মুক্তমত ১১ অক্টোবর, ২০২০ ০৩:৫৩

এমন ভাইকে নিয়ে একালে গর্ব করাই যায়

পীর হাবিবুর রহমান

এমন ভাইকে নিয়ে একালে গর্ব করাই যায় যারা বলেন অনেকে সুযোগের অভাবে সৎ তাদের মুখে ছাই দিয়ে পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি হয়ে প্রমাণ করেছে সততা রক্ত ও আদর্শের রাজনীতির উত্তরাধিকারিত্বের বিষয়। চিন্তা চেতনার বিষয়। নির্লোভ মানুষ অনেকেই আছে। সমাজ তাদের সেই সূযোগ দেয়না। যারা বলেন, ক্ষমতার দম্ভ অনেকে সইতে পারেনা, তাদের মুখ বন্ধ করেও প্রমাণ করেছে ক্ষমতা বলে কিছু নেই, মানুষের সেবক মানুষের মতোন সহজ সরল সাদামাটা নিরাবরন জীবন মানুষকে নিয়েই কাটানো যায়। বাড়ির দরজা খোলা থাকে মানুষের জন্য। এতো কথার কারণ আজ মিসবাহর জন্মদিন। আল্লাহ তাকে দীর্ঘ সুস্থ জীবন দিন। নির্লোভ নিরহংকারী সৎ চরিত্র সাধনায় অর্জন করেছে। আমাদের ৮ ভাইবোনের সবার ছোট মিসবাহ । বাড়ির আদরের। আমরা চার ভাইবোন অকালে হারিয়েছি। মিসবাহ মেধাবি ছাত্র ছিলো। স্কুল জীবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছে। ক্রিকেটার ছিলো নাটকও করতো। প্রচুর পড়াশোনা তার। সুনামগন্জ সরকারি জুবিলী স্কুল থেকে এসএসসি,সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি কৃতিত্বের সাথে পাশ করে। ভর্তি পরীক্ষা দিতে যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তখন শিবিরের দুর্গ। ছাত্রলীগের সভায় শিবির বিরোধী জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে বসে। শিবির ক্যাডাররা তাকে পাগলের মতন খুঁজে। সিনিয়ররা শহর হয়ে চলে যেতে পথ করে দেন। এর পরেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা। তখন আইন অনুষদ কেবল ঢাবি ও রাবিতে। সে আইনে পড়বে। ঢাবি রাবিতে এক সময় পরীক্ষা। সে রাবিতেই পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে সুযোগ পায়। এলএলবি অনার্স, এলএলএম শেষ করে সুনামগন্জ বারে যোগ দেয়, এজন্য জাহানুর ভাইর অবদান আছে। বারের সেক্রেটারী ছিলো। ম্যাজিস্টেট কোর্টে কখনো মামলা লড়তে যায়নি। তার ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র মেয়ে সহকারী জজ হয়ে এলো। তার বাসা ঠিক করে দিলেও তার কোর্টে মামলা করতে যায়নি। এটাই নীতি। সে হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেনি এটা আমার দুঃখ। সুনামগন্জের প্রতিটি আন্দোলনের কর্মী বক্তা ছিলো। যুবলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হয়ে বিএনপি জামাত শাসনামলে লড়াই সংগ্রাম সংগঠনে শ্রম দিয়েছে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হয়েছে। আমাকে অনেকে বলেন তাকে কেনো জাতীয় পার্টিতে দিয়ে এমপি করালাম। আমি জানি দলবদল ঠিক নয়। কিন্তু দলের নেতারা যখন আদর্শহীন হন, দল যখন উপর থেকে মাসুম অযোগ্য কাউকে চাপিয়ে দেয় তাহলে কিভাবে? মিসবাহ সংসদে না এলে কেউ কি জানতো এমন প্রতিভাবান সম্ভাবনাময় নেতৃত্বকে অযোগ্য নেতাদের সিন্ডিকেট পাথর চাপা দিয়ে মারে? কিন্তু পীর মিসবাহ দুই টার্মে এমপি হয়ে প্রমান করেছে নিজের নয় মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ও এলাকার উন্নয়ন জনসেবাই তার ইবাদত। নিরহংকারী বিনয়ী আচরনে সবার মন জয় করেছে। প্রতিপক্ষরাও তাকে বেয়াদব অসৎ বলবেনা। সে ক্যাডার লালন করেনি, ঠিকাদার সিন্ডিকেট গড়েনি, যেখানেই অন্যায় সেখানেই প্রতিবাদ, যেখানে সমস্যা সেখানেই সমাধান। যখন তখন অস্ত্রবাজ ছাড়া মানুষের দুয়ারে ঘুরছে। শহরের পয়েন্টে পয়েন্টে আড্ডা দিচ্ছে। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনে অন্যায় আবদার নিয়ে ফোন করেনা। কোথাও জুলুম হলেই ব্যবস্থা নিতে বলে। নির্বাচনী এলাকা জুড়ে ব্যাপক উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে। কোন ঠিকাদার তাকে বা তার কোন লোককে চিনতে হয়না। মানুষকে কাজের মান দেখতে উৎসাহিত করে। সংসদের অধিবেশন ছাড়া এলাকায় মানুষের সাথে তার নিরন্তর যোগাযোগ,উন্নয়ন তদারকি। মন্ত্রীদের কাছে এলাকার উন্নয়ন ছাড়া তার কোন তদবির নাই। এমন এমপি দেশে অনেক আছে। কত দুঃসহ অসহায় মানুষকে সববচ্ছতায় সাহায্য করে। কারও উপকার না করুক অপকার করা তার ধর্মে নাই। সবাইকে প্রাপ্য সম্মান দিতেও কার্পন্য করেনি। সে এমপি সাব হয়নি মানুষের কর্মী হয়েছে। কারও সন্তান,কারও ছোট ভাই , কারও বড় ভাই। এমপি পদ চলে গেলে দেশ ত্যাগ দূরে থাক,দরজা খুলে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে। অর্থবিত্তের লোভহীন মিসবাহর গত নির্বাচনে টাকার সংকট ছিলো। লুটেরা এক নাবালক এ নিয়ে টিটকারী মেরেছে,আজ অঢেল অর্থসম্দাদের মালিক বেহায়া ভুলে গেছে তার সৎ পিতা ৭৯সালের নির্বাচনে কত আর্থিক কষ্ট করেছেন। সেই বেয়াদব মিসবাহকে বাপ তুলে সমাবেশে গালি দিলেও মিসবাহ তার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এমন বেয়াদ্দবকেও স্নেহে সম্মান দিয়েছে। সংসদের কোন অধিবেশনে মিসবাহ বোবা হয়ে বসে থাকেনি। পড়াশোনা করে। জাতীয় ও স্থানীয় সকল ইস্যুতে বাগ্মিতায় সবার নজর কেড়েছে, স্নেহ কুড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারও স্নেহ করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শচ্যুত হয়নি, আদর্শহীন হয়নি, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা হারায়নি। এমন ভাইকে নিয়ে গর্ব করাই যায়। শুভ জন্মদিন মিসবাহ।

 

লেখক-পীর হাবিবুর রহমান, নির্বাহী সম্পাদক: বাংলাদেশ প্রতিদিন