জাতীয় ২ মার্চ, ২০২৪ ০২:১৫

বেইলি রোড ট্রাজেডি পোড়া ভবনে মানুষের আতঙ্কভরা চোখ


 বেইলি রোডের অন্যতম জমজমাট ভবন গ্রিন কোজি কটেজ। দুদিন আগেও মানুষের পদচারণায় ছিল মুখর। তারপর আহাজারি-বিলাপে চারপাশ হয়ে উঠে ভয়াবহ। বৃহস্পতিবারের আগুনে সেখানে নেমে এসেছে স্তবতা। আগুনে পুড়ে শ্মশান হয়ে যাওয়া এ ভবনকে এখন আতঙ্কভরা চোখে দেখছে শতশত মানুষ।

শনিবার (২ মার্চ) রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজের সামনে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার রাতে এ ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন ১২ জন। ৭ তলাবিশিষ্ট ওই ভবনের সবকটি তলায়ই ছিল রেস্তোরাঁ।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ভবনটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ভবনের বর্তমান পরিস্থিতি মানুষকে জানাতে সেখানে ভিড় জমিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। ভিড় জমিয়েছেন শতশত উৎসুক জনতাও। সবার আতঙ্কভরা চোখে আর্তনাদ স্পষ্ট। কারোর কণ্ঠস্বর কেঁপে উঠছিল ঘটনার কথা মনে করতেই।

ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী হাসিবুল আলম ইভান কোচিং শেষে পুড়ে যাওয়া ভবনটি দেখতে এসেছেন। 

জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এর আগে এই ভবনে ফ্যামিলিসহ অনেকবার এসেছিলাম। আগুনে পুড়ে যাওয়া এই ভবন দেখে এখন আতঙ্ক লাগছে। এর আগে যখন এখানে এসেছিলাম, বহুবার দেখেছি সিলিন্ডারগুলো অসতর্কাবস্থায় রাখা ছিল। সচেতনতা অবলম্বন করলে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।

আমিন আলমগীর নামের একজন পথচারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি প্রতিদিন এই ভবনের সামনে দিয়েই যাই। পুড়ে যাওয়ার পর ভবনটি দেখে ভয় লাগছে।

গ্রিন কোজি কটেজের পাশের ভবন গোল্ড প্যালেস। এই ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মো. মোস্তফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে (গ্রিন কোজি কটেজ) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনেক মানুষ দেখতাম। কারণ খাবারের দোকান, মানুষ খাবার খেতে আসতো, খাবার নিয়েও যেতো।

গ্রিন কোজি কটেজ ভবনটি বেইলি রোডের অন্যতম জমজমাট ভবন। সাততলা ভবনটির অধিকাংশ ফ্লোরে রেস্টুরেন্ট ছিল। ফলে সারাদিনই সেখানে মানুষের যাতায়াত ছিল। তবে সন্ধ্যার পর মানুষের উপস্থিতি থাকত বেশি। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ৫০ শতাংশ ছাড় ছিল। ফলে সেখানে কাস্টমার বা অতিথি উপস্থিতি ছিল বেশি।

ভবনের প্রথম তলায় চায়ের চুমুক রেস্টুরেন্ট ছিল। এছাড়া ছিল গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার, স্যামসাং, শেখ হোলিক ও ওয়াফে বে নামে চারটি শোরুম। দ্বিতীয় তলার পুরোটা জুড়ে ছিল কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট। তৃতীয় তলায় ইলিয়ানের পাঞ্জাবির শোরুম। চতুর্থ তলায় খানাস নামে একটি রেস্টুরেন্ট, পঞ্চম তলায় পিৎজা হাট, ষষ্ঠ তলায় স্টিট ওভেন ও জেস্টি নামে দুটি রেস্টুরেন্ট এবং সপ্তম তলায় ফোকুস ও হাক্কা ডাকা নামে দুটি রেস্টুরেন্ট ছিল। এছাড়া ভবনটির ছাদেও এম্বোশিয়া নামে একটি রেস্টুরেন্ট ছিল।

ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ভবনটিতে ২টি লিফট ও একটি সরু সিঁড়ি ছিল। তবে জরুরি ফায়ার এক্সিট ছিল না। ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা ও লোকজন বের হওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র ও ভবনটির রেস্টুরেন্টগুলোতে বিভিন্ন সময়ে খেতে যাওয়া অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবনটিতে প্রবেশ করার রাস্তা ছিল মাত্র একটি। সেটি নিচ তলার চায়ের চুমুক নামে একটি রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে। নিচ তলায় রয়েছে দুটি লিফট ও একটি সরু সিঁড়ি। আর সিঁড়িটি এত সরু যে সেখান দিয়ে চারজন লোক একসঙ্গে উঠানামা করা যায় না। উপর থেকে একজন এবং নিচ থেকে একজন করে ওঠা-নামা করা যায়।

আগুনের সূত্রপাত চায়ের চুমুক থেকে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, ভবনটির নিচ তলায় চায়ের চুমুক নামে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র এক মাস আগে ভবনটির নিচ তলায় এই রেস্টুরেন্টটি যাত্রা শুরু করে।