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। মাদকসহ আটকের পর মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো সেই আসামি ফারুক হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় তার স্ত্রী ইমা আক্তার হ্যাপির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে একটি লিখিত প্রতিবাদ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।
বিপিএল টি২০ - ২০২৪
রংপুর রাইডার্স: ১৬২/৭ (২০ ওভার)
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ৮৫/১০ (১৬.৫ ওভার)
ফল: রংপুর রাইডার্স ৭৭ রানে জয়ী।
বিজ্ঞাপন
গণমাধ্যমে আসামি মৃত ফারুক হোসেনের স্ত্রী ইমা আক্তার হ্যাপি বলেন, কায়েৎটুলি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও উপপরিদর্শক (এসআই) ইমদাদুল হকসহ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা মিলে তার স্বামী ফারুক হোসেনকে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তার কাছে টাকা দাবি করেন। ফারুক টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন এবং হাতকড়া পরিয়ে ফাঁড়িতে বসিয়ে রাখা হয়।
স্বামীর আটকের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ফাঁড়িতে গেলে ফাঁড়ির পুলিশ প্রথমে ইমার কাছে এক লাখ ও পরে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু ইমা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য এসআই ইমদাদসহ পুলিশের হাতে-পায়ে ধরে অনুরোধ করেন। স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে টাকা দিতে না পারায় তার বিনিময়ে এসআই ইমদাদুলসহ ফাঁড়ির পুলিশরা তাকে কুপ্রস্তাব দেন। তাদের কুপ্রস্তাবে রাজি হলে ফারুককে তারা ছেড়ে দেবেন বলে জানান।
ইমা আক্তারের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপি বলছে, ঘটনার প্রকৃত সত্য হচ্ছে, গত ১২ জানুয়ারি বংশাল থানার নাজিমউদ্দিন রোডে নিয়মিত চেকপোস্টে তল্লাশির সময় ফারুক হোসেনকে ২৫০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয়। পরে তাকে কায়েৎটুলি ফাঁড়িতে নেওয়া হয়। আসামিকে নিরাপদে থানায় নিতে গাড়ি আসতে দেরি হওয়ায় কায়েৎটুলি ফাঁড়িতে নেওয়া হয়।
ডিএমপি বলছে, ফাঁড়ির সামনের আগামাছি লেনের ৫০/১ বাড়িতে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ১২ জানুয়ারি রাত ৯টা ২২ মিনিট ২০ সেকেন্ডে এসআই ইমদাদুল ফাঁড়ি থেকে বের হন। অন্যদিকে ইমা আক্তার ফাঁড়িতে প্রবেশ করেন রাত ৯টা ৫০ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে।
ইমা আক্তার ফাঁড়ি থেকে বের হন রাত ১০টা ২৫ মিনিট ১০ সেকেন্ডের সময়। পুনরায় এসআই ইমদাদুল ফাঁড়িতে প্রবেশ করেন রাত ১০টা ২৮ মিনিটে। সুতরাং এসআই ইমদাদুলের সঙ্গে আসামির স্ত্রীর কোনো প্রকার দেখা হয়নি। এছাড়া ইমার মোবাইল ফোনের কললিস্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এসআই ইমদাদুলের সঙ্গে ইমার ফোনেও কোনো যোগাযোগ হয়নি। সুতরাং কোনো পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে আসামিকে শারীরিক নির্যাতন কিংবা তার কাছ থেকে টাকা দাবি এবং কুপ্রস্তাব দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি।
গণমাধ্যমে ইমা দাবি করেছেন, তার স্বামী ফারুক হোসেনকে বংশাল থানা হাজতে নেওয়ার পরেও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। অথচ ঘটনার প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ১২ জানুয়ারি কায়েৎটুলি ফাঁড়ি থেকে ফারুককে সুস্থ শরীরে বংশাল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
থানা হাজতে প্রবেশ ও পরের দিন আদালতের উদ্দেশে রওনা দেওয়া পর্যন্ত সময়ের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পর্যালোচনা করে আসামির সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্যের নির্যাতনের চিত্র পাওয়া যায়নি। আসামিকে হাজতখানার মধ্যে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আচরণ করতে দেখা গেছে। পরবর্তী সময়ে ১৩ জানুয়ারি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের হাজতখানায় পাঠানো করা হয়। সেখানে তাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পরে আদালত আসামির জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায়।
সেখানেও আসামি ফারুকের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। প্রতিটি স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তার শরীরে কোনো প্রকার আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। আঘাতের চিহ্ন থাকলে যথাযথ কারণ ছাড়া ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগ ও কেন্দ্রীয় কারাগার কখনো আসামি গ্রহণ করে না। ফলে এই থেকে প্রমাণিত হয় যে, আসামি ফারুককে কায়েৎটুলি ফাঁড়ি থেকে বংশাল থানায় এবং বংশাল থানা থেকে আদালতে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পাঠানো হয়।
গণমাধ্যমে ইমা আক্তার আরও দাবি করেন, ফাঁড়ি থেকে ঘটনার দিন রাতে বংশাল থানায় তিনি তার দুই বছরের শিশু সন্তানসহ গিয়ে তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মইনুল ইসলামের হাতে-পায়ে ধরে অনুরোধ করেন। অথচ ওসি মইনুল ১২ তারিখ বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পারিবারিক অনুষ্ঠানে শেরেবাংলা নগর থানার কাফরুল এলাকায় অবস্থান করছিলেন।
ডিএমপি আরও জানিয়েছে, ১৩ জানুয়ারি কারাগারে পাঠানোর পর ১৪ জানুয়ারি ফারুক কারাগারে অসুস্থ বোধ করলে প্রথমে তাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ১৫ জানুয়ারি দিনগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার সৈয়দ হাসান আলী বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন।
কারা হাসপাতালের চিকিৎসক ও সহকারী সার্জন ডা. তানভিরের সই করা এক প্রেসক্রিপশনে অসামির অসুস্থতার কারণ সম্পর্কে মাদকাসক্তি ও ব্লাড প্রেসার লো (৮০/৫০) থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তী সময়ে ঢাকা জেলার সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পায়রা চৌধুরী মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন এবং তাতে মৃতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ফাহমিদা নার্গিস ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন এবং মরদেহের ভিসেরা পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করেন। ডা. ফাহমিদার সই করা প্রাথমিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মরদেহের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া রোগ অথবা জখমের বিস্তারিত বিবরণ কলামে উল্লেখ করা হয়েছে, ফারুকের ‘ফাইব্রোটিক পরিবর্তনের উপস্থিতিসহ হার্ট বড় পাওয়া গেছে’। পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ভিসেরা পরীক্ষা শেষে দেওয়া হবে।