রাজনীতি ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০৮:০৬

জেলে কারা মারা গেছে তালিকা দিন: বিএনপিকে ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক 
কারাগারে নির্যাতনের শিকার হয়ে গত তিন মাসে বিএনপির ১৩জন নেতার মৃত্যু অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তারা (বিএনপি) বলুক, তালিকা দিক কারা কারা মারা গেছে এবং তারা কোথায় কোথায় বিএনপির কি দায়িত্বে ছিলো?

আজ মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

সাংবাদিকদের মাধ্যমে একটা বিষয় জানতে চেয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন,  বিএনপি যে কারাগারে তাদের সংখ্যা বলে ১৩ জনের কথা বলে, তাদেরকে জেলখানায় মেরে ফেলা হয়েছে। জেলখানায় যারা বন্দী আছে তারাও মানুষ,তাদেরও মৃত্যু হতে পারে। এবং এরকম মৃত্যুর খবর প্রায়শই আমরা বাইরে জানি।  এই সংখ্যাটা ১৪,১৫  সে রকম বেরিয়েছে। এখন জেলে যে বন্দী অবস্থায় আছে তার কি মৃত্যু হবে না? এখন এই যে জেলে বন্দী অবস্থায় এ লোকগুলো লোকগুলো বিএনপির এমন দাবী তারা করে কেমন করে? তাহলে তারা (বিএনপি) বলুক, তালিকা দিক কারা কারা মারা গেছে এবং তারা কোথায় কোথায় বিএনপির কি দায়িত্বে ছিলো?

তিনি আরও বলেন, আমরা গুমের অনেক খবর জানি। কক্সবাজারের সালাউদ্দিন যখন ওপারে ধরা পড়ে, তখন সে ঘুরে বেড়াচ্ছে রাস্তায়।ধরা পড়ার আগে বিএনপি অপপ্রচারই  করেছিলো যে সালাউদ্দিন কে গুম করা হয়েছিল। তারপরে একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক ফরহাদ মাজার,তার সম্পর্কেও একই  রকম অপপ্রচার করা হয়েছে। পরে তাকে পাওয়া গেলো খুলনার মার্কেটে।  অথচ আমাদের যে মাফুজ বাবুকে নিয়ে (নগর  ছাত্রলীগের নেতা) তারা (বিএনপি) গুম করলো সে বিষয়ে কোন কথা বলেনা। চট্টগ্রামে জামালউদ্দিন তাদের (বিএনপির) পার্টির নেতা। জামালউদ্দিন হঠাৎ করে অপহরণ, গুম। তারপর এক সময় তারা দোষ চাপালো যে আওয়ামী লীগ তাকে অপহরণ করে হত্যা করেছে। কিন্তু পরে দেখা গেলো যে জামালউদ্দিনকে তারাই (বিএনপি)  অপহরণ করে খুন করেছে। 
 
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, কাজেই আমরা এখনো বলতে চাই,গুম খুন এইসব মিথ্যে তথ্য উপাত্ত ছাড়া, মিথ্যাচার যে তারা  করছে সত্যটা কি? এবং তারা বলুক এ গুম খুন কাদের কাদের করা হয়েছে? এর প্রমাণ কি? আমরা তালিকা দেখতে চাই। এ রকম অন্ধকারে ঢিল ছুড়বে বারেবারে এটা তা হয়না। এটা রাজনীতি নয়। রাজনীতি তো  এখন তাদের যে অবস্থায় গেছে, লিফলেট বিতরণ করে তাদের ব্যর্থতা আড়াল করা যাবেনা। লিফলেটের ভাষা দিয়ে তাদের ব্যর্থতা আড়াল করার কোন স্পেস নেই। তারা এখন লিফলেট বিতরণের ছয় দিনের কর্মসূচি লক্ষ দেশ বাচাও,মানুষ বাচাও। আসলে দেশটাকে ধংস করো,মানুষকে মারো। এটা হল তাদের স্লোগান। এখানে তারা দেশ বাঁচাও,মানুষ বাঁচাও বলছে,আসলে তাদের লক্ষ্য দেশটাকে ধ্বংস করা,মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারা,সন্ত্রাস করে মারা,বিভিন্নভাবে মানুষ মারা । এটা তাদের অতীতের কলংকিত ইতিহাসেরই অংশ। 

বিএনপি গুম খুনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবী করবে সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে এবং  বিএনপি আমলে কত হত্যা, কতো ঘুম সেটারও হিসেব হোক। সব হিসেবই আসুক। কোন আমলে কতো মানুষ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তারা খুন হয়েছে, হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছে এরও হিসেব দিতে হবে। হিসেব একপক্ষের কেন? বিএনপি ক্ষমতায় ছিলো তখনকার হিসেবও আমরা জানতে চাই। 

বিএনপির দাবী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে অনির্বাচিত, অগণতান্ত্রিক সরকারের অবসান ঘটিয়ে অপশাসন, লুটপাট, দেশ নিজেরা মুক্ত হতে চাই এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই ধরনের স্লোগান এতোদিন গৃহবন্দী ছিল।নতুন কোন কথা,কয়েকদিন পরে বলবে সরকারের পদত্যাগ চাই,সরকারের পতন চাই,সরকারকে পালিয়ে যেতে হবে, আবার বলবে শেখ হাসিনাকে হটাতে হবে, বিএনপির এইসব কথার কোন মূল্য আছে? বিএনপির একটা ২৮ দফা,এক দফা সবই তো ভূয়া। সব ভূয়া খবর, এসবের বাস্তবতা নেই। এখন তারা ঐ পুরাতন কথা নতুন করে বলছে। এখন আমাদের কাছেও মনে হচ্ছে, পুরোনো সে সুরে কে যেন ডাকে...."।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাঁচের সঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খানের সাক্ষাৎ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মঈন খান রাষ্ট্রদূতের সাথে দেখা করেছে। এটা করতেই পারে। সেখানে ষড়যন্ত্র আভাস খোঁজার কিছু নেই। সব ব্যাপারে ষড়যন্ত্র দেখার কিছু নেই। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মাথা ব্যাথার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করেন না তিনি।
সংরক্ষিত আসনে ১৪ দলের শরিকরা মনোনয়ন পাবেন কিনা? জবাবে তিনি বলেন, গণভবনে আগামীকাল আমাদের মনোনয়ন বোর্ডের সভা আছে। ১৪ দলীয় ব্যাপারে আমাদের নেতৃ অন্যভাবে মূল্যায়ন করতে পারেন। তবে নিয়মানুযায়ী তাদের পাবার সুযোগ নেই। বাকীটা আগামীকালের সিদ্ধান্তে জানা যাবে। আওয়ামী লীগের ভিতর অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা আছে। সেজন্য অনেক আঘাতের পরেও এ দলটিকে আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা অস্ত্র হাতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে এ নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ তাদের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ ও সচেতন। সেরকম কিছু হলে আমাদের প্রচলিত ব্যবস্থা অনুযায়ী, বিদেশি কারো অনুপ্রবেশ ঘটে। তাহলে সেটা খতিয়ে দেখা হবে এবং অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ দপ্তর সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনোয়ার হোসেন, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।