মুক্তমত ১৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০১:৪৮

আযান চালুর অপরাধে ফাঁসি হয় যে তুর্কি প্রধানমন্ত্রীর!

আদনান মেন্দেরেস। যার জন্ম ১৮৯৯ সালে তুরস্কের আইদিন প্রদেশের কোচারলিতে, ক্রিমিয়ান বংশোদ্ভূত এক ঐতিহ্যবাহী ও সম্ভ্রান্তশালী পরিবারে। গ্রামেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন তিনি। এরপরে আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন তুরষ্কের বিখ্যাত আনকারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে। তরূন বয়সে তিনি তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের লড়াইয়ে গ্রীকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এ জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় পদকও লাভ করেন। ১৯৩০ সালে তিনি লিবারেল রিপাবলিকান পার্টি নামে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন। দলটির বিলুপ্তির পর ১৯৩১ সালে কামাল আতাতুর্কের আমন্ত্রণে রিপাবলিকান পিপলস পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৪৫ সালে দলীয় কোন্দলের শিকার হয়ে দল থেকে  তাকে বহিষ্কৃত করা হয়। 

১৯৪৬ সালের ৭ জানুয়ারি আদনান মেন্দেরেস ও জালাল বায়ার ডেমোক্রেটিক পার্টি নামের নতুন একটি দল গঠন করেন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কুতাহিয়ার ডেপুটি নির্বাচিত হন। ১৯৫০ সালের ১৪ মে তুরস্কের প্রথম স্বাধীন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি ৫২% ভোট পায়। সেই সুবাদে মেন্দেরেস প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৫৪ ও ১৯৫৭ সালের নির্বা‌চনেও তিনি জয় লাভ করেন।

তার ১০ বছর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় তুরস্কের অর্থনীতি বার্ষিক ৯% হারে বৃদ্ধি পায়। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়। মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে তৎপর ছিলেন তিনি। তার সুষম অর্থনৈতিক নীতির কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। আর এ সময় তিনি প্রবলভাবে ধর্ম-কর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন, অথচ ইতঃপূর্বে তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর একজন সেক্যুলার। কামাল আতাতুর্ক ইসলামের যে বিষয়গুলো বন্ধ রেখেছিল আদনান আবার সেগুলো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে চালু করেন। কয়েক হাজার মসজিদ পুনরায় চালু করেন। আরবিতে আযান নিষিদ্ধ ছিল, তিনি আবার তা চালু করেন। এজন্য কামাল আতাতুর্কের ভাবশিষ্য ও তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা প্রচণ্ডভাবে ক্ষেপে যায়। 

১৯৬০ সালের ২৭ মে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানে তার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে তুরস্কের সংবিধান লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়। তন্মধ্যে অন্যতম একটি ছিল আরবি ভাষায় আযান চালু করা। ১৯৬১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মারমারা সাগরের জনমানবহীন ইমরালি দ্বীপে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।