নিজস্ব প্রতিনিধি: খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে সমাবেশস্থলের দিকে ছুটছেন নেতা-কর্মীরা। গত দুদিন থেকে সমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন নেতা-কর্মীরা। শনিবার (২২ অক্টোবর) সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়ে একত্র হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। সমাবেশস্থলের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থান করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে খুলনা নগরের ডাকবাংলো ও ফেরিঘাট মোড়ের মাঝামাঝি সোনালী ব্যাংক চত্বরে। সমাবেশ মঞ্চ থেকে শিববাড়ি মোড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে টানানো হয়েছে ১২০টি মাইক। মঞ্চের নিচে বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতারা বক্তব্য রাখছেন। ডাক বাংলো থেকে ফেরিঘাট মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় এই সড়কের ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ রয়েছে।
সোনালী ব্যাংক চত্বর সংলগ্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, সকালে দোকান খোলার জন্য এসে দেখেন, সামনের ফুটপাত ও সড়কে লোকজন বসা। এ কারণে দোকানের তালা খুলতে গিয়েও খোলা হয়নি। সাধারণত সকাল ৯টা থেকে দোকান খোলা ও সাজানোর কাজ করে থাকেন তারা। কিন্তু আজ বিএনপির সমাবেশের কারণে তারা উদ্বিগ্ন। তাই না খুলেই দোকানের সামনে বসে আছেন। এত লোকজন আগে কোনও সমাবেশের আগে জড়ো হয়নি বলে দাবি করেন তারা।
নগরের পাওয়ার হাউজ মোড়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে অবস্থান করা ডুমুরিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোল্লা মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ভোর ৫টায় খুলনায় এসেছি। কিছু সময়ের মধ্যেই মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যাবো।’
খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন জানান, আজকের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। সমাবেশের সময় ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করা হবে। এছাড়া সমাবেশের শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করবেন ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক।
সকাল থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে গণসমাবেশস্থলে যোগ দিচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাক, মাইক্রোবাস ও ট্রলারে করে তারা খুলনায় আসছেন। নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড়, রেলস্টেশনে মিলিত হয়ে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা রয়েছে। গণসমাবেশে যোগ দিতে শুক্রবার রাতেই খুলনায় পৌঁছেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘বাধা উপেক্ষা করে নেতা-কর্মীরা খুলনায় আসছেন। কোনোভাবেই গণসমাবেশ ঠেকানো যাবে না। যেকোনও মূল্যে সমাবেশ সফল করা হবে।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন উপজেলার নেতা-কর্মীরা ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, ভ্যান, ট্রলারে সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন। নড়াইল থেকে ১২ হাজারের মতো নেতা-কর্মী খুলনার মহাসমাবেশে সকাল নাগাদ যোগ দেবেন।’
খুলনা মেট্টোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মাসুদুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘শহরের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। সমাবেশস্থলে কিছু লোকজন আসছে। শহরের বিভিন্ন এলাকার দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে। পুলিশ সতর্ক নজরদারি করছে। প্রতিটি পয়েন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই নয়, সামগ্রিকভাবে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। নগরবাসীর উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজনীয় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনীর সদস্যরা তৎপর ও টহলে রয়েছেন।’
উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন সরকার, জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নেতা-কর্মী হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা দেয় বিএনপি। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহের পর আজ তৃতীয় গণসমাবেশ হচ্ছে বিভাগীয় শহর খুলনায়।