রাজনীতি ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৮:৫৯

খালেদা জিয়া-সারাহ কুক বৈঠক

দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক। গতকাল বুধবার রাতে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গুলশানের বাসায় যান। তিনি তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন। গত সাড়ে ছয় বছরের মধ্যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে এটি কোনো কূটনীতিকের প্রথম বৈঠক।

জানা গেছে, বৈঠকে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের ব্যাপারে তাদের চিন্তাভাবনার বিষয়ে খালেদা জিয়াকে অবগত করেন। পাশাপাশি দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে তারা কী করতে চান, সে বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জানান সারাহ কুক। এ সময় খালেদা জিয়া বাংলাদেশ-ইউকের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার কথা বলেন। পাশাপাশি আগামী দিনে দু’দেশের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্ক যাতে উন্নততর অবস্থায় যেতে পারে, সে বিষয়েও ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। 

বিএনপি নেতারা জানান, গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের পতাকাবাহী গাড়ি গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসা ফিরোজায় প্রবেশ করে। দু’জনের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ হাইকমিশনার সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঢাকায় কূটনৈতিক মহলে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে একটা শঙ্কা ও দুশ্চিন্তা ছিল। তাঁর সুস্থতা নিয়ে সবার মনে একটা প্রশ্ন ছিল। আজকে একটা পর্যায়ে উনি কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারছেন। আর দেশে একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে একটা মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে কূটনীতিকরাও মুক্তভাবে চলাফেরা এবং তারা তাদের কাজগুলো করতে পারছেন। বিভিন্নভাবে সরকারের যে চাপ, সেখান থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি। 

তিনি বলেন, প্রথম বিষয় ছিল, খালেদা জিয়ার শরীর কেমন আছে; ভালো আছে কিনা। বাইরে চিকিৎসার জন্য উনি শারীরিকভাবে প্রস্তুতি কিনা, ঠিক আছে কিনা। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে দ্বিতীয় স্বাধীনতার পরে দেশ কোথায় যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ নিয়ে তাদের চিন্তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশের নতুন প্রেক্ষাপটে আমরা কোথায় যাচ্ছি এবং বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে; আর বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের ব্যাপারে তাদের যে চিন্তাভাবনা, তারা তা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তারা কী করতে চাচ্ছেন। দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে তারা কী করতে চান, সেসব তারা অবহিত করেছেন। 

আমীর খসরু বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বাংলাদেশ ও ইউকের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার কথা বলেছেন। পাশাপাশি আগামী দিনে দু’দেশের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ প্রতিটা জিনিস যাতে উন্নততর অবস্থায় যেতে পারে, এসব বিষয়েও কথা বলেছেন।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে তাঁকে যে দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করতে হবে, সে বিষয়ে তাঁর প্রস্তুতির বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। মেডিকেল বোর্ড বলেছে, যুক্তরাজ্যে নিতে হলে ৮ থেকে ১৩ ঘণ্টা সময় লাগে। অথবা যুক্তরাষ্ট্রে নিতে হলে ১৮ থেকে ২১ ঘণ্টা আকাশপথে ভ্রমণ করতে হবে। এমন ভ্রমণের জন্য শারীরিক সুস্থতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, দুই দেশের হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ আগে থেকেই হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের সুস্থতা আকাশপথে যাত্রার উপযোগী হলেই বিদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেখা হবে।

সাক্ষাতে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাহিদ হোসেন ছাড়াও মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, ডা. এফএম সিদ্দিকী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির দুই মামলায় কারাগারে যান খালেদা জিয়া। কারাদণ্ড হওয়ার পর সাড়ে ছয় বছর এক প্রকার বন্দি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর তিনি স্থায়ী মুক্তি পান।