ডেস্ক রিপোর্ট।।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে সংগঠনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন সমগ্র দেশবাসী। এই শুদ্ধি অভিযানের বদৌলতে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা সর্বকালের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। জরিপকারী সংস্থা ‘পাবলিক অপিনিয়ন পোল’ এর জরিপে দেখা যায় যে, ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে গত সাতদিনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৯৭.৩ শতাংশ মানুষ। গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে ১ হাজার ব্যক্তির ওপর এই জরিপ পরিচালনা করে সংস্থাটি। এর মধ্যে ৫৪২ ছিলেন পুরুষ এবং ৪৫৮ জন নারী।
'পাবলিক অপিনিয়ন পোল' এর পক্ষ থেকে চালানো জরিপের প্রথম প্রশ্ন ছিল যে শেখ হাসিনা কি দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কিনা। এর উত্তরে ৯৭৩ জনই বলেছেন যে শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনায় সঠিক নেতৃত্বই দিচ্ছেন। মূলত চলমান শুদ্ধি অভিযানকে কেন্দ্র করেই এই জরিপ পরিচালনা করে সংগঠনটি। জরিপে একটি প্রশ্ন ছিল যে শুদ্ধি অভিযানকে সঠিক এবং প্রয়োজনীয় মনে করেন কিনা। এর উত্তরে ৮৬২ বলেছেন শুদ্ধি অভিযান অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল এবং এটি সঠিক। এই শুদ্ধি অভিযানের সফলতার ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী, এমন প্রশ্নের উত্তরে ইতিবাচক মনোভাব জানিয়েছেন ৭৩৯ জন। তারা বলেছেন যে এই উদ্যোগ সফল হবে। এর ফলে দুর্নীতি কমবে কিনা এমন প্রশ্নেও ইতিবাচক মন্তব্য পাওয়া গেছে। জরিপে উত্তরদানকারী ১ হাজার জনের মধ্যে ৮০৯ জনই বলেছেন যে এই শুদ্ধি অভিযানের ফলে দুর্নীতি কমবে।
জরিপে আরেকটি প্রশ্ন ছিল, আপনি কি মনে করেন দেশের প্রধান সমস্যা কি? এর উত্তরে ৬৭ শতাংশ উত্তরদাতা, অর্থাৎ ৬৭০ জনই বলেছেন যে প্রধান সমস্যা হলো দুর্নীতি।
তবে শুদ্ধি অভিযান আওয়ামী লীগের নিজ অঙ্গ সংগঠন থেকে শুরু হলেও এখন তা সরকারী বিভিন্ন দফতরেও শুরু হয়েছে। বড় আকারের এ অভিযানে এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী, আটক হয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক খালেদ ভূইয়া ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদল থেকে আসা যুবলীগের কথিত নেতা জিকে শামীম। এর মধ্যে খালেদ ভূইয়াকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও গণপূর্তের টেন্ডারবাজির জন্য খ্যাত জি কে শামীমের সূত্র ধরে সাবেক কয়েকজন সরকারী কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যহতি দেওয়া হয়েছে আরো কয়েকজনকে। আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তকে গতিশীল করতে কাজ করে যাচ্ছে ফিন্যান্সিয়াল ইনটিলিজেন্স ইউনিট ও বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে আরো অনেক হেভিওয়েট ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও সরকারী আমলার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হতে পারে।
মূলত বিশেষজ্ঞ মহলের ধারনা এই যে, শুদ্ধি অভিযানের এ দৃশ্যমান অগ্রগতি আরো বেশি করে ভূমিকা রেখেছে গণমানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে। মানুষের মধ্যে একটি ধারনা ছিলো যে কিছু কিছু মানুষ আইনের আওতার বাইরে। প্রধানমন্ত্রী সে ধারনাকে গুড়িয়ে দিয়েছেন। সবার মনে আস্থা ফিরে এসেছে যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারে অপরাধ করলে তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আসতেই হবে। এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগের উল্লেখ ছিলো। তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে তাই উন্নয়নের পাশাপাশি এবার সুশাসন নিশ্চিতেও হাত দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের আস্থা রেকর্ড ছাড়ালেও লক্ষণীয় যে এই জরিপে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমেছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে চালানো জরিপে দেখা যায় আওয়ামী লীগের পক্ষে যেখানে ৫২ শতাংশ মানুষ সমর্থন জানিয়েছিল, সেখানে সর্বশেষ চালানো জরিপে দেখা যাচ্ছে যে এখন ৪৮ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, পাবলিক অপিনিয়ন পোল গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আরেকটি জরিপ পরিচালনা করেছিল। সেই জরিপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জনগণের সমর্থন ছিল ৭৩ শতাংশ। এছাড়াও গত বছর সেপ্টেম্বরে জরিপ পরিচালনাকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্ভরযোগ্য সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের চালানো জরিপে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জনসমর্থন ৬৬ শতাংশ।
এছাড়াও গত বছর 'ন্যাশনাল সার্ভে অফ বাংলাদেশ পাবলিক অপিনিয়ন' শিরোনামে যে ৩৩ পৃষ্ঠার জরিপ আইআরআই প্রকাশ করেছিলো সেখানেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ সঠিক পথে এগুচ্ছে বলেও মত দেন জরিপে অংশগ্রহন করা ৬৯ শতাংশ মানুষ।
তবে শুদ্ধি অভিযানকে কেন্দ্র করে পাবলিক অপিনিয়ন পোলের চালানো সর্বশেষ জরিপে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা সর্বকালের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে।