নিজস্ব প্রতিবেদক
বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তি জ্ঞান ছাড়া কোনো দেশ বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।
আজ সোমবার (২৪জুন) সকালে রাজধানীর ওসমানীর স্মৃতি মিলনায়তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিজ্ঞান প্রযুক্ত শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। তখন কেউ কম্পিউটার ব্যবহার করত না। ফোন সব এনালগ ছিল ডিজিটাল ফোনকে ব্যবহার করত না। আমার সমস্ত টেলিফোন সিস্টেমকে ডিজিটালাইজ করি। কম্পিউটার শিক্ষার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুইটা তিনটা কম্পিউটার দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। ছেলে-মেয়েরা যাতে শিক্ষা নিতে পারে তার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। তাছাড়া আইন পাশ করে ১২টা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ কাজ শুরু করি।
তিনি বলেন, গবেষণা আমাদের কোন বরাদ্দ ছিল না। ৭৫ পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা গবেষণায় কোন বরাদ্দ দেয়নি। আমাদের প্রথম বাজেট অল্প ছিল। সেখান থেকেও গবেষণার জন্য টাকা দিয়ে দিই। পরবর্তীতে যখন বাজেট দেয় তখন ১০০ কোটি টাকা থুব বরাদ্দ দিয়েছিলাম। সেটা ছিল কম্পিউটার শিক্ষা এবং গবেষণার। আমাদের শুধু একটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমি আরো কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেই। সেই সাথে ১৬টি বেসরকারের বিশ্ববিদ্যালয়, নব থিয়েটার প্রতিষ্ঠা, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, বায়ু টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, এই সবগুলা আওয়ামী লীগ সরকার আমলে শুরু করেছিলাম।
সরকারপ্রধান বলেন, জাতীয় শিক্ষা নীতি যেটা আমরা করে গিয়েছিলাম, ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতা আসতে পারিনি, বিএনপি সেটা বাতিল করে দেয়। বিএনপি নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছিল, সেটা উদ্যোগ ছিল না শিক্ষা নীতিমালা হোক সেটাই তারা চায়নি। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন আমাদের সুযোগ আছে আরো কাজ করার, শিক্ষা ও গবেষণা কাজে আমরা আরও বরাদ্দ বৃদ্ধি করি। ২০১০ থেকে আমরা বিনা পয়সা বই দেওয়া শুরু করি, অনেকে ভেবেছে যে এটা কিভাবে সম্ভব? আমরা সে অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছি। ২০১০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৪শত ৬৪ লক্ষ ২৯ হাজার ৮৮৩ কোটি পাঠ্যপ্রস্তুক বিনামূলে আমরা বিতরণ করেছি।
তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৩০ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কৃষি, ভেটেনারি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল, ইসলামি আরবি, এভিয়েশন, এরো স্পেস, বেসরকারি খাতে ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে, দেশের বিদেশের কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে বহুমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা ও উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রতিটি উপজেলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষা আমাদের কম ছিল সেটা আমরা বাড়িয়েছি। আমাদের সরকারি সামাজিক খাতগুলো শিক্ষাকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই। বাজেটে শিক্ষা খাতেই সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে অনেক বিত্তবান আছে। কিছু লোকের তো বেশ টাকা-পয়সা হয়ে গেছে। বিত্তবানরা যদি এই ট্রাস্ট ফান্ডে অনুদান দেয় তাহলে আমরা
আরো বেশি ব্যবহার করতে পারব। অনেকে দিয়েছে। আমি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড থেকে এই ফান্ডে অত্যন্ত দুই কোটি টাকা অনুদান দেব। আমি আমার ছোট বোন শেখ রেহানার সাথে আলোচনা করে এটা দিয়ে দেব। আমরা নিজেরাও বৃত্তি দিচ্ছি৷ এখানে দিতে পারলে নিজেদের একটু আত্মতৃপ্তি হবে।
"আমাদের অনেক হীরের টুকরো ছড়িয়ে আছে সেগুলো কুড়িয়ে আনতে চাই। এটা আমাদের মূল উদ্দেশ্য। সে কারণে ট্রাস্টের মাধ্যমে বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি।"
সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে পাঠ্যপুস্তক, পাঠ্যপ্রস্তুকের কার্যপ্রণালী, শিক্ষাক্রম, সবকিছু আমরা পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সৃজনশীল শিক্ষার ব্যবস্থা, মেধা অন্বেষণ, মেধার মাধ্যমে শিক্ষাকে আরও আপন করে নেওয়া, শিক্ষাকে আনন্দ মুহূর্ত পরিবেশে করা, সেই পদ্ধতিতে আমরা আসতে চাই। সারাক্ষণ যদি কেউ বলে পড় পড় পড়, এটা কি ভালো লাগে বলো? মোটেই ভালো লাগেনা। যা একটু পড়ার ইচ্ছা থাকে সেটাও নষ্ট হয়ে যায়। এটা বাস্তব কথা। সেজন্য এমন ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছি যাতে ছেলে মেয়েরা আগ্রহ নিয়ে পড়ে। পড় পড় করতে হবে না। নিজেরাই পড়বে।
"কেউ সমালোচনা করলেই সেটার জন্য ভিত হয়ে যেতে হবে আমি এটা বিশ্বাস করিনা। আত্মমর্যাদা বোধ ও আত্মবিশ্বাস মানুষকে শক্তি দেয়। শিক্ষার্থীদেরকে বলব এটাই সব সময় চিন্তা করতে হবে। কে কি বলল তার জন্য চোখের পানি ফেলে মুখ লুকাতে হবে তা না, নিজের বিশ্বাস থেকে শিখতে হবে। তাহলে এ দেশকে তোমার এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। "
শেখ হাসিনা আরো বলেন, লাখো শহীদের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি, স্বাধীনতা ব্যর্থ করার জন্য অনেক চক্রান্ত হয়েছে। সব অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আরো এগিয়ে যেতে হবে। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিছু লোক থাকে তাদের সব সময় কোন কিছু ভালো লাগে না। আর ভালো হতেও দিতে চায় না। তাদেরকে পাত্তা না দিলেও চলবে। আমরা আমাদের দেশকে নিয়ে এগিয়ে যাব। এ আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমাদের চলতে হবে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এখন আমাদের স্মাট বাংলাদেশ করতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা ও সংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্ঠা ড.কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান।