ডেস্ক রিপোর্ট।।
১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে, মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া চার জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তখন অনেকটাই দিশেহারা। ঢাকা তখন অস্থিরতার নগরী। সেনাবাহিনীর ভেতরে চলছে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান আর নানা নাটকীয় ঘটনা।
শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার আড়াই মাস পর তখনকার আওয়ামী লীগের চারজন সিনিয়র নেতা - সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি দীর্ঘদিন। তার ২৩ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মামলাটি সচল করে এবং ১৯৯৮ সালের ১৫ই অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়৷ ২০০৪ সালের ২০শে অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন৷
মুত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা৷
২০০৮ সালে হাইকোর্ট রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলেও বাকি দুইজনকে খালাস দেন৷ এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ফারুক, রশিদ, হুদা ও মহিউদ্দিনকেও খালাস দেয়া হয়৷ অবশ্য পরে আপিল বিভাগ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেয়া তিনজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখে৷
তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় ২০১০ সালের ২৭শে জানুয়ারি মধ্যরাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ জেলহত্যা মামলার যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ১০ জন আসামি এখনো পলাতক৷
চার নেতার পরিবারের দাবি একটি স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে হত্যার নেপথ্যের কুশীলবদের কথা জাতির সামনে তুলে ধরা হোক।
ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম জানান, যারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল এবং যাদের মদদে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে তারা সামরিক আর বেসামরিক যারাই হোক তাদের বের করা উচিত। ভবিষ্যতে যাতে এমন আর কিছু না ঘটে তাই এসব হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার করা উচিত।
সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি বলেন, আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে আগামীতে কি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তা জানতে পারবো। দন্ডপ্রাপ্ত একজন আসামীর স্ত্রী কিন্তু বিএনপি থেকে নির্বাচন করেছেন, এতো বছর পরও কিভাবে তারা এতো ক্ষমতার অধিকারী হয় তা আমাদের জন্য পীরাদায়ক।
জাতীয় চার নেতার আত্মত্যাগের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার দাবি তাজউদ্দিন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমির। তিনি বলেন, চার নেতা সম্পর্কে অনেক ইতিহাস গোপন এবং তথ্য উলোট পালোট করা হয়েছে।
পলাতক আসামিদের দেশের বাইরে থেকে ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে দণ্ড কার্যকর করার দাবি পরিবারের।