ডেস্ক রিপোর্ট ।।
সাম্প্রতিক শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানে যাদের নাম আসছে এবং যারা অভিযুক্ত- তারা সবাই হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগার। এরা ২০০৯ এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তারা অর্থ এবং অন্যায় প্রক্রিয়ায় দলের পদ দখল করেছে। দলের পদ ব্যবহার করে নিজেদের আখের গুছিয়েছে এবং দলের সুনাম নষ্ট করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং যারা সন্দেহের তালিকায় রয়েছে তারা কেউই সহজাত আওয়ামী লীগার নন। দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগে এরকম হাইব্রিডদের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ক্ষমতার সুবিধা আদায়ের জন্য যে সমস্ত সুবিধাবাদীরা আওয়ামী লীগে যোগদান করছেন, তারাই আওয়ামী লীগের বদনাম করছে বলে বার বার বলা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক বক্তৃতায় বলেছেন, দলের অনুপ্রবেশকারীদের রুখতে হবে। এই অনুপ্রবেশকারীরাই দলের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। এবারের শুদ্ধি অভিযানে দেখা যাচ্ছে যে, যারা বিত্তবৈভবের পাহাড় গড়েছে, তাদের কেউই তৃণমূলের আওয়ামী লীগার নন। এরা কেউই আওয়ামী লীগের দুর্দিনে দলের পাশে ছিলেন না। বরং আওয়ামী লীগের কঠিন সময়ে এরা অন্য দলে থেকে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। তাদের সম্পদ রক্ষার জন্যেই মূলত তারা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায় যে যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া একসময় ফ্রিডম পার্টি করতেন। তিনি ফ্রিডম পার্টির ক্যাডারও ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মির্জা আব্বাসের ক্যাডার হিসেবে ছাত্রদলে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি যুবলীগের সদস্য হন। পরে তিনি যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে যান।
আরেকজন গ্রেপ্তারকৃত বিতর্কিত জি কে শামীমও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। যদিও যুবলীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জি কে শামীম কখনোই যুবলীগের কোনো নেতা ছিলেন না। তবে তিনি নেতা হন বা না হন, যুবলীগের সঙ্গে যে তার সম্পর্ক ছিল তা তার অফিস এবং বাসভবনে অনুসন্ধানের সময়েই সেই আলামত পাওয়া যায়। জি কে শামীমেরও উত্থান বিএনপির হাত ধরে। তিনি মূলত ছিলেন মির্জা আব্বাসের ক্যাডার, তিনি সে সময় ছাত্রদল করতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি রাতারাতি আওয়ামী লীগার হয়ে যান। একই সঙ্গে যুবলীগের পদ এবং নারায়ণগঞ্জের সহ-সভাপতির পদ ব্যবহার করে তিনি স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন, টেন্ডারবাজি করেছেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং চাঁদাবাজিও করেছেন।
এছাড়াও রয়েছেন কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ। তিনিও শুরু থেকে আওয়ামী লীগার নন। তিনি একসময় বিএনপির মাস্তান ছিলেন। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বিএনপির প্রভাব খাটিয়ে তিনি কলাবাগান এলাকায় নানরকম অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েন। সেই সঙ্গে সে সন্ত্রাস এবং যাবতীয় অপকর্ম অব্যহত রাখেন।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানে যাদেরকে তালিকাভূক্তি করা হয়েছে, যারা গ্রেপ্তার প্রক্রিয়াতে আছেন এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযান প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে তাদের প্রত্যেকের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই দেখা যায় যে তাদের কারো শিকড়ই আওয়ামী লীগে নয়। বরং বিএনপি, জামাতশিবিরের মতো দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন এবং আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে তারা তাদের সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
গ্রেপ্তার তালিকায় আরও রয়েছেন মো. শফিকুল ইসলাম। যিনি যুবলীগের আইসিটি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। শফিক এন্টারপ্রাইজ নামে তার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যিনি শিক্ষাভবনে টেন্ডারবাজিসহ নানারকম অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত। তিনিও একসময় শিবিরের রাজনীতি করতেন এবং ছাত্রদলের হাত ধরে যুবলীগে আসেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন যে, আমরা বার বার হাইব্রিডদের ব্যাপারে কথা বলছি, বার বার অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলছি। এ ধরনের অভিযান পরিচালিত না হলে আমরা বুঝতে পারতাম না যে এইসব অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগের জন্য কতোটা ক্ষতিকারক। এদের কারণেই আওয়ামী লীগের বদনাম হচ্ছে। এর ফলে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের মধ্যে থেকে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দেওয়ার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।


















