নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিনের কোণঠাসা বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে সরব হয়ে উঠছে। বিভিন্ন ইস্যুতে নানা কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থানে রয়েছে দলটি। রাজপথে বিএনপি নেতাকর্মীদের কণ্ঠে ঝাঁঝালো স্লোগান। মাঝে মধ্যে হাতে বাঁশ-লাঠিও দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সরকারকে উদ্দেশ্য করে হুঙ্কার দিচ্ছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। তাদের এমন তোড়জোড় রাজপথ দখলের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ভাবছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। এ সময়ে সরকারে দমন-নীতির কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। নিজেদের মধ্যকার দলীয় গ্রুপিং এবং কোন্দলকে আমলে না নিয়ে সবাই একসঙ্গে আন্দোলন করতে বাধ্য হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর বিরোধী দলের লোকজনের অন্তর থেকে খুন-গুমের ভয় কেটে গেছে বলে মনে করছেন কিছু নেতাকর্মী। অনেকে এখন বিশ্বাস করেন, র্যাব-পুলিশ গুলি করে মেরে ফেললে দেশে বিচার না হলেও প্রশাসন চাপে পড়বে। যে কারণে ভোলা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজপথে স্বতঃস্ফূর্ত।
গত শনিবার (০৮ অক্টোবর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় আওয়ামী লীগ সরকারকে উদ্দেশ্যে করে সরাসরি হুমকি দেন মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান।
তিনি বলেন, 'আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায় দেশ চলবে। আর কারও কথায় দেশ চলবে না।'
রাজপথে ফয়সালা হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ইতোমধ্যে পাঁচ জন রক্ত দিয়েছে। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তারা বলেছে, আমাদের রক্তের ঋণ তখনই শোধ হবে যখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে, যখন জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। ' ৫ জন কেন, যদি ৫ হাজারও শহীদ হতে হয়; এই দেশে শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না।'
আমানের পর সোমবার সকালে কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসূচির অংশ হিসেবে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি আয়োজিত শোক মিছিল শেষে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানিও সরকারকে হুমকি দেন।
তিনি বলেন, ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় বসে আছে আওয়ামী লীগ। এ সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোন নৈতিক অধিকার নেই। তারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় আছে। তাদের নেতৃত্বে এ দেশে কোন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। ১০ ডিসেম্বরের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এরপর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা হবে।
এদিকে, দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে দলের ‘হাজারো নেতাকর্মী প্রাণ দেবে’বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, 'আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই, মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনতে চাই। এ জন্য আমরা জান দিয়েছি। ইতিমধ্যে আমাদের সাত জন প্রাণ দিয়েছে। আমরা হাজারো লোক প্রাণ দেব। গণতন্ত্রকে অবশ্যই আমরা ফিরিয়ে আনব।'