জাতীয় ২ মার্চ, ২০২৪ ০৬:৪০

অগ্নিঝুঁকি কমাতে সেবা সংস্থাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার তাগিদ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
অগ্নিঝুঁকি কমাতে সেবা সংস্থাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার তাগিদ
নগরে অগ্নিঝুঁকি কমাতে সেবা সংস্থার জবাবদিহিতা ও নগর উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা কার্যকর করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (২ মার্চ) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে রাজধানীর বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড এবং ভবনে জীবনের নিরাপত্তা : বিআইপির পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ তাগিদ দেন।

বক্তারা বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের নগর এলাকাগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, যার ফলে জীবন ও সম্পদের অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। নগর এলাকার সঠিক পরিকল্পনা, ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ ভবন নির্মাণ, কার্যকরী উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু নজরদারি তথা সেবা সংস্থাগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করা ও নগর উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা কার্যকর করার মাধ্যমে থাকলে নগর এলাকায় এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

ইনস্টিটিউটের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনটির প্রথম থেকে পঞ্চমতলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক (শুধু অফিসকক্ষ হিসেবে) এবং ষষ্ঠ ও সপ্তমতলা আবাসিক ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। ভবনটিতে রেস্তোরাঁ, শোরুম (বিক্রয়কেন্দ্র) বা অন্য কিছু করার জন্য অনুমোদন নেওয়া হয়নি। কিন্তু ভবনের মালিকরা পুরো ভবনটি বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার করছিলেন, যেখানে অনুমোদনহীনভাবে বেশিরভাগই ছিল রেস্তোরাঁ; যা সুস্পষ্টভাবে ইমারত আইন ও নগর পরিকল্পনার ব্যত্যয়। অতীতের অগ্নিদুর্যোগের ঘটনার মতো রাজধানীর বেইলি রোডে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটিকে আসলে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই বিবেচনা করা দরকার। এই ধরনের দুর্ঘটনা আসলে সেবা সংস্থাগুলো গাফিলতিজনিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা না করলে এবং সংশ্লিষ্ট যেসব ব্যক্তি ও সংস্থা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি, উদাসীনতা ও অন্যায় আচরণ করেছে; তাদের যথাযথ আইনের আওতায় না আনলে এর পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ভবনটিতে কার্যকর কোনো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা ছিল না। এই দুর্ঘটনার আগে ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে ভবন কর্তৃপক্ষকে তিনবার নোটিশ দিয়েই দায় সেরেছে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ভবন মালিক ও ভবনের ব্যবহারকারীরা। আগুন লাগার পর উত্তাপ আর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় ভবনটির ওপরের তলাগুলো। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে নিহতদের অধিকাংশই কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ার শিকার হয়ে মারা গেছেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, ১৮৭১ সালে ৩০০ জন মানুষ মারা যান এবং ৯ বর্গ কিলোমিটার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর সেখানের পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু ঢেলে সাজানো হয়, আমরা কি ঠিক এমন পরিস্থিতির জন্যে অপেক্ষা করব, নাকি তার আগেই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ কর। 

তিনি আরো বলেন, ১ সপ্তাহের একটি জরুরি ব্যবস্থা সরকার কর্তৃক ঘোষণা করে যেখানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন আরো যত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে তা চিহ্নিত করা এবং যারা এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা। একইসঙ্গে ঢাকার ভূমি উন্নয়ন পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়ন সময় দুর্যোগ পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কার্যক্রমের বিস্তারিত বিধিমালা প্রণয়ন ও সংরক্ষণ করতে হবে।

বিআইপির সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন বলেন, নকশাগত ত্রুটি ভবনগুলোতে অগ্নিকাণ্ড হওয়ার অন্যতম কারণ। নান্দনিকতার জন্য কাচ দিয়ে অথবা গ্লাস ব্যবহার করে যেই ভবনগুলো বানানো হচ্ছে তাতে বায়ু প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলেই আমরা নিজেরাই আমাদের ভবনগুলোকে মরণফাঁদ বানিয়ে ফেলছি।

ইনস্টিটিউটের যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের মানুষের জীবনের মূল্যের চেয়ে ইকোনোমি বা মুনাফাকে প্রাধান্য দেওয়ার যে প্রবণতা তা বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া রাজঊক, সিটি কর্পোরেশন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা। ঢাকার এলাকা ভিত্তিক নগর পরিকল্পনা, ভূমির পুনঃউন্নয়ন, বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার সঠিক প্রয়োগ এবং সেবা সংস্থাগুলোর সঠিক নজরদারির মাধ্যমে ঢাকাকে দুর্যোগ ঝুঁকিমুক্ত ও বসবাস উপযোগী করা সম্ভব।