জাতীয় ১১ অক্টোবর, ২০১৯ ০৪:০২

শেখ হাসিনার দিল্লি সফর নিয়ে যা বলছে ভারতের মিডিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

শেখ হাসিনার বহুল আলোচিত ভারত সফরের শেষে ভারতের বেশ কয়েকটি প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যম বিতর্কিত 'এনআরসি' বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর প্রশ্নে ভারতকে আরও স্বচ্ছতা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।

এনআরসি নিয়ে একদিকে সরকার যদি দুরকম কথা বলে এবং অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় - সেই দুটো একসঙ্গে সম্ভব নয় বলেও একাধিক সম্পাদকীয় সতর্ক করে দিয়েছে।

পাশাপাশি, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মানচিত্রে চীনের উপস্থিতি আছে ও থাকবে, এটা মেনে নিয়েই ভারতের এগোনো উচিত - এমন পরামর্শও দিয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা।

প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সফরকে সার্বিকভাবে ভারতের মিডিয়া কীভাবে বিশ্লেষণ করছে, এই প্রতিবেদনে মূলত তারই অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে।

দ্য হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার সম্পাদকীয়ছবির কপিরাইটHINDUSTAN TIMES

Image captionদ্য হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার সম্পাদকীয়

বস্তুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে বিদায় নেওয়ার পর প্রায় বাহাত্তর ঘন্টা কাটতে চলল, কিন্তু ভারতের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সেই সফরের কাটাছেঁড়া ও ময়না তদন্ত এখনও অব্যাহত।

সফরের চারদিন শেখ হাসিনা ভারতের প্রায় সব জাতীয় সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ঠাঁই পেয়েছেন, আর সফর শেষে বিভিন্ন সম্পাদকীয় বা মন্তব্য প্রতিবেদনে এখনও চলছে ওই সফরের বিশ্লেষণ।

তবে সফরের সময় স্বাক্ষরিত বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক বা চুক্তির চেয়ে ভারতীয় মিডিয়াতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে 'এনআরসি', যে প্রসঙ্গ দুদেশের যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখও করা হয়নি।

'দ্য হিন্দু' লিখেছে, বাংলাদেশ সরকার যদিও এখনও পর্যন্ত ভারতের মুখের কথায় ভরসা রাখছে - কিন্তু তারা এনআরসি নিয়ে যে প্রশ্নগুলো তুলেছেন সেগুলো উপেক্ষা করা দিল্লির জন্য মোটেও ঠিক হবে না।

টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকার সম্পাদকীয়ছবির কপিরাইটTIMES OF INDIA

Image captionটাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকার সম্পাদকীয়

'দ্য হিন্দুস্থান টাইমস'-ও প্রায় একই সুরে বলছে, 'দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সেরা বন্ধু' যদি এনআরসি প্রশ্নে উদ্বিঘ্ন বোধ করে তাহলে দিল্লির উচিত হবে অঙ্কুরেই সেটা বিনাশ করা।

এই পত্রিকাটি অবশ্য একই সঙ্গে তিস্তা চুক্তির প্রশ্নেও ভারতকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

দিল্লিতে বাংলাদেশ গবেষক শ্রীরাধা দত্ত বলছিলেন, ভারতীয় মিডিয়াতে এই ধরনের পর্যবেক্ষণ বেশ ইতিবাচক একটা পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে।

ড: দত্তর কথায়, "এবার দেখে ভাল লাগছে যে অনেক বেশি খোলা মন নিয়ে ও একটা ন্যায্যতার দৃষ্টিতে ভারতীয় মিডিয়া দুদেশের সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করছে।"

শেখ হাসিনার সফর নিয়ে 'স্ক্রল' পোর্টালের নিবন্ধছবির কপিরাইটSCROLL.IN

Image captionশেখ হাসিনার সফর নিয়ে 'স্ক্রল' পোর্টালের নিবন্ধ

"বলা যেতে পারে, বিষয়টা একতরফাভাবে পরিবেশিত হচ্ছে না।"

টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, এনআরসি ইস্যু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি স্ট্রেইন বা উত্তেজনার কারণ - এই অভিযান বন্ধ করে ভারতের উচিত হবে দক্ষিণ এশিয়ার 'গ্রোথ ইঞ্জিন' বাংলাদেশ থেকে অর্থনীতির পাঠ নেওয়া।

আবার এনআরসি-কে যেভাবে সরকার একদিকে অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলে বর্ণনা করছে আবার অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবৈধ বিদেশিদের বাংলাদেশে ডিপোর্ট করার হুমকি দিচ্ছেন, এই দ্বিচারিতার কড়া সমালোচনা করেছে 'স্ক্রল' পোর্টাল।

এই পটভূমিতেই শ্রীরাধা দত্ত বলছিলেন, "স্ববিরোধিতা তো আছেই। আর সেখানে এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আপনাদের ও নিয়ে ভাবতে হবে না বললেই কিন্তু সব কিছু মিটে যায় না।"

"বস্তুত আমার সাম্প্রতিক ঢাকা সফরগুলোতে ওদেশের মিডিয়া, অ্যাকাডেমিয়া বা নীতি-নির্ধারক সবার কাছ থেকে প্রথমেই আমাদের যে প্রশ্নটার মুখোমুখি হতে হয়েছে তা কিন্তু এনআরসি।"

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ কমোডোর (অবসরপ্রাপ্ত) উদয় ভাস্করছবির কপিরাইটGETTY IMAGES

Image captionপ্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ কমোডোর (অবসরপ্রাপ্ত) উদয় ভাস্কর

"এখন ভারতীয় মিডিয়াও যে তাদের এই উদ্বেগটা অনুধাবন করেছে, সেটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক দিক", বলছিলেন ড: দত্ত।

বাংলাদেশ উপকূলে ভারতের রেডার সিস্টেম বসানোর পটভূমিতে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ কমোডোর উদয় ভাস্কর আবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাতে একটি নিবন্ধ লিখেছেন।

ওই নিবন্ধটির শিরোনাম হল 'ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে দিল্লিকে এটা মেনে নিতে হবে যে বাংলাদেশে চীনেরও একটা উপস্থিতি আছে'।

ভারতীয় নৌসেনার সাবেক কর্মকর্তা মি ভাস্কর বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "চীন থেকে সবচেয়ে বেশি সামরিক সরঞ্জাম পেয়ে থাকে যে সব দেশ, সেই তালিকার ওপর দিকেই আছে বাংলাদেশ। সেখানে আরও আছে পাকিস্তান বা মিয়ানমারও।"

"এখন আমি যেটা বলতে চেয়েছি, চীন থেকে সাবমেরিন পাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সামর্থ্য নি:সন্দেহে অনেক বেড়েছে - আর সেটা ভারতকেও নিশ্চয় উদ্বিগ্ন করবে।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় উদয় ভাস্করের নিবন্ধছবির কপিরাইটTHE INDIAN EXPRESS

Image captionইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় উদয় ভাস্করের নিবন্ধ

"কিন্তু বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে চীনের এই উপস্থিতি একটা বাস্তবতা - এটাতে বিরক্ত বোধ না-করেই ভারতকে তা ডিল করার উপায় খুঁজতে হবে।"

"হয় আমরা, নয়তো চীনের মধ্যে থেকে বেছে নাও - বাংলাদেশকে সেদিকে ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে না", বলছেন তিনি।

ঢাকায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত দেব মুখার্জিও ওই পত্রিকাতেই তার মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় রাখতে চাইলে দিল্লিকে যে 'আরও অনেক বেশি কিছু করতে হবে', তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

শেখ হাসিনার সফরের পর মেইনস্ট্রিম ভারতীয় মিডিয়ার মূল বক্তব্যও সেটাই - এবার কিন্তু ভারতের করে দেখানোর পালা।

 

সূত্র: বিবিসি বাংলা