নিজস্ব প্রতিবেদক: এবার এরশাদ পুত্র রাহগীর আল মাহি এরশাদ সাদকে দল থেকে বহিস্কারের করা হতে পারে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাপার এক যৌথসভা। গতকাল শনিবার বনানী কার্যালয়ে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে দলের প্রেসিডিয়াম ও এমপিদের যৌথসভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু সাদকে নয়, 'কাউন্সিল' বন্ধ না করলে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে বহিষ্কার হবেন রওশন এরশাদ।
একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানিয়েছেন, দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে শেষবারের মতো বোঝাতে জাপার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাগনে আহসান আদেলুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি জাপার এমপি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব। চার থেকে পাঁচ দিনের সময় দেওয়া হবে রওশনকে। জাপায় দেবর-ভাবির বিরোধ বহু পুরোনো। ২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর তা চরমে পৌঁছে। পরে দুই পক্ষের সমঝোতায় এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য বিরোধীদলীয় নেতার পদে বসেন রওশন। জাপা চেয়ারম্যানের পদে বসেন জিএম কাদের। তাঁরা পরস্পরকে মেনে নেন। এরশাদের রংপুর-৩ আসনে এমপি হন সাদ এরশাদ।
সভায় এক এমপি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, সাদ তাঁর মাকে জিম্মি করে রেখেছেন। সাদই মূল সমস্যা। তিনি চাচা জিএম কাদেরকে মানতেই চান না। দলে ছেলের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে সাদকে সমর্থন দিচ্ছেন রওশন এরশাদ। জিএম কাদের যাঁদের জাপা থেকে বাদ দিয়েছেন, বহিষ্কার করেছেন, তাঁরাও সাদের সঙ্গে একজোট হয়েছেন। রওশন এরশাদ ও সাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জিএম কাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয় যৌথসভা থেকে। জিএম কাদের সভায় বলেন, শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর হবেন। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
চিঠি দেওয়ার ৪০ দিন পরও স্পিকারের স্বীকৃতি না পেলেও মুজিবুল হক চুন্নু দাবি করেছেন, জিএম কাদেরই বিরোধীদলীয় নেতা। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেছেন, জাপার সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এমপিরা জিএম কাদেরের নেতৃত্বেই সংসদে যাবেন। প্রেসিডিয়ামও সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে। তাই রওশন এরশাদের উচিত হবে, বিরোধীদলীয় নেতার পরিচয় ও পতাকা ব্যবহার না করা। আর, মসিউর রহমান রাঙ্গা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি করবেন না। তাই বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের পদে তাঁর বহাল থাকার প্রশ্নই আসে না।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ২৬ নভেম্বরের তথাকথিত কাউন্সিলের সঙ্গে জাপার সম্পর্ক নেই। ওই কাউন্সিলকে আমলেও নিচ্ছেন না। রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক, যা অলংকারিক পদ। তাঁর ক্ষমতাই নেই কাউন্সিল ডাকার।
জাপা মহাসচিব আবারও বলেছেন, একাদশ নির্বাচনের পর তাঁরা আর কোনো জোটে নেই। কোনো জোটে যাবে কিনা তা ভবিষ্যৎ বলবে। সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে দুই ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। সংবাদ সম্মেলনে জাপার কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
করোনার শুরু থেকেই অসুস্থ রওশন। গত বছরের নভেম্বর থেকে তিনি থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন। গত জুনে সপ্তাহখানেকের জন্য তিনি দেশে ফিরে অভিযোগ করেন, জাপা এলোমেলো হয়ে গেছে। দলের কেউ তাঁর অসুস্থতার খবর নেননি। গত ৩০ আগস্ট থাইল্যান্ড থেকে চিঠিতে রওশন এরশাদ জাপার কাউন্সিল ডাকেন। উদ্দেশ্য জিএম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরানো। পাল্টা হিসেবে পরের দিন দলের ২৬ এমপির ২৪ জনের সমর্থন নিয়ে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে স্পিকারকে চিঠি দেন জিএম কাদের। দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব এতে আবারও প্রকাশ্যে এসেছে।
তবে স্পিকার এখনও জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। সূত্র জানিয়েছে, সরকার বিরোধীদলীয় নেতার পদে রওশনকেই চায়। রওশনপন্থিরাও ২৬ নভেম্বর কাউন্সিল করার বিষয়ে অনড়। শনিবার জাপার যৌথসভায় সিদ্ধান্ত হয়, রওশন এরশাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব না হলে, থাইল্যান্ডে তাঁর সঙ্গে থাকা সাদ এরশাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। জিএম কাদেরের নেতৃত্ব না মানলে মা-ছেলেকে বহিষ্কার করা হবে।
রওশনপন্থি নেতা ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশিদ বলেছেন, মুজিবুল হক চুন্নুর চিন্তা করা উচিত কার কারণে এমপি-মন্ত্রী হতে পেরেছেন। তিনি বিএনপির মনোনয়ন পেতে লাইন ধরেছিলেন। রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বুঝিয়ে রাজি করান চুন্নুকে মহাজোটের মনোনয়ন দিতে। ২৬ নভেম্বর কাউন্সিল হবেই। জিএম কাদেরের দাবির বৈধতা নেই বলেই স্পিকার তাঁকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রওশন এরশাদের পুরো এখতিয়ার রয়েছে কাউন্সিল ডাকার।






















