শিক্ষা ১৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০৫:০৬

চিলমারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা আত্মসাৎ করে ১ কোটি টাকা!

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৯৩টি সরকারী প্রাথমিক স্কুলের উন্নয়নের জন্য সরকারী ভাবে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। গত জুন মাসে বরাদ্ধের টাকা উত্তোলন করা হলেও অধিকাংশ স্কুলে কাজ না করেই উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠে।

বিভিন্ন অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগের আলোকে সরেজমিনে  উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে অস্থিত প্রাপ্ত বরাদ্ধ পাওয়া ৯৩টি স্কুলের মধ্যে মোট ৬১টি স্কুল পরিদর্শন করে  মাত্র ৮টি স্কুলের কাজ সন্তোষ জনক দেখতে পাওয়া যায়। স্কুল ৮টি হলো, থানাহাট ১ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জোড়গাছ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, খরখরিয়া ২ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালাবাড়ীহাট ১ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়. শরীফেরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,ডিএ চিলমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,চিলমারী বাজাার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাণীগঞ্জ বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।

অপরদিকে, গত জুনে টাকা উত্তোলন করা হলেও নভেম্বর পর্যন্ত, চিলমারী ১নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বৈলমন্দিয়ার খাতা, চর শাখাাহাতি ১নং সরঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিকাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডাটিয়ার চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেডি ওয়ারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ময়নারখামার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নরশিংভাজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বজরা দিয়ারখাতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দৃশ্যমান কোন কাজ পরিলক্ষিত হয়নি। 

এদিকে গত ৩০/১০/১৯ তারিখে উপজেলার  রমনা বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় স্কুলটিতে ১টি টাকারও কাজ করা হয়নি। অথচ স্কুলটিতে ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মোঃ ছাবেদ আলীর নিকট থেকে অর্থ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইলে, হঠাৎ তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং এ প্রতিনিধি সহ সংগে থাকা দৈনিক ইত্তেফাকের চিলমারী প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম সাবু ও দৈনিক করতোয়া প্রতিনিধি জিয়াউর রহমান জিয়াকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। প্রধান শিক্ষকের এ ধরনের অচরনের বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে মোবাইলে জ্ঞাত করা হলে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে তাৎক্ষনিক সাংবাদিকদেরকে আস্বস্থ করেন। পরবর্তিতে শিক্ষা অফিসার আবু ছালেহ সাংবাদিকদেরকে আইওয়াশ করার জন্য, গত ৩১/১০/২০১৯ ইং তারিখে তার  অফিস  উশিঅ/চিল/কুড়ি/৫৬৫ স্মারকে উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষককে কৈফিয়ত তলব করেন। উক্ত পত্রে বলা হয়, আপনি ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের এডুকেশন ইন ইমারজেন্সী খাত হতে প্রাপ্ত ১,৫০,০০০/= টাকা ও রুটিন মেইনটেন্যান্স বাবদ প্রাপাত ৪০,০০০/= টাকার কাজ যথাসময়ে যথাযথ ভাবে কেন কনেরনি এবং ৩০/১০/২০১৯ইং তারিখ সন্মানীত সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সংগে তথ্য প্রদান না করে, কেন অসৌজন্যমূলক আচরন করেছেন, তার সন্তোষ জনক জবাব ৭( সাত) কর্ম দিবসের মধ্যে অত্র অফিসকে জানাবেন। এই কৈফিয়ত তলবের একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদেরকে দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ৭ ( সাত) কর্ম দিবস পেড়িয়ে গেলেও কি পদক্ষেপ উক্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ ছাবেদ আলীর বিরুদ্ধে নিয়েছেন তা অদ্যবধী উক্ত সাংবাদিকদেরকে জ্ঞাত করাননি। অথচ স্কুলটিতে কোন কাজ না হলেও, উক্ত স্কুলের মোট বরাদ্ধের সম্পূর্ণ টাকা পরবর্তীতে তিনি ছাড় দিয়েছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে  চিলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবু ছালেহ এর মুখোমুখি হলে তিনি বলেন, তিনি নিজে তার সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহেদুল ইসলাাম ও মোঃ শাখাওয়াৎ হোসেনকে নিয়ে সম্প্রতি উপজেলার বরাদ্ধ প্রাপ্ত সকল স্কুল পরিদর্শন করেছেন এবং বেশ কিছু স্কুলে কাজ না করা এবং টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। সরেজমিনে পরিদর্শন করে তিনি সন্তষ্ট হতে পারেননি হেতু  কিছু স্কুলের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা প্রদান বন্ধ রেখেছেন। প্রথম কিস্তির টাকার কাজ সন্তোষ জনক ভাবে সম্পন্ন করা হলে, পুণঃরায় স্কুল গুলি পরিদর্শন করে তবেই তিনি দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ছাড় দেবেন।     
অপরদিকে দ্বিতীয় দফায় গত ১২ নভেম্বর এ প্রতিনিধি পুণঃরায় সরেজমিনে পূর্বের  স্কুল গুলি পরিদর্শনে গেলে দেখতে পান  টনক নড়েছে চিলমারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসহ স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের। একদিকে সাংবাদিক, অন্যদিকে বর্তমান সরকারের শুদ্ধি অভিযানের ভয়ে সংশ্লিষ্টদের থলে থেকে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে বরাদ্ধের টাকা। অবশেষে ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে স্কুল উন্নয়নের কাজ।