ডেস্ক রিপোর্ট ।।
সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে সাংসদ মাহী বি চৌধুরী এবং তার স্ত্রী আশফাহ্ হক লোপার ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মতিঝিলের ওয়ার্ড কমিশনার মমিনুল হক সাইদ, নগদ ৫ কোটি টাকা, ৮ কেজি স্বর্ণসহ আটক দুই ভাই গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়া এবং যুগলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানসহ মোট ১৬ জনের ব্যাংক ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
এর আগেও বেশ কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এদিকে প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে সরকারের ৩৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত। এর বাইরে আরও অন্তত ১০ জনের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে এনবিআর। গতকাল বিভিন্ন ব্যাংকে চিঠি দিয়ে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।
মাহী বি চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে গত ২৫ আগস্ট মাহীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সংস্থাটি।
জানা গেছে, অর্থ পাচারের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তার এবং তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২৩(১)(গ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে আগামী ৩০ দিনের জন্য তার এবং তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এ সময়ে তারা ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন বা স্থানান্তর করতে পারবেন না। তবে ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা করা যাবে। মাহী বি চৌধুরী বর্তমানে সংসদ সদস্য। এছাড়া বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের একই ধারার ক্ষমতা বলে মমিনুল হক সাইদ ওরফে সাইদ কমিশনারের ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাইদ কমিশনার রাজধানীর মতিঝিলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। গত ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার প্রমাণ পাওয়ায় ক্লাবটি বন্ধ করে দেয় র্যাব।
রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়ার ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের বাবা সিরাজুল হক, মা মমতাজ বেগমের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে। তারা মতিঝিলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ারহোল্ডার। ক্যাসিনো থেকে পাওয়া টাকা নিজেদের বাসায় রাখতেন বলে জানতে পেরেছে র্যাব। গত ২৪ সেপ্টেম্বর তাদের গেণ্ডারিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঁচটি ভল্ট বা সিন্দুক থেকে নগদ পাঁচ কোটি ৫ লাখ টাকা ও ৭৩০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করে র্যাব। বাসায় এত টাকা রাখার তথ্য জানার পর এ নিয়ে মানুষের মনে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়। রাজধানীতে তারা দুই ভাই অন্তত ১৫টি বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক। ২০০৫ সালে যুবলীগ অফিসের পিওন থেকে এখন দপ্তর সম্পাদক বনে যাওয়া কাজী আনিসুর রহমান, বাবা কাজী ফায়েক আলি, মা হোসনে আরা বেগম এবং স্ত্রী সুমী রহমানেরও ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এসএম রবিউল ইসলাম, বাবা এস এম মোহাম্মদ আলী এবং মা জ্যোসনা বেগমের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। ক্যাসিনো পরিচালনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। গ্রেফতার জি কে শামীমের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মো. মুমিতুর রহমান, তার বাবা মতিয়ার রহমান, মা শাহিদা বেগমের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এদিকে জেসমীন পারভীন, তার বাবা মাহবুবুল হক ও মা ফিরোজা বেগমের ব্যাংক হিসাবও ৩০ দিনের জন্য জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এই জেসমীন পারভীনের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড নির্মাণ খাতের প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নারগিস আহমেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক বশির আহমেদ। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের অন্তত ৩৬টি প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ করছে। এসব প্রকল্পের বেশিরভাগই সড়ক, মহাসড়ক, সেতুসহ নানা অবকাঠামো ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক। এ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, গত দশ বছরে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ৩১টি প্রকল্পের ১৩ হাজার কোটি টাকার কাজ করেছে। ঠিকাদারির পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে আইবিসি পাওয়ার অন্যতম। এই আইবিসির চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য এইচ বি এম ইকবাল ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বশির আহমেদ।
এছাড়াও ব্যাংক হিসাব তলবের তালিকায় রয়েছেন উত্তরার হাফিজুর রহমান, তার স্ত্রী মারুফা রহমান কান্তা, মোহাম্মদপুর এলাকার এস.এ.এম ফজলুর রহমান কবির ও তার স্ত্রী কাশফিয়া শিরিন, নীলফামারীর মোমিতুর রহমান, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আহমেদুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রফিকুল ইসলাম, তার স্ত্রী রাশেদা ইসলাম, টাঙ্গাইলের আব্দুল হাই ও তার স্ত্রী বনানী সুলতানা ও মুন্সীগঞ্জের মামুন হোসেনের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তারা ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পৃক্ত।
রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ও র্যাব। এসব অভিযানে এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্সের মালিক এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইয়ংমেনস ক্লাবের নিয়ন্ত্রণকারী খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ অনেকে। এছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনসহ আরও অনেকের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।