স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী ঘিরে ছাত্র-জনতা ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ধানমন্ডি-৩২ ও আশেপাশের এলাকা দখলে নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। আওয়ামী লীগ সন্দেহে করা হচ্ছে তল্লাশি, মোবাইল চেক করে খোঁজা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতা।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সকাল সাতটা থেকে ১১টা পর্যন্ত উপস্থিত থেকে এমন চিত্র দেখা যায়। এসময় ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনের রাস্তা তারকাটা দিয়ে আটকানো ছিল, ঢুকতে দেয়া হয়নি কাউকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শোক দিবসে আওয়ামী লীগের মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি ঘিরে গতকাল রাত থেকেই ধানমন্ডি ৩২ ও আশেপাশের এলাকা জুড়ে প্রায় কয়েক হাজার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা অবস্থান নিয়ে আছেন।
এসময় কালো পোষাকে বা কেউ ভিডিও/ছবি তুলতে গেলে উত্তেজিত জনতার রোষানলে পড়তে দেখা যায়। ছাত্ররা তল্লাশি করে, মোবাইল চেক করে দেখছে, আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা পেলেই পড়তে হচ্ছে মারধরে মুখে। তবে ছাত্রদেরই একটি অংশকে উত্তেজনা প্রশমন করে পাশে থাকা নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখতে দেখা যায় আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের।
দেখা যায়, আটকে রাখাদের পুলিশ ও আর্মিদের হাতে তুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে মাইক দিয়ে। অন্যদিকে আক্রমণকারীদের যেন মাথায় আঘাত না করা হয় সে জন্য বার বার মাইক দিয়ে ঘোষণা দিতেও দেখা যায়। তবে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে উত্তেজিত জনতার রোষানল থেকে বাঁচতে পারছেন না কেউ।
মাইক দিয়ে ঘোষণা কারী এমন একজনের সাথে কথা হয় । প্রেসিডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক পরিচয় দেয়া রিয়াজ বলেন, ‘ছাত্র-জনতা যখন এখানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেয়া শুরু করছে, তখন তাদের আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর, দালালরা নিজেরা আসতে না পেরে নারীদের ব্যবহার করা শুরু করছে। তারা একজন একজন নারী পাঠাচ্ছিল, যাদের ব্যাগে ফুল ছিল, ব্যাগের মধ্যে বিভিন্ন নেতার নাম্বার ছিল। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নারীদের চলে যেতে বলেছি। তারা আমাদের কথা মেনে চলে গেছে।
দুষ্কৃতকারীরা অস্ত্র নিয়ে আসছিল দাবি করে রিয়াজ আরও বলেন, আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতকারীদের কিছু লোক ব্যাগে অস্ত্র নিয়ে আসছিল। আমরা ব্যাগে অস্ত্র পেয়েছি, শর্টগান পেয়েছি, বন্দুক পেয়েছি। আমরা তাদের ধরে বাংলাদেশের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হাতে সোপর্দ করেছি।
তাহমিদ হাসান নিহাদ কে বলেন, গতকাল আওয়ামী লীগ তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ১০ লক্ষ লোক সমাগমের ঘোষণা দেয়, যা আসলে কল্পনা বিলাশ। এই ঘোষণা দিয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছে। আওয়ামী লীগের কিছু চেতনাধারী এখন আসছেন, সকালে আসছেন। অনেকে ফুল নিয়ে আসছেন। এদের অনেককে সাধারণ জনতা, সাধারণ শিক্ষার্থী যাদের মনে ক্ষোভ রয়েছে, চোখের সামনে আমার ভাইকে তারা মেরেছে।
এসময়ের মধ্যে ৭টার দিকে দুই গাড়ি সেনাবাহিনীর সদস্যদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থান নিতে দেখা গেলেও তারা কিছুক্ষণ পর চলে যান। এরপর আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে এখানে দেখা যায়নি। তবে মেট্রো শপিংমল গলির মুখে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়।
এর আগে, আওয়ামী লীগের প্রতিবিপ্লবের ডাকের বিপরীতে পালটা কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। এমন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় সামাজিক মাধ্যমে। পরে আন্দোলনকারীরা গতকাল রাত থেকেই ধানমন্ডি ৩২ দখলে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে শুক্রাবাদ মোড় ও বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ঘিরে অবস্থান নেয়।