রাজনীতি ১০ নভেম্বর, ২০২৩ ০১:০৩

‘মনোনয়ণ বাণিজ্যের জন্য হলেও বিএনপি নির্বাচনে আসবে’  

# আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা
# নির্বাচনকে হালকা ভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই
# রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে কথা না বলাই ভালো
# তৃণমুলকে সজাগ থাকতে নিদের্শ
# নির্বাচন পরিচালনায় দলের উপকমিটি গঠনের নির্দেশনা
# কো-চেয়ারম্যানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন শেখ হাসিনার

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে হালকা ভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মতে, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। মনোনয়ণ বাণিজ্যে জন্য হলেও নির্বাচনে আসবে। তারেক জিয়া সেই সুযোগ মিস করবে না। বিএনপি নির্বাচনে আসবে, সেই হিসেবে মাথায় রেখেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। দলের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা তা নিশ্চিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সোয়া ৬টার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশির ভাগই উপস্থিত ছিলেন। সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতির সূচনা বক্তব্যে পরে রুদ্ধদ্বার আলোচনা শুরু হয়। সভায় সাংগঠনিক রিপোর্ট তুলে ধরেন চট্টগ্রাম বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ও ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। বাকী চারজন সাংগঠনিক সম্পাদক তাদের রিপোর্ট দেননি। বৈঠকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহাজান খান, আবদুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন, গোলাম রব্বানী চিনুসহ আরও বেশ কজন বক্তৃতা করেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ব্এিনপি নির্বাচনে আসবে না বলে মন্তব্য করেন। এসময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। মনোনয়ন বাণিজ্য করে তারেক রহমান টাকা কামানোর সুযোগ নষ্ট করবে না। আর তারা নির্বাচনে এসে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেষ্টা করবে। ল²ীপুরে যেমন ব্যালটে সিল মারার একটা ছবি তুলে প্রচার হয়েছে। ব্এিনপি নির্বাচনে এসে এরকম নানা ধরণের বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে বড় করে দেখিয়ে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করবে। ফলে তারা নির্বাচনে আসবে ধরে নিয়েই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি আরো বলেছেন, বিনা-প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দিতে হবে। যেখানে বিরোধী কেউ প্রার্থী হবে না সেখানে নিজেদের কাউকে দাঁড় করিয়ে হলেও নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে না তা বলার সময় আসেনি। তারা তলে তলে নির্বাচনের কাজও করছে। এজন্য সবাইকে ভোটারদের কাছে যেতে বললেন শেখ হাসিনা।

সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের সমমনা দলগুলোর আন্দোলন মোকাবিলার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কর্মযজ্ঞ মনিটরিং করার জন্য ৮ বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সক্রিয় হওয়া নির্দেশ দেওয়া হয় বলে বৈঠক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হবে। মনোনয়ন দেয়া হবে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন ও দলের সাংগঠনিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তাকে বিজয়ী করতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে। তিনি জানান, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না তা বলা যাবে না। বিএনপি না এলেও যে নির্বাচন প্রতিদ্ব›িদ্বতা পূর্ণ হবে না এমনটা নয়।

দলীয় সুত্র মতে, সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের সমমনা দলগুলোর আন্দোলন মোকাবিলার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কর্মযজ্ঞ মনিটরিং করার জন্য ৮ বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সক্রিয় হওয়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সভায় ব্এিনপির আন্দোলনে সহিংসতার প্রসঙ্গ তোলেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সফুরা বেগম। তিনি নিজ এলাকা লালমনিরহাটে ব্এিনপি নেতা আসাদুল হাবিব দুলুর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপরে নির্যাতনের নানা তথ্য তুলে ধরেন। ব্এিনপির হামলায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের একজন নেতার মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে ধরে সফুরা বেগম বলেন, দুলু আবার সেই চার দলের আমলের মতো সন্ত্রাস শুরু করেছে।

এসময়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিষয়টি আমি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। যেসব এলাকায় ব্এিনপির নেতাকর্মীরা সন্ত্রাস করবে, নাশকতা করবে, গাড়িতে আগুন দেবে সেই এলাকায় ব্এিনপির নেতাকর্মীদের বাড়িগুলো চিহ্নিত করে রাখবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।

সভায় উপস্থিত ছিলেন একাধিক নেতা জানান, সভায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ এবং কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের বিষয়টি উঠে আসে। লাঙ্গলকোট উপজেলায় অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনবার কমিটি গঠন ও স্থগিত করার ঘটনায় ক্ষোভ জানান শেখ হাসিনা। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা ছাড়া কোনো কমিটি না ভাঙ্গতে সতর্ক করে দেন।
বৈঠকে শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচনে প্যুলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। আর সদস্য সচিব করা হয় দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে। আর দলের কো-চেয়ারম্যান, সদস্য ও ১৪ টি সাব-কমিটির বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন। এসময় পিটার হাসের বিষয়ে শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করায় দলীয় নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত কে নিয়ে শিষ্টাচার বহির্ভূত অশোভন আক্রমণাত্মক যে বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে তা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের দৃষ্টিকোছরে এসেছে। এজন্য চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চম্বল ইউনিয়নের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক ফজলুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে আমরা অশৃঙ্খলা মূলক ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন আমরা দলীয়ভাবে নেব এবং এ ধরনের শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করা মোটেও উচিত নয়। এ ব্যাপারে আমাদের নেত্রী সবাইকে সতর্ক করে দিতে বলেছেন।